রেকর্ড সংকোচনে চীনের অর্থনীতি

প্রকাশ: এপ্রিল ১৮, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠার সুদীর্ঘ প্রতিশ্রুতি রয়েছে চীনের কমিউনিস্ট সরকারের। তবে আপাতত সে চেষ্টার লাগাম টেনে ধরেছে নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯। রীতিমতো পঙ্গু করে দিয়েছে দেশটির অর্থনীতি। শেষ প্রান্তিক হিসেবে কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংকুচিত হয়ে পড়েছে চীনা অর্থনীতি। দেশটির ভোক্তারা এতদিন ধরে যে অর্থনীতিকে টেনে উপরের দিকে নিয়ে এসেছে, রাতারাতি সেটি নিচে নামিয়ে দিয়েছে কভিড-১৯। সরকারি তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশটির জিডিপি গত বছরের তুলনায় দশমিক শতাংশ পড়ে গেছে। খবর এএফপি।

চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) নব্বইয়ের দশকের শুরুতে প্রান্তিক হিসাবে অর্থনীতিকে মূল্যায়ন করা শুরু করে। গত বছরের শেষ প্রান্তিকেও দেশটির অর্থনীতি শতাংশ প্রসারতা লাভ করে। তবে কভিড-১৯-এর প্রভাবে সেটি আশ্চর্যজনকভাবে উল্টোদিকে বাঁক নিতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে চীন সরকারের প্রকাশ করা অর্থনৈতিক তথ্য অন্য সংস্থা এবং অর্থনীতিবিদদের প্রাক্কলনের অনেকটা বিপরীত। সরকারের প্রতিবেদনের আগে এএফপির এক জরিপেও চীনের অর্থনীতির বড় আকারে সংকুচিত হওয়ার চিত্র উঠে এসেছে। জরিপের প্রাক্কলন তথ্য অনুযায়ী, দেশটির অর্থনীতি দশমিক শতাংশ কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়। সব মিলিয়ে বড় ধাক্কা খাওয়া অর্থনীতি নিয়ে সরকারের এমন তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, রাজনৈতিক কারণে চীন সরকার অর্থনীতির আসল চিত্র চেপে যাচ্ছে।

জাপানের আর্থিক সেবাদানকারী গ্রুপ নোমিউরার বিশ্লেষকরা মনে করেন, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি সংকোচনের যে তথ্য সরকার দিচ্ছে, বাস্তব চিত্র তার চেয়ে খারাপ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মহামারীর কারণে বৈদেশিক বাজারে  চীনা পণ্যের চাহিদা বড় ধরনের চাপে পড়বে। এর ফলে খুব তাড়াতাড়ি প্রবৃদ্ধি ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ কম। এছাড়া ভাইরাসটি দ্বিতীয়বারের মতো প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার শঙ্কাও অর্থনীতিকে টেনে তোলার পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতি যে মোটেই চীনের অনুকূল নয়, সেটি স্বীকার করেছে এনবিএসও। প্রতিষ্ঠানটির মুখপাত্র মাও শেংইয়ং বলেন, বাইরে থেকে আসা (ইমপোর্টেড কেস) সংক্রমিতদের নিয়ে আমাদের চাপ বাড়ছে। ফলে কারখানা চালু উৎপাদন কার্যক্রম নিয়ে নতুন বাধা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছি আমরা।

এএফপির জরিপ বলছে, ১৯৭৬ সালের পর বছর হিসাবে সবচেয়ে বাজে প্রবৃদ্ধি দেখবে চীন। বার্ষিক জিডিপির প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি কমে দশমিক শতাংশে দাঁড়াতে পারে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বলছে, পুরো বছর হিসাবে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে দশমিক শতাংশে স্থির থাকতে পারে। যদিও পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সালে প্রবৃদ্ধিতে বড় আকারে উল্লম্ফন দেখছে তারা। সংস্থাটির মতে, চীনের অর্থনীতি সময় ঘুরে দাঁড়িয়ে দশমিক শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে।

যদিও চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়ে চীনের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হবে বলেও মনে করে সরকার। মাও শেংইয়ং মনে করেন, মহামারীটি যদি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তাহলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধ প্রথমার্ধের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে থাকবে।

চার দশকেরও বেশি সময় আগে উগ্র মাওবাদী নীতি থেকে বেরিয়ে এসে কর্তৃত্ববাদী পুঁজিবাদ গ্রহণ করে বেইজিং। তখন থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিনিময়ে চীনের নাগরিকরা কমিউনিস্ট পার্টির একচেটিয়া ক্ষমতাকে নীরবে সয়ে যাচ্ছে। যে কারণে দেশটির জনগণ এবং কমিউনিস্ট শাসিত সরকারের মধ্যে একধরনের মৌন যুদ্ধ রয়েছে। আর কারণেই ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনের জন্য অর্থনৈতিক চিত্রটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একই কারণেই অর্থনীতিকে টেনে উপরে তুলতেও মরিয়া বেইজিং।

তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন বর্তমান পরিস্থিতি চীনের উচ্চ আকাঙ্ক্ষার জন্য মোটেই অনুকূল নয়। হংকংয়ের ব্যাপ্টিস্ট ইউনিভার্সিটির চীনা বিশ্লেষক জিয়েন পিয়েরে সেবাস্তান মনে করেন, ২০১০-২০২০ সালের মধ্যে চীনের জিডিপিকে দ্বিগুণ করার যে বাসনা নিয়েছিল কমিউনিস্ট পার্টি, সেটির কফিনে শেষ পেরেক বসিয়ে দিয়েছে কভিড-১৯। তবে স্বাস্থ্য খাতের সংকট যদি মোকাবেলা করা যায়, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে রথী-মহারথীদের জন্য আপাতত আসন্ন কোনো বিপদ দেখছেন না চীনা বিশ্লেষক।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫