মহামারীর মধ্যেই সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ

প্রকাশ: মে ২৩, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাসের প্রেক্ষাপটে বিশ্বের সংঘাতময় এলাকায় বিবদমান পক্ষগুলোকে অস্ত্রবিরতির জন্য আহ্বান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। কিন্তু তার পরও মার্চ থেকে পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে সাড়ে ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল (এনআরসি) জানিয়েছে, মহামারী বিস্তারের মধ্যেও বিশ্বে আঞ্চলিক সংঘাত থেমে নেই। লকডাউন পরিস্থিতিতেও পুরোদমে চলছে সশস্ত্র সহিংসতা। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ তাদের আবাস ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছে, পরিণত হয়েছে উদ্বাস্তুতে। খবর এএফপি।

এনআরসি জানিয়েছে, ২৩ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস মহামারীর কারণে বৈশ্বিকভাবে অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানান। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার আহ্বানে সাড়া মেলেনি। এরপর থেকে ১৯ দেশে সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত হয়েছে লাখ ৬১ হাজার মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোয়। এনআরসির মহাসচিব জান এগেল্যান্ড বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তার প্রতিরোধে যখন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সবাইকে ঘরে থাকতে বলছেন, তখন বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো লাখো মানুষকে তাদের ঘর ছাড়তে বাধ্য করছে। এর ফলে ভয়াবহ ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে বাস্তুচ্যুতরা। এতে শুধু যে গৃহহীনরাই বিপদের মধ্যে পড়ছে তা নয়, একই সঙ্গে ব্যর্থ হচ্ছে বৈশ্বিক মহামারী রোধে সামগ্রিক প্রচেষ্টা।

এনআরসির মতে, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ সংঘাতময় এলাকায় শান্তি আলোচনায় নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। এগেল্যান্ড বলেন, যখন মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, মারা যাচ্ছে, তখন নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বালির বাক্সের মধ্যে বাচ্চাদের মতো পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া করছে। কিন্তু এখন আর বসে থাকার সময় নেই। বিশ্ব নেতাদের উচিত, এখনই বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেয়া। যাতে করে বিবদমান পক্ষগুলো তাদের অস্ত্র নামিয়ে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন গোষ্ঠীকে কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষার জন্য একত্রিত হতে বাধ্য হয়। তার মতে, এখন শিশুসুলভ রাজনীতি করার সময় নয়।

এনআরসি আরো জানিয়েছে, সংস্থাটি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের বিষয়ে স্পষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আবেদন করে আসছে। তাদের উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীগুলোকে সহিংসতা বন্ধের জন্য স্পষ্ট সতর্ক বার্তা দেয়া। এর বিপরীতে মহামারীর বিরুদ্ধে যাতে পদ্ধতিগত পদক্ষেপ নেয়া যায়, সেজন্য সব পক্ষকে আলোচনার মাধ্যমে তাদের বিবাদ মিটিয়ে নেয়ার জন্য বলা হবে।

প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, স্থানীয় জাতিগত সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বাস্তুচ্যুতির সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক। এর মধ্যে কঙ্গোয় দেশটির সেনাবাহিনী বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘাত চলে আসছে বহুদিন ধরে। কিন্তু মার্চের পর থেকে সহিংসতায় নিজেদের আবাসস্থল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে লাখ ৮২ হাজার কঙ্গোবাসী। একই সময়ে ইয়েমেনে সৌদি আরব কর্তৃপক্ষের অস্ত্রবিরতির আহ্বানের পরও দেশটিতে সহিংসতা থেমে ছিল না। এর ফলে দেশটিতে ২৩ মার্চের পর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৪ হাজার মানুষ। একইভাবে আফ্রিকার লেক শাদ অঞ্চলেও বহু মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এনআরসি বলছে, এক্ষেত্রে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে শাদ নাইজার। অন্যদিকে আফগানিস্তান, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, সিরিয়া মিয়ানমারেও অন্যত্র পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছে বহু মানুষ।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫