করোনার প্রভাব ঠেকাতে ১১ সংগঠনের প্রস্তাবনা

অর্থনীতিতে ৩ মাসে প্রয়োজন ৩০,০০০ কোটি টাকা

প্রকাশ: এপ্রিল ০২, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর ফলে দেশীয় শিল্পখাতে উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে সমন্বিত প্রস্তাবনা দিয়েছে সেবা ও শিল্পখাতের ১১টি সংগঠন। প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, ‘বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়া ও দেশীয় চাহিদা সঙ্কটের সন্ধিক্ষণে ঐতিহাসিকভাবে সরকারকে এর প্রভাব কমিয়ে আনতে অর্থনীতিতে নগদ অর্থের সঞ্চার করতে হবে। আমাদের হিসাব অনুযায়ী মার্চ ২০২০ থেকে প্রথম তিন মাসের প্রাথমিক সহায়তা প্রয়োজন আনুমানিক ৩০ হাজার (ত্রিশ হাজার) কোটি টাকা।’

দেশের সেবাখাত ও শিল্পখাতের শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ভিত্তিতে এই আনুমানিক হিসাব করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে সংগঠনগুলো। এছাড়াও আর্থিক পদক্ষেপের মধ্যে করের বোঝা প্রশমনের কথাও সরকার চিন্তা করতে পারে বলে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিতে আরো বলা হয়েছে, প্রস্তাবনার সুপারিশগুলো খাতভিত্তিক একাধিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে।

প্রস্তাবক সংগঠনগুলো হলো- মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিসহ (এমসিসিআই), বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন (বিইএফ), বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফেকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), বাংলাদেশীয় চা সংসদ (বিসিএস), বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ), বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএসএ), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফট্ওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফএ), লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) এবং বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর ফলে দেশীয় শিল্পখাতে উদ্ভুত পরিস্থিতির আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও যথাযথ ঊর্ধ্বতন নীতি নির্ধারণী কর্তৃপক্ষকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের তরফ থেকে গত ২৪ মার্চ বিস্তারিত সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। সেই সুপারিশের আলোকে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এর জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক সাধুবাদ জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

এছাড়াও যে সুপারিশগুলোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি, সেগুলোও যথাযথ কর্তৃপক্ষের বিবেচনাধীন আছে এমন বিশ্বাস প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রপ্তানিমুখী শিল্পখাতের ন্যায় দেশীয় শিল্পখাতের জন্যও প্রণোদনার বিষয়টিও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় আনবেন।’

পৃথিবীর অন্যতম ঘন জনবসতিপূর্ণ ও জনবহুল দেশ হওয়ায় আমরা আরো উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে আছি এমন তথ্য উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিশ্ব অর্থনীতি বিরাট ধাক্কা খেয়েছে এবং অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে খুব শিগগিরই এর থেকে উত্তরণ ঘটবে না। শুধু অভ্যন্তরীণ কারণেই নয়, বৈশ্বিক কারণেও আমাদের অর্থনীতি হুমকির মুখে। আমাদের ব্যবসায়ী অংশীদার দেশসমুহ যেমন- চীন, ইতালি, জাপান, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদিআরব, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ইত্যাদি এই ভাইরাসে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা উপলব্ধি করছি, এর প্রতিক্রিয়ায় আগামী দিনে তাদের অর্থনীতি ধীরগতিসম্পন্ন হতে যাচ্ছে।’

দেশীয় বাজারেও খাদ্য, ঔষধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ব্যতীত অন্যান্য জিনিসের চাহিদা কমে যাবে, ইতোমধ্যেই এমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে জানিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘চীন ব্যতিত আমাদের অন্যান্য ব্যবসা অংশীদার দেশসমূহে পরিস্থিতি সহসা খুব বেশি উন্নতি হবে না।’

এছাড়াও পহেলা বৈশাখ ও পবিত্র রমজান মাস খুব সন্নিকটে এবং ঈদুল ফিতরও সামনেই, যে সময়ে বাস্তবিক কারণেই ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রবাহ বিশেষভাবে জরুরি বলেও মনে করছে সংগঠনগুলো। 

পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পরিমাপযোগ্য ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণসহ প্রস্তাবের ওপর বিস্তারিত পরিকল্পনা প্রস্তুত করার জন্য অতিসত্তর সরকার অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সমাজবিজ্ঞানী ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ সমন্বয়ে একটি স্বাধীন ‘টাস্কফোর্স’ গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫