টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন

নকশা অনুমোদনে রাজউক কর্মকর্তারা ঘুষ নেন ২ কোটি টাকা

প্রকাশ: জানুয়ারি ৩০, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইমারতের নকশা অনুমোদনের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তাদের ৫০ হাজার টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় বলে জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক): সুশাসনের চ্যালেঞ্জ উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণায় তথ্য উঠে এসেছে। ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালনা করেছে টিআইবি।

গতকাল রাজধানীর মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ফাতেমা আফরোজ ফারহানা রহমান গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন। সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক . ইফতেখারুজ্জামান দুর্নীতি রোধে বেশকিছু সুপারিশ করেন। এর আগে ২০০৬ সালে রাজউকের ওপর পরিচালিত টিআইবির গবেষণায় ইমারত নির্মাণে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যক্তি পর্যায়ে নকশা অনুমোদনে ৫০ হাজার থেকে সাড়ে লাখ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে -১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া ১০ তলার বেশি ইমারতের নকশা অনুমোদনে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত ১৫-৪০ লাখ টাকা এবং বিশেষ প্রকল্পের ক্ষেত্রে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে ১৫ লাখ থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

ব্যক্তি পর্যায়ে রাস্তা প্রশস্ত দেখাতে ২০-৩০ হাজার টাকা, ছাড়পত্র অনুমোদনে ১৫-৮০ হাজার টাকা রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার পর্যায়ে -১০ লাখ টাকা পর্যন্ত রাজউক কর্মকর্তাদের ঘুষ দিতে হয়। এছাড়া নকশা অনুমোদনে সময়ক্ষেপণ, সেবায় প্রতারণা হয়রানি, পরিদর্শনে অনিয়ম দুর্নীতি, নকশা বাস্তবায়নে আইন বিধির লঙ্ঘন, প্লট বরাদ্দ, প্লট হস্তান্তর, ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তরসহ একাধিক সেবায় ঘুষ ছাড়া কাজ হয় না।

নথি রক্ষকের কাছ থেকে মালিক নিজে বা দালাল কর্তৃক প্লটের ফাইল দেখানোর ক্ষেত্রে কোনো ফি না থাকলেও -১০ হাজার টাকা, প্রকল্পের আবাসিক ফ্ল্যাটের চাবি হস্তান্তরে ফি না থাকলেও - হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় সেবাগ্রহীতাকে। এদিকে লিজ দলিলে ৩১-৬০ হাজার পর্যন্ত নির্ধারিত ফি থাকলেও ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। প্লটপ্রতি নামজারির নির্ধারিত ফির চেয়ে ১০-৫০ হাজার টাকা, হেবা ফ্ল্যাট প্রতি ৫০-৭৫ হাজার টাকা বিক্রয় অনুমোদনের জন্য ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

রাজউকের প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ও টিআইবির গবেষণায় উঠে এসেছে। বলা হয়েছে, রাজউকে নবম থেকে বিশতম গ্রেড পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে জনবল নিয়োগের কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব, স্বজনপ্রীতি চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে . ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজউক আর দুর্নীতি সমার্থক অর্থেই ব্যবহূত হয়। রাজউক একটি মুনাফা অর্জনকারী লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে কিন্তু জনবান্ধব হতে পারেনি। নিম্ন বা মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য তারা বাসস্থান নির্মাণ করতে পারেনি। কারণ প্রতিষ্ঠানটি অতিলাভের দিকে মনোযোগী। রাজউকের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার ক্ষেত্রে সুশাসনের যে ঘাটতি আমরা চিহ্নিত করেছি, তার মধ্যে অন্যতম হলো জবাবদিহিতাহীন বোর্ড বোর্ডের ব্যবস্থাপনা। রাজউক বর্তমানে যে সংস্কৃতির মধ্যে আছে সেখান থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে আনা বেশ কঠিন বলেও মন্তব্য করেন . ইফতেখারুজ্জামান।

এদিকে রাজউক নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদন প্রকাশে গতকাল সচিবালয়ে নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান গণপূর্তমন্ত্রী রেজাউল করিম। প্রতিবেদনে উল্লিখিত দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, রাজউক নিয়ে টিআইবির প্রতিবেদনটি ভিত্তিহীন, অসত্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে কারো দেয়া ভুল তথ্যের ভিত্তিতে হেয়প্রতিপন্ন করে তারা বাহবা নেয়ার চেষ্টা করছে। এসব অভিযোগের কী ভিত্তি, তারা সুস্পষ্টভাবে বলেনি। এখন থেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য প্রকাশের আগে টিআইবি যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায়। যাতে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫