করোনা রোগী নিয়ে লুকোচুরি নয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: এপ্রিল ০১, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী নিয়ে লুকোচুরি না করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) কাজ করছে। শুধু ঢাকা নয়, বিভাগীয় পর্যায়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করছি। লুকোচুরি নয়, লুকোচুরি করলে নিজেই নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়ে সূচনা বক্তব্যে আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ছুটি দিয়েছিলাম, হয়তো আমাদের আরো কয়েকদিন একটু বাড়াতে হতে পারে। কারণ যারা অনেকে গ্রামে চলে গেছে, সেখানে কোনো রকম আবার রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা না দেয়, সেই সময়টা হিসাব করে। আমরা ১০-১২ দিনের ছুটি দিয়েছিলাম। এটা ১৪ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

ছুটি বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও সীমিত আকারে চালু রাখার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থাটা চালু করার জন্য সেখানে আমরা চিন্তাভাবনা করেই করব, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা সেখানে ছাড় দেব। 

তবে সাধারণ ছুটির সময় যেন খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমজীবী মানুষের কোনো সমস্যা না হয়, তাদের কাছে যেন সহায়তা পৌঁছানো হয়, সে নির্দেশনাও জেলা প্রশাসকদের দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সাধারণ ছুটি থাকলেও যেন মানুষের কোনো কষ্ট না হয়। আরেকটি বিষয়, দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে, মানুষের নাগালের মধ্যে থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে। আমি আশা করব, সবাই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখবেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধের সময়ে নিম্নআয়ের মানুষের খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি বা অনিয়ম না হয়, সেদিকে কড়া নজরদারি রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় যেসব শ্রেণী বা ব্যক্তি আগে থেকেই সহায়তা পেয়ে আসছে, তাদের জন্য সেই সেবা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এর বাইরেও যাদের প্রতিদিনের আয়ের ওপর নির্ভর করতে হয়, তাদের জন্য আলাদা তালিকা করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাদের কাছে অর্থ পৌঁছে দেব। আল্লাহর রহমতে আমাদের কোনো অভাব নেই। আমাদের খাদ্যও যথেষ্ট পরিমাণে মজুদ আছে। তাই আমরা তাদের অর্থ দেব, তাদের কাছে খাদ্যদ্রব্য পৌঁছে দেব। কারণ আমি চাই না, আমার দেশের মানুষ যেন খাবার বা অর্থের জন্য কষ্ট পায়। 

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যারা একটু বিত্তশালী আছেন, তাদের যেমন দায়িত্ব পালন করতে হবে, একইভাবে প্রশাসনকেও দায়িত্ব নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা আছেন, তাদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। 

চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যসেবাসংশ্লিষ্টদের জন্য পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট বা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের (পিপিই) ব্যবহার নিয়ে সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, পিপিই সত্যিকার অর্থে যাদের প্রয়োজন, তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যাদের প্রয়োজন নেই, তাদের পিপিই পরিধান করার প্রয়োজন নেই। পিপিই ব্যবহার নিয়ে অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা থাকতে পারে। আমার মনে হয়, আইইডিসিআর বা সংশ্লিষ্টরা ক্ষেত্রে পিপিই ব্যবহারের একটি নির্দেশনা তৈরি করে দিতে পারে। প্রয়োজনে সচিত্র নির্দেশনা তৈরি করা যেতে পারে। কারা, কখন পিপিই ব্যবহার করবেন, এটি সবার সঠিকভাবে জানা প্রয়োজন সবার মধ্যে নির্দেশনা সঠিকভাবে প্রচারিত হওয়া প্রয়োজন। রোগীর সেবা যারা করবেন, তারাই শুধু পিপিই পরবেন।

শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা সচেতন হয়েছি বলেই তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো আমাদের অবস্থা খুব খারাপ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সব নির্দেশনা আমরা অনুসরণ করছি। তিনি বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর বড় কর্তব্য মনে করেছি, জনগণের নিরাপত্তা দেয়া। সেটিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে মুজিব বর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানসহ সব অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা হয়। যেন সবাই নিরাপদে থাকেন। করোনাভাইরাসের ঝুঁঁকির কারণে আসছে বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান পালনে সবাইকে নিরুৎসাহিত করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, আমাদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। কিন্তু সংসদ টিভির মাধ্যমে আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাস করার সুযোগ করে দিয়েছি। ঠিক একইভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করেও আপনারা গান-বাজনা করতে পারেন। ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠান করে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিন।

জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন থেমে থাকবে না, চলবে। সেদিকে লক্ষ রেখে কাজ করতে হবে। তার পরও জনগণকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। সেটা করতে গিয়ে মানুষকে কষ্টও দেয়া যাবে না।

সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশার প্রাদুর্ভাব কিন্তু আস্তে আস্তে শুরু হবে। তারপর আসবে ডেঙ্গু। ব্যাপারে আমাদের এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মশার হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য এখন থেকেই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প নিয়ে আমরা চিন্তিত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প যেন ভালোভাবে সংরক্ষিত হয় সেটা দেখতে হবে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যদি কোনো রকম কিছু হয়ে যায়, তাহলে খুবই ক্ষতি হবে। প্রধানমন্ত্রী সময় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বহিরাগত কারো প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশনা দেন।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। এছাড়া সচিবালয় প্রান্তে যুক্ত ছিলেন সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরা। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এর অধীন বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন সচিবালয় প্রান্তে। সভায় ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, ঢাকা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার এবং মাদারীপুর, কক্সবাজার, সিলেট, গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা, বরগুনা, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্টরা কথা বলেন। সচিবালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষার পরিস্থিতি তুলে ধরেন আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। এছাড়া ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে কথা বলেন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের পর সুস্থ হওয়া জার্মানিফেরত শিক্ষার্থী শেখ ফয়সাল। 

 


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫