চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে ব্রিটেনের সুপার মার্কেটগুলো

প্রকাশ: এপ্রিল ০৮, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

দেশটির ছয় কোটি মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারবে কিনা, শঙ্কা ভর করেছে ব্রিটেনের সুপার মার্কেটগুলোতে। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নীতিমালা কিছুটা শিথিল কার্যক্রম পরিচালনার সময় না বাড়ালে বিশাল গ্রাহকশ্রেণীকে সেবা দেয়া কঠিন ঠেকবে বলে মনে করছে তারা। খবর রয়টার্স।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাতের কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহী বলছেন, লকডাউন ঘোষণার পর ব্রিটেনবাসী যে খাদ্য মজুদ করেছিল তা ফুরিয়ে গেলে এবং ইস্টারের দীর্ঘ হলিডের আগে ক্রেতাদের চাহিদায় উল্লম্ফন আশা করা হচ্ছে। লকডাউনের ফলে বার, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, স্কুলে খাওয়া-দাওয়া কর্মস্থলে ক্যান্টিনের মতো ঘরের বাইরে খাবারের সব ব্যবস্থা বন্ধ। দেশটির মোট খাদ্য গ্রহণের ৩০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ এখন স্টোরগুলোর হাতে।

সমস্যা হচ্ছে স্টোরগুলোতে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নিশ্চিত করে যে হারে ক্রেতাদের প্রবেশের সুযোগ দেয়া হচ্ছে এটা চালু রেখে ছয় কোটি ব্রিটিশকে খাওয়ানো সম্ভব কিনা, এটা এখন বড় প্রশ্ন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান এক শীর্ষ নির্বাহী।

গত ২৩ মার্চ যুক্তরাজ্য সরকার কর্তৃক চলাচল সীমিত করা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কার্যকরের নির্দেশ ঘোষণার আগের চার সপ্তাহে দেশটিতে গ্রোসারি পণ্য বিক্রি ২০ শতাংশ বেড়েছে। নিজেদের আলমারি ফ্রিজারে ১০০ কোটি পাউন্ড মূল্যের অতিরিক্ত খাবার মজুদ করেছিল তারা। কিন্তু গত ১৫ দিনে বিক্রি কমে গিয়েছে, কারণ স্টোরগুলো তাদের চালু থাকার সময় কমিয়েছে এবং ক্রেতা সংখ্যা কিছু নির্ধারিত পণ্য ক্রয় সীমিত করেছে। এতে অনেক সুপার মার্কেটের বাইরে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। কিন্তু নির্বাহীরা বলছেন চাহিদায় পতনটা ক্ষণস্থায়ী। সবাই যেহেতু ঘরে খাওয়াদাওয়া সারছে, সেহেতু ইস্টারের ছুটিতে মানুষ কেনাকাটা আরো বাড়াবে। বিষয় সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র বলছে, লকডাউনের সময় বড় সুপার মার্কেটগুলো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বিক্রি বৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে। ব্রিটেনের চারটি বড় সুপার মার্কেট চেইন টেসকো, সেইন্সবুরি, আসদা মরিসনের হাজারো কর্মী নিয়োগের পেছনে এটি অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে বলে জানায় খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

সুপার মার্কেটগুলোর অনলাইন ডেলিভারি ব্যবসা, যা সংকটের আগে গ্রোসারি বাজারের প্রায় শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করত বর্তমানে সেখানে অতিরিক্ত কিছু চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। তাদের ডেলিভারি সক্ষমতা বাড়ানো হলেও গ্রোসারি বাজারের ৮৫ শতাংশ সরবরাহ করবে স্টোরগুলোই।

সুপার মার্কেটগুলোর ভয়ের জায়গা হচ্ছে, বিদ্যমান বিধিনিষেধের কারণে তাদের পক্ষে চাহিদা পূরণ বাস্তবিকই সম্ভব নয়। শিল্প খাতের এক পরিচালক রয়টার্সকে বলেন, সুপার মার্কেটগুলোতে বর্তমানে যে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নীতিমালা কার্যকর হয়েছে, তাতে ৮৫ শতাংশ পণ্য বিক্রি সম্ভব নয়। চলমান পরিপ্রেক্ষিতে হয় আপনাকে চালু থাকার সময় বাড়াতে হবে বা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নীতিমালা পরিবর্তন করতে হবে। সংকটের শুরুতে কিছু সুপার মার্কেট তাদের চালু থাকার সময় কমিয়েছে, যাতে তাদের কর্মীরা বিশ্রাম নিতে পারে, তাকগুলো ফের ভরতে পারে এবং অনলাইন ডেলিভারি প্রস্তুত করতে পারে।

এখন যে সুপার মার্কেটগুলো উভয় সংকটে পড়েছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে ওই পরিচালক বলেন, আপনার সামনে এখন দুটি বিষয়ই চিন্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে পাওয়া অর্ডার কার্যকর করতে হয় আপনাকে দীর্ঘ সময় স্টোর বন্ধ রাখতে হবে বা স্টোরগুলো দীর্ঘ সময় খোলা রাখতে হবে, যাতে যেকোনো নির্দিষ্ট সময়ে ক্রেতাদের ভিড় বেশি না হয়।

ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে দিনব্যাপী নির্বিঘ্নে কেনাকাটা চালুর একটা উপায় বের করা জরুরি বলে মনে করছেন শিল্প নেতারা। বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বেশির ভাগ স্টোরেই ভিড় কম থাকে। যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে পণ্য মজুদ থাকে তাহলে সুপার মার্কেটগুলো ক্রেতাদের জানানোর উপায় বের করতে পারে। একই সঙ্গে ক্রেতাদের সপ্তাহে কয়েকবার বাজার না করে একবারে অধিক পরিমাণে বাজারের পরামর্শও দিচ্ছে সুপার মার্কেটগুলো।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫