আইপিওর অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম

কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা দিয়েছে রিং শাইন টেক্সটাইল

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থ ব্যয়ে অনিয়মের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য রিং শাইন টেক্সটাইলকে শুনানিতে ডেকেছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গতকাল কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে আইপিওর অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছে কোম্পানিটি। রিং শাইনের কোম্পানি সচিব আশরাফ আলী কমিশনের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বিষয়ে রিং শাইনের কোম্পানি সচিব আশরাফ আলী বণিক বার্তাকে বলেন, আইপিওর অর্থ থেকে উরি ব্যাংকের ২২ কোটি টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও এর আগেই কোম্পানির তহবিল থেকে অর্থ পরিশোধ করা হয়। ফলে আইপিওর অর্থ হাতে পাওয়ার পর উরি ব্যাংকের পরিবর্তে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অবশ্য সিদ্ধান্ত নেয়ার আগেই ব্যাংকটিকে সামান্য কিছু টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আর বিষয়টি কমিশনের দৃষ্টিতে আইনসম্মত হয়নি। তবে আমরা কোম্পানির স্বার্থে সুদজনিত ব্যয় কমানোর জন্যই আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয় পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছি। বিষয়টি আমরা কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের বক্তব্যের সপক্ষে বেশকিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে। এগুলো আমরা এরই মধ্যে কমিশনকে সরবরাহ করেছি। প্রয়োজন হলে আবারো দেব। আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয়ে আইনবহির্ভূত কিছু হয়ে থাকলে সেজন্য কমিশনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছু করার নেই। আশা করি, কমিশন বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে।

বিষয়ে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা জানান, রিং শাইনের পক্ষ থেকে আইপিও তহবিলের অর্থ ব্যয় অনিয়মের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তারা আইপিওর অর্থ ব্যয় পরিকল্পনা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের আগেই খাত থেকে কিছু অর্থ ব্যয় করেছে, যা তারা পারে না। আমরা আমাদের পর্যবেক্ষণগুলো কমিশনের কাছে তুলে ধরব। কমিশন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

গত বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং শাইন টেক্সটাইল আইপিওর মাধ্যমে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। আইপিও প্রসপেক্টাস অনুসারে সংগৃহীত তহবিলের মধ্যে ৯৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা মেশিনারিজ অন্য সরঞ্জাম অধিগ্রহণ, কোটি ৬০ লাখ টাকা আইপিও প্রক্রিয়ার ব্যয় নির্বাহ এবং উরি ব্যাংকের ২২ কোটি ঢাকা ব্যাংকের ২৮ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধে ব্যয় করার কথা ছিল। কিন্তু গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর আইপিওর মাধ্যমে উত্তোলিত তহবিলের ব্যয় পরিকল্পনায় সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয় রিং শাইন টেক্সটাইলসের পরিচালনা পর্ষদ। সংশোধিত পরিকল্পনা অনুসারে, উরি ব্যাংকের পরিবর্তে প্রিমিয়ার ব্যাংককে ২২ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানিটি। এরই মধ্যে আইপিও তহবিল থেকে ব্যাংকটিকে অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে।

শেয়ার বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে রিং শাইনের প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডার : রিং শাইন টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুং উয়ে মিনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস লিমিটেড তাদের কাছে থাকা রিং শাইনের ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার ৫৮৭টি বোনাস শেয়ার ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছে। ইউনিভার্সের কাছে বর্তমানে রিং শাইনের কোটি ৮২ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭টি শেয়ার রয়েছে। রিং শাইনের এমডি ইউনিভার্সে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত বছর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালেঅস্তিত্বহীন ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নামে রিং শাইন টেক্সটাইলের প্রায় ২৫ কোটি টাকার শেয়ারশিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে দাবি করা হয়, ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান সুং উয়ে মিন যে রিং শাইন টেক্সটাইলের এমডি হিসেবে দায়িত্বরত, তা কোম্পানির প্রসপেক্টাস, এমনকি নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনেও উল্লেখ নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশন আরো দেখতে পায় রিং শাইনের আইপিও প্রসপেক্টাসের ১৯৫ নম্বর পাতায় কোম্পানিটির এমডি সুং উয়ে মিনের অন্যান্য কোম্পানিতে সম্পৃক্ততার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ইউনিভার্স নিটিং কোম্পানির নিয়মিত পরিচালনা কার্যক্রমে তার সক্রিয় থাকার প্রমাণাদিও কমিশনে পাঠায় রিং শাইন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএসইসির ৭০৪তম কমিশন সভায়  সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে প্লেসমেন্ট শেয়ারের বিষয়টি যথাযথ ডিসক্লোজারের ভিত্তিতেই সম্পন্ন হয়েছে। কারণে কোনো আইনের লঙ্ঘন হয়নি। তারপরও বাজার বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ইউনিভার্স নিটিং গার্মেন্টস কর্তৃক রিং শাইনের ধারণকৃত সব শেয়ারের জন্য তিন বছরের লক-ইনের শর্তারোপের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। অবশ্য ধারণকৃত শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ হিসেবে পাওয়া বোনাস শেয়ারের ওপর লক-ইন আরোপের বিষয়ে সে সময় কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়নি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫