শিক্ষার্থীদের ছায়া কূটনীতি চর্চা

প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২০

সালটা ছিল ২০১৩। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী চৌধুরী এমাদ, আরশাদ অর্প, জানিমা যূথীসহ ছয়জন মিলে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলেন। এরপর উদ্যোগ নেন নিজেদের ক্যাম্পাসে এমন একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করার। যাত্রা করে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি মডেল ইউনাইটেড নেশন অ্যাসোসিয়েশন (আরইউমুনা)

প্রথম দিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমন ছায়া কূটনীতিকদের সম্মেলনে কেবল নিজেদের প্রতিনিধি পাঠানো হতো। এরপর ২০১৫ সালে প্রথমবারের মতো আরইউমুনা আঞ্চলিক ছায়া সংসদ আয়োজন করে। যার নাম ছিলনর্থ বেঙ্গল ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলন ২০১৫ শতাধিক শিক্ষার্থী সে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর আর তাদের ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের নিয়ে এখন তারা ছায়া জাতিসংঘ সম্মেলনের আয়োজন করে থাকে। এখন পর্যন্ত তারা চারটি জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। সারা দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও শিক্ষার্থীরা সম্মেলনগুলোয় অংশগ্রহণ করেছেন। ভারত, নেপাল, পাকিস্তান মালয়েশিয়া থেকে প্রতিনিধিরা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার মূল উদ্দেশ্য নিয়ে শিক্ষার্থীদের সফট স্কিল হার্ড স্কিল ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিকস, ব্র্যান্ডিং প্রমোশন, লিডারশিপ, কমিউনিকেশন, পাবলিক স্পিকিং, নেটওয়ার্কিং, ডিপ্লোম্যাসি, নেগোসিয়েশনসহ নানা বিষয়ে দক্ষ করে তুলতে কাজ করছে সংগঠনটি। পাশাপাশি আরেকটি উদ্দেশ্য হলো, রাবি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছায়া জাতিসংঘের সংস্কৃতিটা পরিচিত করিয়ে দেয়া।

গত শতকের মাঝামাঝিতে জাতিসংঘের আদলে ছায়া কূটনীতিকদের সম্মেলন বিশ্বব্যাপী শুরু হয়। যদিও বাংলাদেশে আসে শতকেই। শিক্ষার্থীদের হাত ধরেই দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সংগঠনটির নিয়মিত সদস্য আছে ২৫০-এর মতো। তবে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা থাকে ৪৫০-এর বেশি।

সংগঠনটি কীভাবে কাজ করে জানতে চাইলে আরইউমুনার সভাপতি সাকিব আহমেদ বলেন, শুরুতেই নিয়মনীতি মেনে আমরা নিজেদের একটি সংবিধান তৈরি করি। পরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় তা উন্নত করা হয়। সংবিধান অনুসরণ করে প্রতি সপ্তাহে মক সেশন করে থাকি। জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে যেভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, আমরাও ঠিক সেভাবে সম্মেলন করে থাকি। ভালোভাবে বুঝতে হলে এটা কিছুটা বিতর্কের মতো। বিতর্কে যেমন পক্ষ-বিপক্ষ দুটি দল থাকে। এক্ষেত্রে মকে থাকে বিভিন্ন পক্ষ। তবে ছায়া জাতিসংঘের সেশন হয় তিন-চার দিনব্যাপী। আমরা নিজেদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করে নিই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিল, ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল ইত্যাদি কমিটির আদলে নিজেরা সংগঠিত হয়ে মক সেশন করি। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত শিক্ষার্থীদের নিয়েও আঞ্চলিক জাতীয় সেশন আয়োজন করে থাকি। সেশনগুলোয় দেশের এবং বৈশ্বিক সমস্যা-সংকট তুলে ধরার পাশাপাশি তা থেকে উত্তরণের উপায় সম্ভাবনা উপস্থাপন করা হয়।

পড়াশোনার পাশাপাশি এমন সহশিক্ষামূলক কাজ করার প্রয়োজনীয়তা এবং গুরুত্ব উল্লেখ করে সাকিব বলেন, যেহেতু এখানে চমত্কারভাবে সমস্যা সম্ভাবনা উপস্থাপনের সুযোগ থাকে, তাই চর্চা শিক্ষার্থীদের বহুমুখী চিন্তা করতে শেখায়। এছাড়া পক্ষ-বিপক্ষে দরাদরি, আত্মরক্ষা, সুযোগ সৃষ্টিসহ নানা কূটনৈতিক বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পারদর্শী হয়ে ওঠেন, যা ব্যক্তিগত জীবনেও দক্ষ করে গড়ে তোলে। পাশাপাশি আমাদের সদস্যরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সংযুক্ত হন। শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারের জন্য প্রফেশনাল অ্যাপ্রোচ শিখতে পারেন, যা কাজে লাগিয়ে অনেকে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। অনেকে স্কলারশিপ নিয়ে দেশের বাইরে পড়াশোনা করছেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এমন সুযোগ দিয়ে থাকে।

ভারতের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্বে ভারত একটি ইমার্জিং শক্তি। তাদের যে বিষয়টি আমাদের সামনে ফুটে ওঠে, তা হলো তাদের কূটনৈতিক প্রতিনিধিরা অনেক দক্ষ। এজন্য তারা যখন কোনো দরাদরিতে যান, বেশির ভাগ সময়ই তারা লাভবান হন। ক্ষতির চেয়ে তাদের লাভই বেশি হয়। এক্ষেত্রে শিক্ষাজীবনেই আমরা এসব শিখতে পারছি, যা ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজে লাগবে। ভবিষ্যতে দক্ষ কূটনীতিবিদ তৈরীতে চর্চা অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়।

সম্প্রতি যুক্ত হওয়ার পর পরই বাইরের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনে অংশ নিয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন সংগঠনটির সদস্য রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক। অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করে বললেন, সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় একটি ওয়ার্কশপ করেছি। তিনজন ট্রেইনার গিয়েছিলেন। সেখানে ভালো সাড়া পেয়েছি। আশা করি, অনুপ্রাণিত হয়ে তারাও ভবিষ্যতে ছায়া সংসদ করবেন। যেহেতু বাংলাদেশে ছায়া জাতিসংঘ চর্চার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তাই যতই দিন যাচ্ছে, আমরা আশানুরূপের থেকেও বেশি সাড়া পাচ্ছি।

এতসব সম্ভাবনা থাকলেও পথচলা মোটেও সহজ ছিল না। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ পর্যন্ত আসতে পারা। সমস্যার মধ্যে স্থায়ী কোনো কার্যালয় নেই সংগঠনটির। সেশন করতে হয় বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার কক্ষ বা শ্রেণীকক্ষে। সেশন পরিচালনার জন্য অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগতভাবে পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করতে হয়। সম্মেলনের আয়োজন অনেক ব্যয়বহুল। আবেদন করে রাখার পরও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদন মেলেনি সংগঠনটির।

প্রতি বছরের মতো এবারো ১৯-২২ মার্চ  পঞ্চম জাতীয় সম্মেলন করতে যাচ্ছে আরইউমুনা। সম্মেলন মুজিব বর্ষকে উৎসর্গ করার পরিকল্পনা চলছে বলে জানালেন সংগঠনটির সভাপতি সাকিব আহমেদ। আরইউমুনার হাত ধরে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী দক্ষ কূটনীতিক তৈরির উদ্দেশ্যে প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 

শাহিনুর খালিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫