প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতিক্রিয়ায় সানেম

সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে ব্যবস্থাপনার ওপর

প্রকাশ: এপ্রিল ১৭, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত খাত মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বাংলাদেশের ধরনের বিশাল পরিমাণের বা বিশাল পরিসরের প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োগ করার অতীত অভিজ্ঞতা নেই। সে কারণে এটার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজটির ব্যবস্থাপনার ওপর। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এমনটি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। 

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের ঘোষিত সামগ্রিক প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়ে সানেমের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক . সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ আমাদের জিডিপির শতাংশেরও বেশি। আমি মনে করি সামনের দিনগুলোতে এটির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। সানেমের পক্ষ থেকে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজকে স্বাগত জানাই।

ঢাকাভিত্তিক থিংক ট্যাংক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রণোদনা প্যাকেজের সাফল্য নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। মনে রাখা দরকার যে বাংলাদেশের ধরনের বিশাল পরিমাণের বা বিশাল পরিসরের প্রণোদনা প্যাকেজ প্রয়োগ করার অতীত অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশের যে সাফল্য আছে দুর্যোগ মোকাবেলায়, বিশেষ করে সাইক্লোন বা বন্যাসংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবেলায়, সেটির থেকে করোনাভাইরাসজনিত যে সংকটটা আমরা দেখছি, তার ধরন একেবারেই ভিন্ন। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশেরই ধরনের অভিজ্ঞতা নেই। বাংলাদেশের তো অবশ্যই ধরনের অতীত অভিজ্ঞতা ছিল না। সুতরাং ধরনের একটা সংকটের সময়ে রকম একটা বিশাল পরিমাণের অর্থ যখন অর্থনীতিতে চালনা করা হচ্ছে, নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, সেখানে এটার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজটির ব্যবস্থাপনার ওপর। এক্ষেত্রে প্রথমত যেটি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থের সংকুলান কীভাবে হবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক এক্ষেত্রে অর্থের সংকুলানের জন্য চারটি উেসর কথা বলেছেন। যার প্রথমটি হচ্ছে সরকারের যে বিভিন্ন অপ্রয়োজনীয় খরচ আছে, বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেটে যে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো আছে, সেগুলোকে অবিলম্বে স্থগিত বা বাতিল করা দরকার। সেখান থেকে যে পরিমাণ টাকা সঞ্চয় হবে, সেটাকে অবশ্যই প্রণোদনা প্যাকেজের জন্য কাজে লাগাতে হবে।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন বিশ্বব্যাংক আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয়া। সানেম বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীকরণ অনুযায়ী নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কারণে স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার সুবিধা অনেকটা হারিয়েছে। কিন্তু রকম একটি সংকটের সময়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে সমঝোতা করার চেষ্টা করতে পারে যে কীভাবে স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায়।

তৃতীয়ত, সরকার ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিতে পারে। যদিও ব্যাংকিং খাতের এখন যে অবস্থা এবং দীর্ঘদিনের যে চলমান সংকট তার মধ্যেই সরকার জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে পুরো বছরে যা নেয়া দরকার তার চেয়েও বেশি পরিমাণে নিয়ে নিয়েছে। তার পরও যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, সরকারকে সেই ব্যাংক থেকে টাকা নিতে হবে। এই তিনটি ক্ষেত্র থেকেও যদি না হয় তাহলে চতুর্থ যে উপায়টি আছে, সেটি হচ্ছে টাকার সংকুলান করার জন্য টাকা ছাপাতে হবে। তবে এটিকে একদমই শেষ উপায় হিসেবে রাখা দরকার বলে মনে করে সানেম। 

অন্যদিকে টাকার সংকুলান হওয়ার পরই গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে টাকাটা

ব্যবহার হচ্ছে কীভাবে। . সেলিম রায়হান বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজের দুটি দিক আছে। একটা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলোর জন্য সহায়তা প্রদান করা এবং আরেকটি হচ্ছে দরিদ্র অসহায় জনগোষ্ঠীর খাদ্য সংকট অন্যান্য সমস্যা মোকাবেলা। এই দুটি ক্ষেত্রে কীভাবে অর্থ বিতরণ করা হবে, কে পাবে এবং কীভাবে পাবেএই পুরো প্রক্রিয়াকে যথার্থভাবে কার্যকর হতে হবে।

সানেমের নির্বাহী পরিচালক মনে করেন, এই বিতরণ প্রক্রিয়ায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারাই যেন সত্যিকার অর্থে সাহায্য পায়। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পগুলো এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য খাদ্য অর্থ জোগান দেয়ার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

সব মিলিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটিকে মনিটর করার জন্য সানেমের পক্ষ থেকে মনিটরিং ইউনিট স্থাপন করারও প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সঙ্গে সংকটের কারণে সামনের দিনগুলোতে আর্থিক যে বিশাল ধাক্কা আসছে, সেটি সামলে ওঠার জন্য সরকারের পাশাপাশি এনজিও, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক সংগঠনেরও দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫