করোনা ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’ নিয়ে কাজে ফিরবে মানুষ!

প্রকাশ: এপ্রিল ০৪, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ঘরবন্দি। উৎপাদন, বিপণন প্রায় বন্ধ। দেউলিয়া হওয়ার পথে একাধিক এয়ারলাইন্স কোম্পানি। খরচ কমাতে শুরু হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছাঁটাই। কাজ হারিয়ে পথে বসার জোগার হাজার হাজার কর্মীর। কবে এই মহামারীর প্রকোপ কমে আসবে, কাজে ফিরবে মানুষ তার কোনো আভাস কেউ দিতে পারছেন না। কিন্তু মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা করতে হলে পতনোন্মুখ এই অর্থনীতিকেও তো বাঁচাতেই হবে! এ কারণে এই পরিস্থিতির মধ্যেই অভিনব কৌশল নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। এর মধ্যে আলোচিত একটি প্রস্তাব ‘ইমিউনিটি সার্টিফিকেট’ বা ব্রিটেনে বলা হচ্ছে ‘ইমিউনিটি পাসপোর্ট’! অর্থাৎ যাদের শরীরে এরই মধ্যে করোনাভাইরাস রোধী যথেষ্ট অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গেছে তারাই হবেন অর্থনীতি বাঁচিয়ে রাখার সামনের সৈনিক!

বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই বলছেন, এই ব্যাপকভিত্তিক লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার একমাত্র উপায় গণহারে পরীক্ষা করা। নির্ভরযোগ্য পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করতে হবে এবং এরপর তার শরীরে যথেষ্ট শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে নতুন সংক্রমণের লাগাম টানা সম্ভব।

কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, কী ধরনের বা কতো মাত্রার প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে একজনকে কভিন-১৯ থেকে সুরক্ষিত ভাবা হবে সেই সার্টিফিকেটটা দেবে কে? আর যাদের এই স্ট্যাটাস দেয়া হবে তাদের অধিকার বা মর্যাদা নির্ধারণ করা হবে কীভাবে?

গত শুক্রবার ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক অভিনব একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি নিজেও সম্প্রতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন। তার প্রস্তাব হলো, যেসব ব্রিটিশ করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধে জিতে গেছেন তাদের একটা সনদ দেয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, আমরা একটা ইমিউনিটি সার্টিফিকেট বা রোগ প্রতিরোধ সনদের কথা ভাবছি। যাদের করোনা হয়েছে এবং সুস্থ হয়েছেন, তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার কারণে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এ সনদ তাদের জন্য। তারা এই সনদ দেখিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। পরে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এই সনদটি একটি কবজিবন্ধনীও হতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অনেকে এরই মধ্যে চাকরি হারিয়েছেন, আবার কেউ কেউ তার ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে কাজে ফেরার জন্য উতলা হয়ে আছেন। তাদের জন্য মন্ত্রীর এ প্রস্তাব একটা ঐশ্বরিক বাণীর মতো শোনাতে পারে। কিন্তু এটির জন্য নির্ভরযোগ্য  প্রক্রিয়ার কোনো ধারণা এখনো কেউ দিতে পারেননি। কারণ কভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতার বিষয়টিই এখনো ধোঁয়াশা। একই ব্যক্তির একাধিকবার আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এটিকে আরো অস্পষ্ট ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। মন্ত্রী হ্যানককও বিষয়টি স্বীকার করেছেন। 

এই ইমিউনিটি সার্টিফিকেটের ধারণাটিকে ‘সত্যিই স্মার্ট’ বলে অভিহিত করেছেন মন্ত্রী।  বিজ্ঞানীরা আইডিয়াটি খুব গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করছেন, এর মধ্যে ব্রিটিশ সরকারের অন্যতম গোপন গবেষণা কেন্দ্র ইংল্যান্ডের গণস্বাস্থ্য বিভাগের গবেষণাগারগুলোতেও এটি নিয়ে যাচাই বাছাই চলছে বলে জানান মন্ত্রী। 

এ পদ্ধতির ব্যাপারে কিছু সামাজিক মূল্যবোধের প্রশ্নও উঠছে। এতে করে কি সমাজে মোটাদাগে দুটি শ্রেণি তৈরি হবে? এক শ্রেণি কাজে ফিরবে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে আর অন্য শ্রেণি থাকবে ঘরে বন্দি!

এ নিয়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাংলিয়ার স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ের অধ্যাপক পল হান্টার সিএনএনকে বলেন, কি চমৎকার আইডিয়া! এটার ইতিবাচক দিক হলো ডাক্তার, নার্স, সুপার মার্কেট কর্মী বা এ ধরনের যারা সামনে থেকে কাজ করেন তারা কাজে ফিরতে পারবেন। এছাড়া যারা আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন তারাও নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। কিন্তু এর কিছু সমস্যাও আছে। সবচেয়ে বড় নেতিবাচক দিক হলো মানুষ জালিয়াতি শুরু করতে পারে। যাদের বাইরে যাওয়া এবং উপার্জন করা জরুরি তারা ভুয়া সার্টিফিকেট বানাবে। তাছাড়া এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটা কেমন হবে তা পরিষ্কার নয়। এটি বাড়িতে পরীক্ষা করা যাবে নাকি সরকার এমন ব্যবস্থা করে দেবে তা তো জানা যাচ্ছে না। বাসায় যদি করা হয় তাহলে পাসপোর্টে সই করবে কে? আর ঠিকঠাক পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা সেটিই বা কীভাবে যাচাই করা হবে। আর দূরে কোথাও গেলে সনদধারী যে আসল ব্যক্তি, তিনি যে জালিয়াতি করেননি সেটি কীভাবে যাচাই করা হবে?

অবশ্য এ ধরনের একটি প্রক্রিয়া চীন এরই মধ্যে চালু করেছে। তারা রঙিন কিউআর কোডের প্রচলন করেছে। গত মাস থেকেই হুবেই প্রদেশে এটি চালু করা হয়েছে। লাল, হলুদ আর সবুজ এই তিন রঙের কিউআর কোড ব্যবহার করা হচ্ছে।

প্রাদেশিক মহামারী নিয়ন্ত্রণ ডাটাবেজের ভিত্তিতে এ কোড দেয়া হচ্ছে। যাদের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে, সন্দেহভাজন বা জীবাণু থাকলেও উপসর্গ নেই অথবা জ্বর আছে তাদের দেয়া হচ্ছে লাল কোড। এদের সংস্পর্শে যারা এসেছেন তাদের হলুদ আর এই ডাটাবেজের বাইরে যারা তারা পাচ্ছেন সবুজ কোড। প্রত্যেকের সেলফোনে থাকছে এই কোড। সবুজ কোডধারীরা ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতে পারছেন। ৮ এপ্রিল থেকে উহানের বাসিন্দাদের জন্যও এই কোড চালু হবে বলে জানা গেছে।

দক্ষিণ কোরিয়া চালু করেছে জিপিএস ভিত্তিক অ্যাপ। সেলফ কোয়ারেন্টিন ঠিকঠাক মানা হচ্ছে কিনা এর মাধ্যমে সেটি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাতে অধিকাংশ মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা যায় সে লক্ষ্যে ব্যাপকভিত্তিক টেস্ট করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ডেনমার্ক।

যাইহোক, এই মুহূর্তে সংক্রমণ বিস্তার রোধের পাশাপাশি অর্থনীতিকে সচল রাখাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে সরকারগুলো। ভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা আর ব্যাপকভাবে করোনা টেস্ট করাই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশল বলে ভাবা হচ্ছে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী যেমন বলছেন, সরকারের একমাত্র কাজ হচ্ছে যতো দ্রুত সম্ভব মানুষকে ঘর থেকে বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়া।

সিএনএন অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫