নভেল করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারী রূপ ধারণের পর থেকেই মাস্ক ও রেসপিরেটরের চাহিদা আকাশচুম্বী। সামাজিক সংক্রমণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে লকডাউনের মতো পদক্ষেপ তো রয়েছেই, পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধানের ওপর জোর দিচ্ছে অনেক দেশের সরকার। আর এতে পোয়াবারো অবস্থা চীনা মাস্ক উৎপাদকদের। চাহিদা ও সরবরাহ সংকটের কারণে অন্যান্য শিল্প যেখানে রীতিমতো ধুঁকছে, সেখানে চীনের মাস্ক উৎপাদকরা বড় অংকের মুনাফা পকেটে পুরছে। খবর গার্ডিয়ান।
সাংহাইভিত্তিক কোম্পানি গোল্ডেন প্যাসিফিক ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইনের ব্রোকার মাইকেল ক্রোটি জানিয়েছেন, করোনার প্রাদুর্ভাব বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পর মাস্ক ও রেসপিরেটরের চাহিদা অনেক বেড়েছে। এ সুযোগই নিচ্ছে চীনের মাস্ক উৎপাদকরা। তারা এখন পণ্য ডেলিভারির আগেই ক্রেতাদের কাছে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধের দাবি করছে। এছাড়া যেসব ক্রেতা অন্যদের তুলনায় বেশি টাকা দিচ্ছে এবং দ্রুততম সময়ে মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দিতে পারছে, চীনা উৎপাদকরা তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মাস্ক সরবরাহ করছে।
ক্রোটি আরো জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা পণ্যের পরিবেশকদের কাছ থেকে মাস্ক উৎপাদনের কার্যাদেশ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও তাদের কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কার্যাদেশ দিচ্ছেন। তবে তারাই পণ্য সরবরাহের নিশ্চয়তা পাচ্ছেন, যারা উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি মানতে পারছেন।
মাইকেল ক্রোটি বলেন, ‘প্রবাদ রয়েছে, টাকায় কথা কয়। চীনা মাস্ক উৎপাদকদের ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা যাচ্ছে। কারখানাগুলো এখন কেবল দুটি বিষয় নিশ্চিত হতে চায়—তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কত টাকা জমা হলো, আর কত দ্রুত জমা হলো। যারা অন্যদের চেয়ে দ্রুত টাকা দিতে পারবে, কেবল তারাই মাস্ক ও রেসপিরেটর উৎপাদনের শিডিউল পাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব কারখানা বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাস্ক উৎপাদনের জন্য তাদের প্রডাকশন লাইনে পরিবর্তন এনেছে, তারা কার্যাদেশ গ্রহণের সময়ই ৫০ শতাংশ মূল্য পরিশোধের দাবি করছে। আর বাকি ৫০ শতাংশ টাকা তারা তাদের কারখানা থেকে পণ্য বেরিয়ে যাওয়ার আগেই পরিশোধ করতে বলছে। সমস্যা হলো, অনেক ক্রেতার পক্ষেই এ ধরনের শর্ত মেনে কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব নয়। বিশেষ করে সেসব ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য, যাদের আয়ের প্রধান উৎস জনগণের করের টাকা (স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ ইত্যাদি)। কিন্তু উৎপাদকরা এ সমস্যা বিবেচনায়ই নিচ্ছে না।’
ক্রোটি জানান, মাস্ক উৎপাদকরা এমন সব ক্রেতার কাছ থেকে কার্যাদেশ পাচ্ছে, যাদের নাম তারা আগে কখনো শোনেনি। বর্তমানের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এসব উৎপাদককে রীতিমতো চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছে। তা আবার যে-সে গাড়ির নয়, মার্সিডিজ লিমোজিনের চালকের আসনে বসেছে তারা।
করোনা পরিস্থিতিতে বাজারে মাস্কের কাটতি হু-হু করে বেড়েছে। বায়ুদূষণের কারণে এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আগে থেকেই মাস্ক ব্যবহারের চল রয়েছে। এর ওপর নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় পণ্যটির চাহিদা বেড়েছে বহুগুণ। সে তুলনায় ইউরোপীয় দেশগুলো ও যুক্তরাষ্ট্রে মাস্কের ব্যবহার অনেকটাই কম। ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ অবশ্য জরুরি প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার সময় জনগণকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়ার বিষয়টি চিন্তাভাবনা করে দেখছে। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) পাবলিক প্লেসে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে একটি নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ পরামর্শ থোড়াই কেয়ার করছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি মানা না মানার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নিজের ওপর। মনে হয় না আমি এমন কিছু করতে যাচ্ছি।’
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে। কোনোটি সাধারণ কাপড়ের তৈরি, কোনোটি আবার মেডিকেল গ্রেডের সার্জিক্যাল মাস্ক। এন-৯৫ সার্জিক্যাল মাস্কগুলোকে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বেশি কার্যকর বিবেচনা করা হচ্ছে।