ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে আঞ্চলিক জোটটি।
এ
উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার ইইউর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে শুরু হয়েছে বাজেট-পূর্ববর্তী সম্মেলন।
কিন্তু সম্মেলনের শুরুতেই ট্রিলিয়ন ইউরোর সম্ভাব্য এ বাজেট নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে জোটভুক্ত দেশগুলো।
বিশেষ করে ব্রিটেনের অনুপস্থিতিতে সাত বছর মেয়াদি এ বাজেটে যে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তা দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে ইইউ সদস্যদের।
খবর এএফপি।
সম্মেলনে প্রধান মতানৈক্য দেখা দিয়েছে ‘কৃপণ
ধনী’ ও তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে।
এক
পক্ষ চাইছে, ব্যয় সংকোচন করা হোক।
অন্যদিকে অন্য পক্ষের দাবি, বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হোক বৃহৎ বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখেই।
ইইউর বাজেটে অর্থ নিয়ে সংকট সৃষ্টি নতুন ঘটনা নয়।
কিন্তু এবার এ সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে ব্রেক্সিটের কারণে।
ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ায় আসন্ন ২০২১-২৭ সালের বাজেটে দেশটির কাছ থেকে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ইউরো পাচ্ছে না ইইউ।
কিন্তু তার পরও ব্যয় সংকোচনের মধ্য দিয়ে জোটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট ছেঁটে ছোট করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ।
এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, জোটভুক্ত ২৭ দেশের মধ্যে বাজেট নিয়ে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু জোটের স্বার্থেই এসব বিষয়ে তাদের মতৈক্যে পৌঁছাতে হবে।
মেরকেল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।
কারণ বাজেটে অর্থদাতা দেশেগুলোর সঙ্গে এখন পর্যন্ত যথাযথ আলোচনা হয়নি।
এ বিষয়ে ইউরোপীয় শীর্ষ নেতাদের পরস্পরের সঙ্গে আলোচনায় বসানোর চেষ্টা করছেন ইইউ কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল।
তিনি বলেন, আশা করছি শুক্রবার (গতকাল) নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করা সম্ভব হবে।
আমার বিশ্বাস, পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যেই মতৈক্যের বিষয়ে অগ্রগতি হবে।
উল্লেখ্য, এ বাজেট সম্মেলন সামনে রেখে চার্লস মাইকেল ইইউর ১ দশমিক শূন্য ৯ ট্রিলিয়ন ইউরোর বহুবার্ষিক আর্থিক কাঠামো (এমএফএফ) প্রস্তাব করেছেন।
একই সঙ্গে তিনি বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব করেছেন সংহতি তহবিল ও খামার সহায়তায়, যাতে অন্য গুরুত্বপূর্ণ খাতে অর্থায়ন করা যায়।
এদিকে মাখোঁ চাচ্ছেন, বাজেটে খামারের ভর্তুকিতে হাত না দেয়া হোক।
একই সঙ্গে তিনি ইউরোপীয় প্রতিরক্ষা প্রকল্পে আরো অর্থায়নের পক্ষে।
মাখোঁ বলেন, আমি যেসব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি, সেগুলোর বিষয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মতৈক্যে পৌঁছানোর জন্য যত সময়ই লাগুক আমি অপেক্ষা করব।
তবে সবার সম্মতিতে একটি চুক্তির জন্য লক্ষ্য নির্ধারণের পাশাপাশি সমঝোতাও প্রয়োজন।
তাছাড়া যুক্তরাজ্যের ইইউ পরিত্যাগের ক্ষতিপূরণ হিসেবে বাজেট ছোট কিংবা লক্ষ্য সীমিত করা মেনে নেয়া যায় না।
তার মতো কৃষকদের ভর্তুকি অব্যাহত রাখার পক্ষে মত দিয়েছে স্পেন ও পোল্যান্ডও।
কিন্তু ফিনিশ প্রধানমন্ত্রী সানা মারিন মাখোঁর এ ঔদার্যপূর্ণ প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেন।
তিনি বলেন, ব্রেক্সিটের মধ্য দিয়ে ইইউ তার অন্যতম প্রধান অর্থদাতা দেশকে হারিয়েছে।
ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অর্থ খরচের বিষয়ে আবেগী নয়, বরং বাস্তববাদী হতে হবে।
এবারের বাজেটে বিতর্ক দেখা দিয়েছে বাজেটের আকার বৃদ্ধি নিয়েও।
এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন খাতে কত খরচ হবে কিংবা সদস্য রাষ্ট্রগুলো তাদের জিডিপির কত শতাংশ বাজেটে অর্থায়ান করবে, তা নিয়েও অনৈক্য সৃষ্টি হয়েছে।
পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে গুটিকয়েক ধনী দেশের করায়ত্বে থাকা বাজেট রেয়াত সুবিধা নিয়েও।
এরই মধ্যে অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ বাজেটে ভিয়েনার প্রদেয় অর্থের পরিমাণ যাতে অতিরিক্ত না হয়, সেজন্য নিজের কড়া মত জানিয়ে দিয়েছেন।
একই সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে সমঝোতার প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
সর্বোচ্চ ব্যয় চাহিদার দিক দিয়ে এমএফএফের আকার ১ দশমিক ৩২ ট্রিলিয়ন ইউরোয় সম্প্রসারণ করতে চাইছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
এর
মূলে রয়েছে আগামী তিন দশকের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কার্বন নিরপেক্ষ অর্থনীতিতে পরিণত করার মতো ব্যয়বহুল প্রকল্প।
অন্যদিকে ১ দশমিক ১৩ ট্রিলিয়ন ডলারের বাজেট প্রত্যাশা করছে ইউরোপীয় কমিশন।