দুই মাসের স্থগিত সুদ

৮% হারে পরিশোধ করতে হবে গ্রাহকদের

প্রকাশ: মে ৩০, ২০২০

হাছান আদনান

করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে ব্যাংকঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনায় এপ্রিল মে মাসের ঋণের সুদ ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। স্থগিত করা সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি হিসেবে হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করবে সরকার। বাকি অর্থের পুরোটাই গ্রাহকদের পরিশোধ করতে হবে। তবে ঋণখেলাপিরা সুবিধা পাবেন না। এসব বিধান রেখে স্থগিত সুদ পরিশোধের নীতিমালা প্রণয়ন করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সহসাই নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া গ্রাহকদের বড় অংশই মনে করেছিলেন, স্থগিত সুদ পরিশোধ করতে হবে না। বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তদবিরও করছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা। অন্যদিকে স্থগিত সুদের সংস্থান কোথা থেকে হবে, সে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ছিল ব্যাংকারদেরও। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব অস্পষ্টতা দূর হবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, ঘোষণা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সে হিসেবে মাসে সব ঋণের শতাংশ সুদের পরিমাণ হয় প্রায় ৯০০ কোটি টাকা। দুই মাসে সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় হাজার ৮০০ কোটিতে। সরকার যদি হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়, তাহলে তা গ্রাহকদের সুদের শতাংশের কিছুটা বেশি হয়। সে হিসেবে এপ্রিল মে মাসের ঋণের জন্য গ্রাহকদের সাড়ে থেকে শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করতে হবে। বাকি থেকে দেড় শতাংশ সুদ গ্রাহকের পক্ষে সরকার পরিশোধ করবে। তবে খেলাপি ঋণকে হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত যারা খেলাপি ছিলেন, এমন গ্রাহকরা ভর্তুকি দেয়া সুদের অংশ পাবেন না। আজই সরকারের কাছ থেকে বিষয়ে নির্দেশনা আসতে পারে। সরকার যদি ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ায়, তাহলে ঋণগ্রহীতাদের আরো কম সুদ পরিশোধ করতে হতে পারে।

করোনার আঘাতে বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতি। প্রায় বন্ধ ব্যবসা-বাণিজ্যও। অবস্থায় ব্যাংকঋণের সুদের সংস্থান নিয়ে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় ছিলেন ঋণগ্রহীতারা। ঋণগ্রহীতাদের স্বস্তির বার্তা দিতে দেশের সব ব্যাংকঋণের এপ্রিল মে মাসের সুদ স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। স্থগিত করা সুদ স্থানান্তর করতে বলা হয় সুদবিহীন ব্লকড হিসাবে মে মাসের শুরুতে জারীকৃত ওই প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরকৃত সুদ গ্রাহকদের কাছ থেকে আদায় করা যাবে না। একই সঙ্গে সুদকে ব্যাংকের আয় খাতে স্থানান্তর না করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।

ব্লকড হিসাবে স্থানান্তরিত সুদের পরিমাণ জানাতে সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো স্থগিত সুদের পরিমাণ জানালে এর ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এতে দেখা যায়, ঋণের সুদহার শতাংশ ধরে এপ্রিল মে মাসের ব্যাংকঋণের মোট সুদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। প্রতিবেদন নিয়ে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর ফজলে কবির। প্রতিবেদনে থেকে শতাংশ পর্যন্ত সুদ সরকার পরিশোধ করলে টাকার অংকে এর পরিমাণ কত হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। পরে সরকারের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার ইঙ্গিত দেয়া হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে। সরকারের নির্দেশনার আলোকেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা প্রজ্ঞাপন তৈরির কাজে হাত দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলেও কোনো গ্রাহককে খেলাপি না করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নির্দেশনার প্রত্যক্ষ প্রভাব এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোর ক্যাশ ফ্লোতে দেখা যাচ্ছে। নির্দেশনার সুযোগ নিয়ে সামর্থ্যবান গ্রাহকরাও ব্যাংকের টাকা জমা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে যারা আগে থেকেই খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে ছিলেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছিলেন তারাও। এর মধ্যে দুই মাসের ঋণের সুদ স্থগিত করায় ব্যবসায়ীরা ভেবেছিলেন, স্থগিত সুদ পরিশোধ করতে হবে না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহলে ব্যবসায়ী নেতারা দেনদরবারও করেছিলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার শতাংশে নামিয়ে আনায় ব্যাংকগুলো এমনিতেই ক্ষতির শিকার হয়েছে। অবস্থায় স্থগিত সুদের কোনো অংশ ছাড় দেয়া ব্যাংকগুলোর জন্য বিপজ্জনক। আবার সরকারও পুরো সুদ পরিশোধ করে দেয়ার পরিস্থিতিতে নেই। রাজস্ব ঘাটতি থাকায় সরকার নিজেই ব্যাংকের ঋণনির্ভর হয়ে পড়েছে। সব দিক বিবেচনা করেই স্থগিত সুদের বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুদ কোন মাসে কীভাবে পরিশোধ করতে হবে, সে বিষয়েও প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্ট করা হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর। সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকির পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ে কোনো নতুন নির্দেশনা এলে তার ভিত্তিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫