চাহিদা সত্ত্বেও বিপাকে যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধ শিল্প

প্রকাশ: এপ্রিল ০৭, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের দুগ্ধ খামারি জেসন লিডলে গত সপ্তাহে হঠাৎই একটি অনাকাঙ্ক্ষিত কল পেয়ে ভড়কে যান। ওই কলে দেশটির সবচেয়ে বড় দুগ্ধ সমবায় ডেইরি ফারমার্স অব আমেরিকা (ডিএফএ) থেকে তাকে বলা হয়, আমরা চাচ্ছি, আপনি আপনার খামারের দুধ ফেলে দেয়া শুরু করুন। শুধু লিডলে নন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বহু দুগ্ধ খামারি বাধ্য হয়ে তাদের খামারের দুধ ফেলে দিচ্ছেন। নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা থাকলেও ভেঙে পড়া সরবরাহ ব্যবস্থার কারণে পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন মার্কিন খামারিরা। খবর রয়টার্স।

ভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে ব্যাপকহারে রেস্তোরাঁ স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাইকারি থেকে খুচরা মুদি দোকান পর্যন্ত পুরোপুরি পাল্টে গেছে খাদ্য পরিষেবা বাজারের চিত্র। দুধ প্রক্রিয়াকরণ, মাখন পনির উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরবরাহ প্যাকেজিং থেকে সব ক্ষেত্রে ধস নেমেছে। চালক সংকটে ভুগছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দুগ্ধজাত পণ্য সরবরাহকারী ট্রাক পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে বৈশ্বিক খাদ্য পরিষেবা খাত থমকে যাওয়ায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে মার্কিন দুগ্ধজাত পণ্য রফতানি।

খামারি, কৃষি অর্থনীতিবিদ পরিবেশকদের মতে, দুগ্ধ শিল্পের দুর্দশা সার্বিকভাবে চলমান বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। তবে এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে অন্য যে কোনো কৃষিপণ্যের চেয়ে দুগ্ধশিল্প বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কারণ দ্রুত পচনশীল দুধ অন্য পণ্য যেমন মাংসের মতো হিমায়িত করে রাখা যায় না। কিংবা খাদ্যশস্যের মতো গুদামেও মজুদ করা যায় না।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্য খাদ্য খাতগুলো বিশ্বব্যাপী সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। এর প্রধান কারণ হলো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং শ্রমস্বল্পতা। প্রয়োজনীয় শ্রমিকের অভাবে এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ফল সবজি উৎপাদন, উত্তোলন এবং পরিবেশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি হিমায়িত কনটেইনার ট্রাকচালকের অভাবে মাংস শস্যের মতো অতি জরুরি খাদ্যও সরবরাহ করা যাচ্ছে না।

লিডলে যদি তার খামারের দুধ কোনোভাবে বাজারে নিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে হয়তো তা তিনি বিক্রিও করতে পারতেন। কারণ বর্তমানে মুদি দোকানগুলোয় দুধ দুগ্ধজাত পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়ে ৩৬ বছর বয়সী লিডলে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি মনোবল একেবারেই ভেঙে দিয়েছে। গাভীগুলো নিয়মিত দুধ দিলেও তা সরাসরি গোবর রাখার গর্তে ফেলতে হচ্ছে। দুধের এমন অপচয় দেখা ছাড়া বর্তমানে তার কাছে অন্য কোনো পথ নেই।

লিডলে আরো জানান, গত মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিন তিনি তার ৪৮০টি গাভী থেকে পাওয়া অন্তত সাড়ে ১৭ হাজার লিটার করে দুধ ফেলে দিচ্ছেন। তার মতো একইভাবে দুধ ফেলে দেয়ার জন্য বলা হয়েছে ডিএফএর আরো সাড়ে সাত হাজার সদস্যকে। তাদের অনেকেই প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে দুধ ফেলে দিচ্ছেন। মূলত সদস্যদের খামারের দুধ বিপণনের দায়িত্ব থাকে দুগ্ধ সমবায়গুলোর ওপর। ফলে লিডলে আশা করছেন, তিনি তার মতো আরো যারা দুধ ফেলে দিচ্ছেন, সমবায় থেকে তাদের টাকা দেয়া হবে। কিন্তু সত্যি হলো, সুবিধা হয়তো সব সদস্যের ভাগ্যে জুটবে না।

ডিএফএর মতো ল্যান্ড লেকস ইনকরপোরেশন নামে আরেকটি সমবায় থেকেও সদস্যদের দুধ ফেলে দিতে হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে। আরো খারাপ অবস্থা উইসকনসিনভিত্তিক দুগ্ধ সমবায় ফরমোস্ট ফার্মস ইউএসএর। তবে কষ্টের বিষয় হলো, এমন অবস্থায় খামারিরা দুধ ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন যখন দুগ্ধজাত পণ্যের চাহিদা বাজারে তুঙ্গে। ২১ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে দুধের চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল প্রায় ৫৩ শতাংশে। মাখনের চাহিদা বাড়ে ১২৭ শতাংশেরও বেশি। অন্যদিকে ৮৪ শতাংশের বেশি বাড়ে পনিরের চাহিদা।

 

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫