সাত সতেরো

বই বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতি

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০২০

মো. আব্দুল হামিদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে নেমে ডিপার্টমেন্টের দিকে যাচ্ছিলাম। এক সহকর্মী সদ্য প্রকাশিত বইয়ের খোঁজখবর জানতে চাইলেন।বেশ ভালো রেসপন্স পাচ্ছি’—জবাবটা তার পছন্দ হলো না। পাঠক প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় আপনি কেন বই লিখবেনএটা ছিল তার মূল জিজ্ঞাসা। শুধু তিনি নন, আজকাল অনেকের কথাতেই এমন ভাবনা প্রতিফলিত হয়। কেউবা বিস্ময়সহযোগে জানতে চান, বই কি আর ১০টা আইটেমের মতোপণ্য’? তাছাড়া তেল-নুন-আটার মতো বইয়ের বিজ্ঞাপন বা প্রচার কতটা যৌক্তিক? স্বঘোষিত, অখ্যাত, উঠতি লেখকরা এমন কী লিখছেন যে তাদের নিয়ে এত মাতামাতি! সেলিব্রেটি, খ্যাতিমান, গুণী বা প্রথিতযশা লেখকেরা দু-চারটা জুতসই বই লিখে কেন যে এদের তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিচ্ছেন নাএমন অসংখ্য বিষয়ে তারা সুযোগ পেলেই উষ্মা প্রকাশ করেন। বিষয়গুলো আমাকে ভাবায়, সম্ভবত আপনাদেরও। তাই বই বাণিজ্যের হালচাল গতিপ্রকৃতি বুঝতে চেষ্টা করেছি। নিবন্ধটি তারই বহিঃপ্রকাশ।

বাঙালির ঝোঁক প্রবণতা চিরকালই লক্ষণীয়। ক্ষেত্রবিশেষে হুজুগ গুজবকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষমতাও অতুলনীয় (পেঁয়াজ লবণকাণ্ড স্মর্তব্য) সিডর, আইলা, ডেঙ্গুর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো জাতি হই উদ্বিগ্ন। রমজান মাসে প্রায় সবাইদীনদারহয়ে যাই। আবার দুর্গা পূজার সময় মণ্ডপগুলোয় পা রাখার জায়গা থাকে না। বাংলা নববর্ষে তীব্র রোদ-গরমে উগ্র মেকআপ নষ্ট হওয়ার ভয়কে জয় করে রাস্তায় নামি। অন্যদিকে ক্রিকেট ম্যাচ জিতলে মধ্যরাতেও উল্লাসে ফেটে পড়ি। এমনকিআন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা গিয়ে মেগা অফারে হাঁড়ি-পাতিল কেনার দৃশ্যও অহরহ চোখে পড়ে। তাহলে বইমেলার মতো এমন সুবোধ নিষ্পাপ আয়োজনে আমরা পিছিয়ে থাকব কেন? আগে শুধু বই আড্ডা বই কেনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও সম্প্রতি তাতে যুক্ত হয়েছে নতুন মাত্রা। সেটা হলো (ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলো একত্র করে হলেও) নতুন বই প্রসব করেলেখকহিসেবে মেলায় উপস্থিতি নিশ্চিত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

যুক্তি, তথ্য বাস্তবতা দিব্যি অগ্রাহ্য করে আমাদের বিশ্বাসগুলো আঁকড়ে ধরে থাকতে পছন্দ করি। যেমন শিক্ষা কোনো পণ্য নয়! আরে বাবা, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, খ্যাতিমান স্কুল, কোচিং সেন্টার, জনপ্রিয় টিউটর শিক্ষাদানের নামে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকার হাতবদল করছে। তবুও আমরা বলছি এটা কোনোপণ্যনয়। বইয়ের ক্ষেত্রেও অধিকাংশের মনে একই রকম ভাবনা কাজ করে। কিন্তু বাস্তবতা সেটাকে আদৌ সমর্থন করে কি? যিনিবেস্ট সেলিং বুককনসেপ্ট নির্দ্বিধায় গ্রহণ করছেন, তিনিও মানতে পারছেন না যে বই একটা পণ্য! আসলে লেখকের আবেগের জায়গাটুকু বাদ দিলে পুরো প্রক্রিয়াটিই বিজনেস। অন্যান্য দ্রব্যাদি যেভাবে বাণিজ্যের উপকরণ হয়, বইয়ের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যতিক্রম হয় না। হয়তো সে কারণেই আমাদের ভালো লাগুক বা না লাগুকবইয়ের ক্রেতারা সাম্প্রতিক কালে পুরো সিস্টেমকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় প্রভাবিত করছে।

মার্কেটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকেনতুন বইহলো অযাচিত পণ্য (Unsought product) সম্ভাব্য ক্রেতারা -জাতীয় পণ্যের ব্যাপারে সাধারণত উদাসীন থাকে। উপযোগ অনুভব প্রয়োজনবোধের ঘাটতির কারণে নিজ উদ্যোগে তারা এসব পণ্য কিনতে চায় না। তবে উপকারিতা বুঝতে পারলে আবার কিনতে কুণ্ঠা বোধ করে না। ফলে অযাচিত পণ্যের বিক্রেতারা ক্রেতাদের কনভিন্স করতে অনেক বেশি চেষ্টা বিনিয়োগ করবেসেটাই যৌক্তিক। বীমা কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে যে চর্চাটা আমরা প্রায়ই দেখে থাকি। তাহলে বই বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা দোষণীয় হবে কেন?

আগের দিনে নতুন একটি বই কীভাবে গ্রহণযোগ্যতা পেত? শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রের সাহিত্যপাতায় প্রিভিলেজ, বিটিভির বই আলোচনায় স্পেস পাওয়া, সংশ্লিষ্ট ম্যাগাজিনগুলোয় রিভিউ প্রকাশ, নামি-বেনামি বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে পুরস্কার বাগানো ইত্যাদি। এগুলোর কোনোটিতেই সাধারণ বা উঠতি লেখকদের প্রবেশাধিকার থাকত না। কিন্তু এখন? ডজন তিনেক টিভির বইবিষয়ক অনুষ্ঠান, মেলা প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে লাইভ সাক্ষাত্কার, সংবাদপত্র-ম্যাগাজিনের বিশেষ পাতায় বইয়ের খবর প্রকাশ প্রভৃতি বিষয় মিডিয়া কাভারেজের আওতা প্রসারিত করেছে। তবে সত্যিকারের বিপ্লব ঘটিয়েছে পাঠকের হাতে থাকা স্মার্টফোন। বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল, সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট, ফেসবুক, ইউটিউবসহ অসংখ্য যোগাযোগ মাধ্যম লেখক-প্রকাশক-পাঠককে একই বিন্দুতে মিলিত করেছে। ফলে সত্যিকার অর্থেই বইমেলা বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর এতে হাওয়া দিচ্ছে রকমারি ডটকমের মতো কিছু গতিশীল ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল।

তবে সবসময়ই যে প্রচার দরকার হয়, তা কিন্তু নয়। গত তিন বছর যে ছেলেটার বই সরবরাহ দিতে রকমারি ডটকম হিমশিম খাচ্ছে, তাকে স্বীকৃত কোনো মিডিয়া স্পেস দিয়েছে? তার কোনো ইন্টারভিউ, এমনকি একটা ফটো দেখেছেন? আমি দেখিনি। এমনকি তার বইমেলায় রাখা যাবে না’—এমনটাও শুনি। তার পরও তার বিক্রির পরিমাণ কমেছে নাকি বেড়েছে? তাকে থামাতে গিয়ে বোধহয় পরোক্ষভাবে তার উপকারই করা হচ্ছে। যারা তার নামও জানত না, তারাও ভাবছেকে এই ছেলেটা; আর সে এমন কী লিখছে যে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে!

প্রসঙ্গে মনে পড়ে, ক্লাস সিক্সে পড়াকালে একদিন পাইলট স্কুলের দেয়ালে দেখলাম সালমান রুশদির ফাঁসি চেয়ে সাঁটানো পোস্টার। তিনিদ্য স্যাটানিক ভার্সেসনামে নাকি একটা বই লিখেছেন, তাই তাকে ফাঁসি হতে হবে। ওই পোস্টারগুলো রুশদির কোনো ক্ষতি করেছিল কিনা জানি না, তবে আমার মতো অনেক কিশোরের মনে তার বইটির নাম চিরতরে গেঁথে গেছে! তাই যুগে যদি কাউকে অপছন্দ করেন, সবচেয়ে ভালো হলোআকারে ইঙ্গিতেও তার নাম মুখে না আনা। তাকে নিয়ে যত কথা বলবেন, অন্তত একটা গোষ্ঠী তার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠবে। তদুপরি, ভাইরালের যুগে কাউকে ঠেকানোর চেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজ করে না।

বাজারের সিংহভাগ দখল করে থাকা তরুণ লেখকদের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ। ঔপন্যাসিক, কথাসাহিত্যিক, গল্পকার, ছড়াকার, কল্পবিজ্ঞানী, শিশুসাহিত্যিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সব্যসাচী লেখক, রম্যলেখক ইত্যাদি বিশেষণ কি কখনো তাদের নামের সঙ্গে মানানসই হবে? আমার মনে হয় না। কারণ তারা নিজেরাই তো এসবতকমাপাওয়ার জন্য উদগ্রীব নন। যে ফর্মুলায় লিখলে ওসবট্যাগযুক্ত হয়, তারা সেগুলোর ধারও ধারছেন না। ফলে আমরা যাকে স্বীকৃতির অযোগ্য বলছি, তারা তো স্বীকৃতির ধারই ধারছেন না! ফলে সাহিত্যজগতের স্বঘোষিত অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ চেষ্টা প্রায় অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। কে, কোন দিক দিয়ে কীভাবে যে পাঠকের মন জয় করে নিচ্ছেন, তা বুঝে ওঠাই এক গোলকধাঁধায় পরিণত হয়েছে।

মার্কেট ট্রেন্ডকে আবার গত্বাঁধা পদ্ধতিতে ব্যাখ্যা করাও যাচ্ছে না। একসময় ভাবা হতো লেখক সেলিব্রেটি হলে তিনি যা লিখবেন তা- চলবে। কিন্তু হুূমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর সে কথা আর খাটছে না। বিশেষ বিষয়ে লিখলে চলবে ভেবে খ্যাতিমান সাহিত্যিকরাও মোটিভেশনাল বই লিখতে চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া পাওয়ায় ব্যর্থ হয়ে এখন পাঠকের নিম্নতম রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো, পাঠক নিজের পকেটের পয়সা দিয়ে কী কিনবে, তার প্রেসক্রিপশন তো আপনি বা আমি দিতে পারি না, তাই না?

তবে হাল আমলে বইয়ের বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য আমাকে মুগ্ধ করছে। স্যুপ খেয়ে রুমাল দিয়ে কীভাবে মুখ মুছতে হয়, সে বিষয়ে ইংরেজি ভাষায় শতাধিক বই রয়েছে। আমরাও গত কয়েক বছরে এমন ধারার সব বই পাচ্ছি। কবিতার বই বেশি ছাপা হলেও এখনো উপন্যাস রয়েছে বিক্রির শীর্ষে। সাদাত হোসাইন, কিংকর আহসান কিংবা মৌরি মরিয়মের মতো তরুণ ঔপন্যাসিকেরা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা বুঝি বেশ ভালোভাবেই পূরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। তাদের লেখার মান বিচারের যোগ্য আমি নই; বেচা-বিক্রির হার দেখে বলছি।

গত কয়েক বছর আত্মোন্নয়নমূলক বই বেশি চললেও এবার হঠাৎ করেই ফ্রি-ল্যান্সিং বা অনলাইনে আয়-রোজগারসংক্রান্ত বইয়ের চাহিদা বেড়েছে। সেলিব্রেটি লেখকরা সেলস ভলিউমের দিক দিয়ে বেশ পিছিয়ে পড়েছেন। এখনকার তরুণরা পড়ে না অভিযোগ করার মাঝখানে হঠাৎ করেতাদের ক্রয় প্রবণতাদেখে অনেকেই বলতে শুরু করেছেনতারা কি অখাদ্য-কুখাদ্য পড়ছে! আসলে বই বাণিজ্যে দুটি ধারা খুব স্পষ্ট। একটা গোষ্ঠী নিজেরা যা ভাবছে, পাঠককে তা জানাতে চায়। অন্যরা পাঠক যা পড়তে চায়, তা লিখে থাকে। বাণিজ্যিক বিশ্লেষণে পরের ধারা জয়যুক্ত হচ্ছে। রকমারি ডটকমের গত সপ্তাহে বিক্রি হওয়া সেরা ২০টি বই বিশ্লেষণ করলে তা সহজেই অনুমেয়। 

গত বছর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে বই বিক্রি হয়েছে ৭০ কোটি টাকার ওপরে। রকমারি ডটকম এবং অন্যান্য অঞ্চলের বইমেলা বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে আরো সমপরিমাণ বা কিছুটা বেশি বই বিক্রি হয়েছেসেটা অনুমান করা যায়। তাহলে বছরের একটি মাসে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার মার্কেট বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশেষ মনোযোগ প্রত্যাশা করতেই পারে। তবে হ্যাঁ, ইদানীং বইয়ের জীবনচক্র খুব ছোট হয়ে গেছে। হাইপ সৃষ্টি করা বই পাচ্ছি। কিন্তু দীর্ঘদিন টিকে থাকার মতো বইয়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে।

আগে শিক্ষক-মা-বাবা নিজেদের ছাত্রজীবনে পড়া বইয়ের নাম সন্তান শিক্ষার্থীদের রেফার করতেন। অথচ এখন অনেক লেখকই তার দুই বছর আগে পাবলিশ হওয়া বইয়ের কথা ভুলে যাচ্ছেন! তাছাড়া সেলিব্রেটি রাইটারের ডেফিনিশনও চেঞ্জ হয়ে গেছে। এখন যাদের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, লোকে তাদের ঠিকমতো চেনেও না! বইমেলায় ধাক্কা লাগলেও তাকে চিনতে পারবে না। কিন্তু ছুটে গিয়ে তার বই কিনছে! প্রবণতায় কি হতাশ হওয়ার কিছু আছে? না, নেই। কারণ তারা বইয়ের কনটেন্ট কিনছে, লেখকের তথাকথিত সেলিব্রেটি ইমেজ নয়।

হাসপাতালে গেলে মনে হয়, দুনিয়ার সব লোকই রোগাক্রান্ত। আবার কোর্টে গেলে ধারণা জন্মে আশেপাশের সব লোক মামলাবাজ। ঠিক তেমনিভাবে ইদানীং ফেব্রুয়ারি এলেই মনে হয়আমার পরিচিত সবার বুঝি বই প্রকাশ হচ্ছে! এতে অনেকেই বিরক্ত। বিশেষত তারকা লেখকরা। তারা হয়তো ভাবছেনআমরা এত্ত ভালো লিখি অথচ সেলফি প্রজন্ম সেগুলো আমলে না নিয়ে সালমান মুক্তাদির, রাবা খান, হিরো আলম আর সোলায়মান সুখন নিয়ে মেতে আছে! কিন্তু সেটা শুধু বই কেন, অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও তো তেমনটা দেখা যায়। দুধ এত উপকারী পণ্য, তবুও বিক্রেতাকে বাড়ির দরজায় পৌঁছে দিতে হয়। অথচ মদ-গাঁজা যারা বেচে, কোনো প্রমোশন লাগে? সাইনবোর্ড থাকে না, নোংরা ঘরে বসে থাকে। তবুও ক্রেতারা তাদের ঠিকই খুঁজে বের করে। তাই পণ্য ভালো বা উপকারী হলেই দেদার বিক্রি হবেসেটা ভাবা মোটেই যৌক্তিক নয়।

তাছাড়া কথিত আছে বিশেষ কারো (শাসক, মিডিয়া, অর্থ-প্রতিপত্তি ইত্যাদির) কৃপা বা অনুগ্রহ নিয়ে যারা লেখক হিসেবে খ্যাতি পায়, তাদের মৃত্যুর পর সর্বোচ্চ ২৫ বছর টিকে থাকে। তাহলে এত ভাবনার কী আছে? আপনি যদি সত্যিই ভালো কাজ করে থাকেন, তবে শেকসপিয়ারকে যেমন মৃত্যুর ৪০০ বছর পরও গোটা দুনিয়া গুরুত্বসহকারে পড়ছে, আপনাকেও পড়বে। আর যদি এদের জনপ্রিয়তা মানতে কষ্ট হয়, তবে বুঝতে হবে আপনিও তাদের মতো সাময়িক খ্যাতির কাঙাল। তাদের কৌশল ক্লিক করেছে, আপনারটা করেনি। তাই নিজেকে ভেঙে আবার গড়ায় মনোনিবেশ করুন। যদিও অনেকেরই মেঘে মেঘে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে...

ইচ্ছা করেই পাঠ্য বা চাকরিলাভসংক্রান্ত বইগুলোকে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করিনি। কারণ সেগুলো অনেকটা প্রেসক্রাইবড ওষুধের মতো। ক্রেতার রুচি, পছন্দ, ভালো বা মন্দ লাগা প্রতিফলনের সুযোগ নেই। ফলে সৃজনশীল বইয়ের বাণিজ্যিক প্রবণতা দেখে আমাদের হতাশ হওয়া উচিত নাকি পুলকিত, সেটাই ছিল আমার ভাবনার বিষয়। প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক নাকি আহমদ ছফাকে বলেছিলেন, নতুন কোথাও গেলে খেয়াল করবে তাদের কাঁচাবাজার আর বইয়ের দোকান। অর্থাৎ তারা কী খায় আর কী পড়ে। তা দেখেই সেই গোষ্ঠী সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা পাবে। আমাদের বই প্রকাশ, পাঠ বিক্রির প্রবণতা কী ঈঙ্গিত করছে বলে আপনার মনে হয়?

প্রকৃতপক্ষে বই বাণিজ্যে সফলতা বা ব্যর্থতা অন্যান্য দ্রব্যের ব্যবসার মতো অতটা সরলরৈখিক নয়। কবি বলেছেন, ‘পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি/মূর্ত্তি ভাবে আমি দেবহাসে অন্তর্যামী!’ ঠিক তেমনিভাবে বইয়ের লেখক ভাবেন তারইউনিক কনটেন্ট’-এর কারণেই মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। পাবলিশার চিন্তা করেন, তিনি বইটা যথাযথভাবে পাবলিশ প্রমোট করেছেন বলেই না জাতি এমন একটা বইয়ের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেল। আর ক্রেতা? সে তো রাজা! ফলে কার অবদানে, কোন বই, কখন, কীভাবে হিট হয়ে যায়, তা বলা সত্যিই মুশকিল।

 

মো. আব্দুল হামিদ: শাবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক মার্কেটিংয়ের সহজপাঠবইয়ের লেখক


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫