কভিড-১৯: আক্রান্ত না হয়েও অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কায় আফ্রিকা

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

আফ্রিকা মহাদেশে এ পর্যন্ত একজনও করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনৈতিকভাবে এশিয়ার পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সাব সাহারা অঞ্চল। কারণ আফ্রিকার বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার এখন চীন। ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর চীনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়বে সারা বিশ্বের বাজারেই। এতে করে তেল ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধাতুর চাহিদা এরই মধ্যে নিম্নমুখী। আর আফ্রিকার বহু দেশের অর্থনীতির প্রাণ নির্ভর করে এসব খনিজ রফতানির ওপর। 

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। এ অর্থনীতির শ্লথগতির কারণে এক বছরের মধ্যে তেলের দাম ৫ শতাংশ কমে গেছে। এর অর্থ সাব সাহারা আফ্রিকা ৪০০ কোটি ডলারের সমান রফতানি রাজস্ব হারিয়েছে। এ অর্থ এ অঞ্চলের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৩ শতাংশ। এশিয়ার বাইরে যে কোনো মহাদেশের তুলনায় এ ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। ওভারসি ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষণায় এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। 

এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান গবেষণা ফেলো দির্ক ভিলেন তে ভেলদে বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে বহু উন্নয়নশীল দেশের চীন নির্ভরতা বাড়ছে। আমদানি ও রফতানি উভয়ক্ষেত্রেই তারা ক্রমেই চীনের ওপর অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এ কারণেই বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করবে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত প্রতিকূল অবস্থা সামাল দেয়ার মতো সক্ষমতা থাকবে এমন টেকসই প্রবৃদ্ধি চাইলে আপনাকে অবশ্যই বৈচিত্র্যের ওপর জোর দিতে হবে। চীনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ফলে যা হচ্ছে- এ ধরনের ধাক্কা খেলে এ বৈচিত্র্যের গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।

এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আফ্রিকার শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ নাইজারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এর প্রধান কারণ বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের দামে নিম্নমুখী প্রবণতা। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির মুদ্রায় চাপ বাড়ছে। যেখানে দেশটির রফতানির ৯০ শতাংশই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল।

চীন থেকে চাহিদা কমে যাওয়ার কারণে অ্যাঙ্গোলা, কঙ্গো এবং জাম্বিয়ার মতো খনিজ নির্ভর অর্থনীতিগুলোকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে।  অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম এ বছর প্রায় ১১ শতাংশ পড়ে গেছে। তামা, লোহার আকরিকের দামও পড়েছে যথাক্রমে ৮ শতাংশ ও ১ দশমিক ৫ শতাংশ। 

এ পরিস্থিতি যে অর্থনীতিকে ভালোই ভোগাবে তা অনুমান করতে পারছে আফ্রিকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। নামিবিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চীনের এ পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দেশটি তাদের হীরক ও তামার এক পঞ্চমাংশই রফতানি করে চীনে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার রিজার্ভ ব্যাংকও। জাম্বিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, কতোটা প্রভাব সেটি সুনির্দিষ্ট করা বলা না গেলেও একটা নেতিবাচক প্রভাব যে আসবে তা নিশ্চিত।

২০০৩ সালে চীনে সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময় কিন্তু আফ্রিকা এতোটা ঝুঁকিতে ছিল না। কারণ ওই সময় চীনা অর্থনীতি বিশ্বব্যাপী এতোটা বিস্তৃতি পায়নি এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এতোটা ঘনিষ্ঠও ছিল না। আর এখন দেশটি বৈশ্বিক জিডিপির ১৮ শতাংশের প্রতিনিধিত্ব করছে। শুধু তা-ই নয় আফ্রিকার একক বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে চীন এখন শিকড় গেড়ে বসেছে।

তবে অনেকে বলছেন, চীনের ভোক্তা ব্যয় ব্যাপকভাবে কমে গেলেও আফ্রিকার অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। বেইজিংভিত্তিক গবেষক লে লিনচ বলেন, চীনা ভোক্তা ব্যয়ে মন্দার কারণে আফ্রিকার অন্য দেশ যারা চীনে আরো বেশি পণ্য রফতানির চেষ্টা করছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, চীনে খাদ্য ও পানীয় খাতে মন্দা দেখা দিলে নামিবিয়ার মাংস, রুয়ান্ডার কফি, কেনিয়ার অ্যাভোকাডো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সাইট্রাস (লেবু জাতীয় ফল) রফতানি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক অর্থনীতিবিদ রাজিয়া খান বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলে এলে আফ্রিকার ঘুরে দাঁড়াতে বেশি সময় লাগবে না। কারণ আন্তর্জাতিক অর্থনীতির উত্থান-পতনের সঙ্গে আফ্রিকার অর্থনীতি একেবারে আনুপাতিক হারে সাড়া দেয় না। 

সূত্র: ব্লুমবার্গ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫