সারিন্দা, মৃদঙ্গ আর সানাইয়ের বাজনা শেষ কবে শুনেছেন?

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২০

রাইসা জান্নঠু

সারিন্দা

হারিয়ে যাওয়া দেশজ বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে সারিন্দা অন্যতম সাধারণত মুর্শিদি কেচ্ছা গানের অন্যান্য যন্ত্রের সঙ্গে এটি বাজানো হতো আজ মুর্শিদিও নেই, সারিন্দাও নেই দেড় ফুট লম্বা কাঠ দিয়ে তৈরি যন্ত্রটিতে চামড়ার তিনটি তার যুক্ত থাকে সারিন্দার মাথা ময়ূর কিংবা অন্যান্য পশুপাখির মাথার মতো যেখানে তিনটি কাঠের বলয় রয়েছে এগুলোকে বলা হয় কান চামড়ার তারগুলো মূলত কান থেকে সারিন্দার শেষ প্রান্তজুড়ে আংটা দিয়ে আটকানো থাকে কান ঘুরিয়ে ইচ্ছেমতো সুর নিয়ন্ত্রণ করা হতো সারিন্দার ব্যবহার আজকাল দেখা যায় না বললেই চলে

মৃদঙ্গ

লোকগানের প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র মৃদঙ্গ যন্ত্রটি মাটির তৈরি বলেই এর নাম মৃদঙ্গ বাদ্যযন্ত্রটি দেখতে অনেকটা কলার মোচার মতো যার উভয় পাশেই চামড়ার ছাউনি আর ছাউনির মধ্যখানে লাগানো হয় গাবের গাপ্পি মৃদঙ্গের একটি মুখ (ডান) ছোট, অন্যটি (বা) বড় হয়ে থাকে ফিতার সাহায্যে গলায় ঝুলিয়ে কিংবা মাটিতে রেখে যন্ত্র বাজানো হয় বাংলার গ্রামাঞ্চলে মৃদঙ্গের প্রচলন ছিল বেশি মাটির তৈরি যন্ত্রটির ব্যবহারও ধীরে ধীরে কমছে


খমক বা আনন্দলহরী

খমক বা আনন্দলহরী জারি ভাটিয়ালি গানের অন্যতম একটি বাদ্যযন্ত্র ভক্তিমূলক গানেও যন্ত্র বাজানো হয় কাঠ দিয়ে ঢোলকের আদলে তৈরি বাদ্যযন্ত্রটির একপাশ খোলা আর খোলা অংশ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া সুতার সাহায্যেই মূলত বাজানো হয় যন্ত্র শূন্যপুরাণ মঙ্গল কাব্যেও নাচ-গানের বাদ্য হিসেবে ঐতিহ্যবাহী খমক বাদ্যযন্ত্রটির উল্লেখ রয়েছে

খঞ্জরি

এই তো দিন আগেও বুঝি খঞ্জরির ঝনঝন শব্দ কানে ভাসত লোকসংগীত লোকনৃত্যের বাদ্যযন্ত্র হিসেবে খঞ্জরির ব্যবহার বাংলাসহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছিল খঞ্জরি ডফ নামেও পরিচিত নিম বা কাঁঠাল কাঠের পাতলা চাকতির মতো যন্ত্রটির একটি দিক চামড়া দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় তারপর চাকতির গা জুড়ে নির্দিষ্ট দূরত্বে অনেকগুলো ধাতব পাত লাগানো থাকে ধাতব পাতগুলোর জন্যই ঝনঝন শব্দ হয় চামড়ার ওপর আঙুলের টোকা দিয়ে কখনোবা তালুর আঘাতে তাল সৃষ্টি করা হয়

সানাই

বিয়ের উৎসবে সানাই বাজবে না একথা কয়েক বছর আগেও বুঝি ভাবা যেত না সানাই রাগসংগীতযন্ত্র হিসেবে পরিচিত হলেও যন্ত্রটি লোকসংগীতেও ব্যবহার করা হয় সামাজিক নানা উৎসবেও যন্ত্রের ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো সানাইয়ের মূল কাঠামো মূলত কাঠের তৈরি এটি দেখতে নলের মতো এর এক প্রান্তে দুটি রিডের সেট থাকে রিড দুটি সানাইয়ের মূল অংশের যে প্রান্তে থাকে, সেদিক দিয়েই মূলত শব্দ তৈরি হয় যন্ত্রটির গায়ে সাতটি স্বর তোলার উপযোগী ফুটো থাকে বাদ্যযন্ত্রটি উপরের দিক চিকন এবং নিচের অংশ চওড়া অনেকটা ধুতরা ফুলের মতো এসব বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার এখন আর তেমন নেই


ব্যক্তিগত সংগ্রহে কিছু বাদ্যযন্ত্র থাকলেও এগুলোর দৈনন্দিন ব্যবহার আর দেখা যায় না সময়ের স্রোতে রকম আরো অসংখ্য লোকজ বাদ্যযন্ত্র হারিয়ে গেছে, হয়তো ধীরে ধীরে হারিয়ে যাবে একতারা, দোতারার মতোও অতি পরিচিত বাদ্যযন্ত্র বাদ্যযন্ত্রের হারিয়ে যাওয়ার মানে শুধু এই নয় যে, কিছু যন্ত্র হারিয়ে গেল এসবের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে লোক-ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ, ইতিহাস, সংস্কৃতি সুতরাং পরম্পরা ধরে দেশীয় ঐতিহ্যকে বহন করে চলতে চাইলে লোকসংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ এসব অনুসঙ্গের সংরক্ষণ প্রসার দুটোই সমান জরুরি

 



সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫