বিমানবন্দরে স্ক্যানিং কাজে দিয়েছে কি

প্রকাশ: এপ্রিল ২১, ২০২০

মনজুরুল ইসলাম

গত মার্চ দেশে প্রথম তিনজন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) তাদের মধ্যে দুজন ছিলেন সদ্য ইতালিফেরত বাংলাদেশী। যদিও ইতালি থেকে দেশে প্রবেশের সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শারীরিক পরীক্ষায় পাস করেছিলেন তারা। শুধু দুই ব্যক্তিই নন। গত দেড় মাসে দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে আরো কয়েকজন প্রবাসফেরত বাংলাদেশী। তাদের প্রত্যেকেই শাহজালাল বিমানবন্দরে স্ক্যানিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেশে প্রবেশ করেছিলেন। অবস্থায় দেশের বিমানবন্দরগুলোয় বিদ্যমান স্ক্যানিং নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।

গত ফেব্রুয়ারি মার্চে শাহজালাল বিমানবন্দর ব্যবহার করে বিদেশ থেকে এসেছেন এমন কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশী বণিক বার্তাকে জানান, উড়োজাহাজ থেকে নামার পর ইমিগ্রেশনের আগে তাদের একটি মেশিনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এর মাধ্যমে শরীরে তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে একজন স্বাস্থ্যকর্মী মৌখিকভাবে জ্বর, ঠাণ্ডা কাশি আছে কিনা জানতে চেয়েছিলেন। পরে একটি ফরম পূরণ করে জমা দিতে হয়েছে। পাশাপাশি ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।

দেশের তিন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নভেল করোনাভাইরাস স্ক্যানিংয়ের মান নিয়ে শুরু থেকেই অসন্তোষ ছিল। অভিযোগ ছিল করোনা শনাক্তে আন্তর্জাতিক মানের থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহার করা হচ্ছে না। অন্যদিকে তুলনামূলক কম জনবল অপ্রতুল থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে দায়সারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছিল বিদেশফেরত যাত্রীদের, যা নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের জন্য পর্যাপ্ত নয়। আর এভাবেই নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলো থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী দেশে ফিরেছেন।

পুলিশ বিশেষ শাখার তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন বন্দর ব্যবহার করে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে পর্যন্ত প্রায় লাখ ৭১ হাজার ৮০ জন বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। এর মধ্যে লাখ ২২ হাজার ৯০৪ জন এসেছেন দেশের তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, পর্যন্ত বিমানবন্দরে লাখ ২২ হাজার ৯৯০ জনকে স্ক্যানিং করা হয়েছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় স্ক্যানিং করা হয় ১৮ জনের। সর্বশেষ গতকালও ভারতের চেন্নাই থেকে ১৬৪ বাংলাদেশী দেশে ফিরেছেন বিমানবন্দর দিয়ে। লকডাউনের কারণে এতদিন ভারতে আটকা পড়েছিলেন তারা। এর আগে গত শুক্রবার বিশেষ ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে এসেছেন ৪৮ জন বাংলাদেশী। তারা মূলত চিকিৎসা করাতে পর্যটক হিসেবে গিয়ে ব্যাংককে আটকা পড়েছিলেন। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে আসার পর প্রাথমিক পরীক্ষার পর তাদের বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, বিদেশফেরত যাত্রীদের যে প্রক্রিয়ায় পরীক্ষা করা হয়েছিল, তা আসলে কোনো কাজে আসেনি। পর্যাপ্ত জনবলও ছিল না। আবার যাত্রীদের দেহের তাপমাত্রা পরিমাপের জন্য থাকা থার্মাল স্ক্যানারগুলোর অধিকাংশই বিকল থাকত। অন্যদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলগুলোর মধ্যে সমন্বয়ও ছিল না।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেল করোনাভাইরাস যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে দেশের সবকটি বন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের প্রবেশের সময় পরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। দেশে প্রধান প্রবেশপথ শাহজালাল বিমানবন্দরেও বসানো হয় তিনটি থার্মাল স্ক্যানার। তবে কয়েক দিন দুটি থার্মাল স্কান্যার বিকল ছিল। সে সময় একসঙ্গে কয়েকটি ফ্লাইট এলে ক্লান্ত যাত্রীদের দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এর মাধ্যমেও বিদেশফেরতদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে থাকতে পারে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫