মার্চের শুরুতে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোর ভিয়েনা বৈঠকে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন আরো কমিয়ে আনতে প্রস্তাব দেয় সৌদি আরব। এ প্রস্তাব বাতিল করে রাশিয়া। মূলত এর মধ্য দিয়ে জ্বালানি তেলের বাজারে সৌদি-রুশ মূল্যযুদ্ধের সূচনা। পরবর্তী পরিস্থিতি সবার জানা। রেকর্ড দরপতনের ধাক্কায় জ্বালানি তেলের ব্যারেল ২০ ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে এখন মাঠে নেমেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ ইস্যুতে এখন সৌদি আরব ও রাশিয়া নরম সুরে কথা বলছে। ধারণা করা হচ্ছে, অচিরেই মূল্যযুদ্ধ নিরসন হতে যাচ্ছে। আর এজন্য চলতি সপ্তাহেই জরুরি বৈঠকে বসছে ওপেক-নন ওপেক দেশগুলো। যদিও বিশ্লেষকদের ধারণা, নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার ধাক্কা সামলানো সৌদি আরব ও রাশিয়ার আপাত নমনীয় মনোভাবের অন্যতম কারণ। আসুন জেনে নিই আসন্ন বৈঠকের আগে ইস্যুটি নিয়ে বিভিন্ন দেশের সর্বশেষ অবস্থান—
উত্তোলন কমানোর চুক্তিতে রাজি রাশিয়া
অবশেষে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর লক্ষ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ চুক্তি সইয়ে রাজি হয়েছে রাশিয়া। এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, আমরা (রুশ প্রশাসন) মনে করি, সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দরপতনের পেছনে সৌদি আরব দায়ী। এর পরও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে এবং দাম কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় উন্নীত করতে যুক্তরাষ্ট্র ও ওপেকের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এমনকি ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ চুক্তিতেই রাজি রাশিয়া।
একযোগে কাজ করবে সৌদি আরব ও রাশিয়া
জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরানোর লক্ষ্য নিয়ে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে সৌদি আরব ও রাশিয়া একযোগে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে। দুই দেশই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে আগ্রহী।’ তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজার ভারসাম্যের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন কমানোর কোনো পরিকল্পনার কথা জানায়নি।
মূল্যযুদ্ধের জন্য দায়ী রাশিয়া
জ্বালানি তেলের বাজারে বিদ্যমান মূল্যযুদ্ধের জন্য সৌদি আরবকে দায়ী করে রাশিয়ার অবস্থানকে খারিজ করে দিয়েছেন সৌদি জ্বালানিমন্ত্রী আবদুলআজিজ বিন সালমান। তিনি বলেন, মূল্যযুদ্ধ শুরু করেছে রাশিয়া। ওপেকের বৈঠকের পর দেশটি আগে উত্তোলন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর জের ধরে অন্যান্য দেশও অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের উত্তোলন বাড়িয়েছে। তবে এর পরও বাজার ভারসাম্য ফেরানোর জন্য রাশিয়াসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ নিতে সৌদি আরব সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।
ওপেক-নন ওপেক বৈঠক আগামীকাল
সৌদি আরব ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোর জরুরি বৈঠক ডেকেছে বলে নিশ্চিত করেছেন আজারবাইজানের জ্বালানিমন্ত্রী পারভিজ শাহবাজোভ। তিনি বলেন, সৌদি আরবের আহ্বানে আগামীকাল ওপেক-নন ওপেক দেশগুলোর জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে নভেল করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর কারণে সামনাসামনি আলোচনার সুযোগ নেই। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। এ বৈঠক থেকে জ্বালানি তেলের বাজার ভারসাম্য ফেরাতে কার্যকর দিকনির্দেশনামূলক উপায় বেরিয়ে আসবে।