গভীরতর সংকটে তুরস্কের ভঙ্গুর অর্থনীতি

প্রকাশ: এপ্রিল ০২, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক মহামারী নভেল করোনাভাইরাস যখন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে, তখন তুরস্কের অর্থনীতি মন্দার ধাক্কা সামলে মাত্রই সামনে এগোনো শুরু করেছিল। কিন্তু ভাইরাসের ধাক্কা ফের গভীর সংকটের মুখে ফেলে দিয়েছে দেশটিকে। অবস্থায় অর্থনীতির সম্প্রসারণ তো দূরের কথা, আঙ্কারাকে উল্টো ধাক্কা সামলাতে বড় ধরনের প্রণোদনা পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। খবর এএফপি।

গতকাল পর্যন্ত তুরস্কে কভিড-১৯-এর সংক্রমণে মারা গেছে ১৬৮ জন। সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরো জটিল হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবস্থায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান মার্চের শুরুর দিকে দেশটির অর্থনীতির জন্য দেড় হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এছাড়া তিনি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য কর কর্তন এবং নিম্ন আয়ের নাগরিকদের জন্য সহায়তার পদক্ষেপ নেন। দেশটির ব্যবসায়িক নেতা এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, আঙ্কারার পদক্ষেপ কোম্পানিগুলোর জন্য ফলপ্রসূ হবে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, সার্বিকভাবে উচ্চ বেকারত্ব এবং নিম্ন প্রবৃদ্ধির দিকে ধাবিত হচ্ছে তুরস্ক। বিশেষ করে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতির শিকার হবে দেশটির পর্যটন খাত। ফলে ঝুঁকিতে পড়বে খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। তাছাড়া শঙ্কার আরো কারণ হলো, ভাইরাস সংক্রমণের আগে ২০১৮ সালের আর্থিক সংকটের পর তুরস্কের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি হচ্ছিল খুবই স্বল্প পরিসরে।

অবস্থায় মুডি রেটিং এজেন্সি জানায়, জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্ক নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। চলতি বছরের দ্বিতীয় তৃতীয় প্রান্তিকে দেশটির জিডিপির মোট সংকোচন হবে প্রায় দশমিক শূন্য শতাংশ। সংস্থাটি আরো জানায়, পুরো গ্রীষ্মজুড়েই ভাইরাসের কারণে তুরস্কের পর্যটনসংশ্লিষ্ট খাতগুলো মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। গত বছর দেশটির পর্যটন খাতের আয় ১৭ শতাংশ বেড়ে হাজার ৪৫০ কোটি ডলারে পৌঁছে। বছরটিতে পর্যটকের সংখ্যা প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় কোটি ২০ লাখে।

তবে ১৯ মার্চ দেশটির অর্থমন্ত্রী বেরাত আলবায়রাক জানান, তিনি তুরস্কের অর্থনীতির জন্য বর্তমানে তেমন কোনো ঝুঁকি দেখছেন না। তিনি বলেন, আমি এখন কোনো অর্থনৈতিক ঝুঁকি দেখছি না। একই সঙ্গে তিনি ২০২০ সালের জন্য উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। তিনি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন শতাংশ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে তুরস্কে যে ভীতি সবাইকে চেপে ধরেছে তা হলো সম্ভাব্য বেকারত্ব। এমনকি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও তাদের গার্হস্থ্য ব্যয় নির্বাহ নিয়ে দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সী মেহমেত আর্সলান নামে এক সবজি বিক্রেতা বলেন, তার ক্রেতাদের অধিকাংশই বয়স্ক। তাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। কিন্তু ভাইরাসের কারণে তাদের ঘরে অবস্থানের জন্য বলা হয়েছে। ফলে বিক্রি প্রায় হচ্ছে না বললেই চলে। অবস্থায় তিনি কীভাবে জীবিকা নির্বাহ করবেন বুঝতে পারছেন না।

একইভাবে অন্য ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, তাদের বিক্রি কমে গেছে ৭০-৮০ শতাংশ। ভয়ের কথা হলো, ২০১৯ সালে তুরস্কে বেকারত্বের হার এর আগের বছরের ১১ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক শতাংশে দাঁড়ায়। অন্যদিকে গত মাসে দেশটিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

৪৪ বছর বয়সী বিলগে চেহান নামে এক বেকার নারী জানান, এমনিতেই তার চাকরি নেই। তার ওপর নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তাকে আরো সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে চাকরি খুঁজবেন বুঝতে পারছেন না। কিংবা সংক্রমণ প্রশমিত হলে চাকরির বাজার কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়েও তার কোনো ধারণা নেই। অবস্থায় শুধু সঞ্চয়ের ওপর ভর করে তার জীবন চলবে না।

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫