হাজার বছরের সঞ্জীবনী ফল গুসি

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

সময় আর নদীর স্রোত বহমান। সময়ের সাথে সাথে বাড়ে বয়স। তবে বয়সকে ধরে রাখতে প্রাচীণকাল থেকেই মানুষের চেষ্টার কমতি নেই। এ নিয়ে কতশত পরীক্ষা হয়েছে তারও ইয়ত্তা নেই। তবে এশীয় দেশ চীনে বয়স ধরে রাখতে জাম জাতীয় একধরনের ফল খাওয়ার প্রচলন রয়েছে। কথিত আছে, তৃতীয় শতাব্দিতেও গুসি বেরি নামে এই ফল খাওয়ার প্রচলন ছিল।

‘রেড ডায়মন্ড’ খ্যাত গুসি বেরি ডিম্বাকৃতির ছোট এই ফলটি এখনো খাওয়া হয়। চীনে একে গুসি বেরি বা উলফবেরি নামেই জানা যায়। গোটা চীনে এই বেরির চাষ হলেও নিনাংগশিয়া অঞ্চলের ভূমিতে এর ফলন সবচেয়ে ভালো হয়। শীতল পর্বতের বাতাস, খনিজ সমৃদ্ধ মাটি এবং ইয়লো নদীর সেচ দেয়া লতাগুলির সংমিশ্রণের কথা জানান একটি অর্গানিক গুসি বেরি খামারের বিক্রয় ম্যানেজার ইভান গুয়ো। নিনাংগশিয়ার চাষীরা আজও সেই আদি পদ্ধতি অনুসারে এই ফল চাষ করে যাচ্ছে। বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাম টমেটো রঙের বেরি চাষ হয়।

কথিত আছে, দুই হাজার বছরেরও পূর্বে এক চিকিৎসক চীনের একটি গ্রামে ঘুরতে যান। সেখানে তিনি দেখতে পান, সেখানকার বৃদ্ধরা প্রায় সবাই শত বছরেরও বেশি বয়সী। তিনি আবিষ্কার করলেন, এই গ্রামের মানুষরা প্রতিদিন গুসি বেরি থেকে উৎপাদিত এক ধরনের পানীয় পান করে। যা তাদের প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে। 

এমনটাও বলা হয়, সপ্তদশ শতাব্দীতে লি কিং ইউয়েন নামে পরিচিত একজন ভেষজবিদ প্রতিদিন গুসি বেরি খেতেন। তিনি ২৫২ বছর বেঁচে ছিলেন। ভবিষ্যত প্রজন্মকে গুসি বেরি খেতে উৎসাহিত করার জন্য এধরনের গল্পকথাই যথেষ্ট। আর তা থেকেই শতশত বছর ধরে বেশ ভক্তি নিয়ে গুসি বেরি ফলের রস পান করে আসছেন চীনের এই অঞ্চলের বাসিন্দারা। 

দীর্ঘদিন ধরে ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন (টিসিএম) অনুশীলনকারীদের দ্বারা স্বীকৃত এই বেরি। ষোড়শ শতাব্দীতে খ্যাতিমান ভেষজবিদ লি শিজন লিখেছেন, নিরাময়ের প্রথিমিক বৈশিষ্ট্য হিসেবে এই বেরির মেটেরিয়া মেডিকার সংমিশ্রণে রয়েছে। চীন, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে স্থানীয় ইউরো ইয়ান সাং ট্র্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন ক্লিনিকের টিসিএম চিকিৎসক এমএস ঝাং রুইফেন বলেছিলেন, ‘এটি খুব বিস্তৃত। প্রাচীন পুস্তকেও গুসি বেরির ব্যবহার লিপিবদ্ধ রয়েছে।’

চীনারা গুসি বেরিকে কেবল একটি ফল নয় বরং একটি ঔষধ হিসাবেও দেখেন। এতে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ট্রেস খনিজ। যা অ্যান্টি-এজিং বা বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে থাকে।  টিসিএম ডাক্তারদের মতে, লিভার এবং কিডনির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্যও এই বেরি অনন্য। চীনা মায়েরা সন্তানদের এই বলে গুসি বেরি খাওয়ান যে, ‘ক্যারোটিন থাকায় এটি চোখের জন্য উপকারী। চোখে আর চশমা পরতে হবে না।’

চীনা পুরুষ ও নারীরা তাদের ‘ওল্ড ফায়ার সিম্প স্যুপ’( অল্প আঁচে রান্না করা একটি ঝোল জাতীয় খাবার) রান্নায় কওচি বেরি ব্যবহার করে থাকে। বাড়ির তৈরি মুরগির উপরে লাল খেজুর ও আদার সাথে বেরিও ছিটিয়ে দেয়। আবার ভিটামিনের জন্য ক্রাইস্যান্থেমাম চায়ের ফ্লাস্কে শুকনো গুসি বেরি চুবিয়ে রাখেন।

একজন টিসিএম অনুশীলনকারী ঝাং বলেন, গুসি বেরি অন্যান্য ঔষধির মিশ্রণে ব্যবহৃত হয়। তবে কোন ব্যক্তির জ্বর, প্রদাহ বা গলা ব্যথা, ডায়রিয়া হলে সেই সময়ের জন্য তিনি রোগীকে গুসি বেরি খাওয়া বন্ধ করার পরামর্শ দেন। তিনি আরো বলেন, শরীরে ভালো থাকলে সাধারণত গুসি বেরি সবার জন্য উপযুক্ত।

সময়ের সাথে সাথে বদলেছে গুসি বেরির সংরক্ষণ ও সম্ভবনা। এর স্বাস্থ্য সুবিধা আন্তর্জাতিক গ্রাহকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সুপারফুডের দিকে নজর দিয়ে পশ্চিমারা এশিয়ার দামের প্রায় তিনগুণ দামে কিনছে এই বেরি। এক প্যাকেটের মূল্য ১০ মার্কিন ডলার। চাহিদা মেটাতে নিনাংগশিয়ায় এক বছরে চাষীরা উৎপাদন করে এক লাখ ৮০ হাজার টন তাজা বেরি। গ্রীষ্মে সূর্যের তাপে বেরিগুলি দ্রুত পাকে। ফলে কৃষকদের ফসল সংগ্রহের জন্য দ্রুত কাজ করতে হয়। তবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মান নিয়ন্ত্রণে রেখে বেরি শুষ্ক করা হয়। ব্ল্যাক ফ্রাইডেতে এবছর প্রায় ১৭৯ টন বেরি বিক্রি হয়েছে গোটা চীনে। 

এশিয়ার তরুণ রন্ধনশিল্পীরা তাদের রান্নায় কিছুটা স্থানীয় স্বাদ দেওয়ার জন্য গুসি বেরি ব্যবহার করছেন। বাদ যায়নি ফাস্ট ফুড জায়ান্ট ম্যাকডোনাল্ডস থেকে সিঙ্গাপুরের দ্য স্যুপ স্পুন, হংকং এর ওয়ান হারবার রোড প্রভৃতি নামীদামী রেস্তোরাঁও। এশিয়ার অনেক পরিবার আজও বংশ পরম্পরায় স্যুপ বা চায়ের মধ্যে গুসি বেরির পানীয় পান করেন।

বিবিসি অবলম্বনে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫