কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেকর্ড চাহিদা দাম বাড়াবে স্বর্ণের

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৬, ২০২০

বণিক বার্তা ডেস্ক

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ কেনার প্রবণতা অনেকটাই বেড়ে যায়। বিদায়ী বছরেও প্রবণতা বজায় ছিল। ফলাফল হিসেবে ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় মূল্যবান ধাতুটির চাহিদা অর্ধশতকের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছায়। চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণের চাহিদা আরো বাড়তে পারে। এর জের ধরে ২০২০ সালে ক্রমবর্ধমান চাহিদায় নতুন রেকর্ডের সম্ভাবনা রয়েছে। আর বাড়তি চাহিদা বছরজুড়ে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির মূল্যবৃদ্ধিতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের (ডব্লিউজিসি) এক প্রতিবেদনে সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে। খবর কিটকো নিউজ ব্লুমবার্গ।

ডব্লিউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ ২০১৭ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণের সম্মিলিত চাহিদা ছিল ৪০০ টনের কাছাকাছি। তবে ২০১৮ সালে চাহিদা এক ধাক্কায় ৬৫৬ টনে উন্নীত হয়, যা বিগত ৫০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মূলত ওই সময় ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ডলারের দরপতন, শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন, জ্বালানি পণ্যের বাজারে অস্থিরতাসহ বিভিন্ন কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণ কেনার প্রবণতা বেড়ে যায়।

প্রবণতা গত বছরও একই রকম ছিল। ডব্লিউজিসি জানিয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সব মিলিয়ে ৬৮৪ টন স্বর্ণ কিনেছে। সে হিসাবে, এক বছরের ব্যবধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে ২৮ টন। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় মূল্যবান ধাতুটির সম্মিলিত চাহিদায় আগের বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। প্রবণতা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর শেষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণের সম্মিলিত চাহিদা ৭০০ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে।

ডব্লিউজিসির বিনিয়োগ গবেষণা বিভাগের পরিচালক জুয়ান কার্লোস আর্টিগাস বলেন, চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের লাগাম টানতে এরই মধ্যে প্রথম পর্যায়ের চুক্তি সই করেছে চীন যুক্তরাষ্ট্র। এর পরও ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা কাটেনি। অনিশ্চয়তা বাজারের জন্য ইতিবাচক নয়। অনিশ্চয়তা থেকে বিনিয়োগকারীরা মুদ্রা কিংবা শেয়ারবাজারের তুলনায় স্বর্ণের প্রতি বেশি ঝুঁকবেন। ব্যতিক্রম নয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা থেকে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে রাশিয়ার মতো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও স্বর্ণ কেনা বাড়িয়ে দিয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে স্বর্ণের চাহিদা বৃদ্ধির পেছনে ব্রেক্সিট বড় ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউজিসি। ২০১৯ সালজুড়ে ব্রেক্সিট নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা বজায় ছিল। ইস্যুকে ঘিরে যুক্তরাজ্যে সরকার বদল হয়েছে। চলতি বছর বেক্সিট কার্যকরের কথা রয়েছে। এর পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বর্ণের চাহিদা আরো বাড়তে পারে। বাড়তে পারে দামও।

বিষয়ে জুয়ান কার্লোস আর্টিগাস বলেন, আমরা কেউ জানি না, ব্রেক্সিট-পরবর্তী সময়ে আসলে কী ঘটবে। তবে ইউরোপের অর্থনীতিতে আমূল বাঁকবদল দেখা যেতে পারে। ওই সময়টায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো স্বর্ণ কেনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও মূল্যবান ধাতুটিতে আস্থা রাখবেন। সব মিলিয়ে ২০২০ সালজুড়ে স্বর্ণের চাহিদায় চাঙ্গাভাব বজায় থাকতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়তে পারে স্বর্ণের দাম।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে স্বর্ণ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার কমিয়ে আনতে চাইছে ভারত সরকার। দেশটির পরবর্তী জাতীয় বাজেটে উদ্যোগ নিতে আগ্রহী ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশটির সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে স্বর্ণ আমদানিতে ১২ দশমিক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এর পর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবান ধাতুটির দাম প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে ভারতীয় আমদানিকারকদের স্বর্ণ আমদানিতে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। বেড়েছে দামও। এর জের ধরে উৎসবের মৌসুমেও দেশটিতে স্বর্ণের বেচাকেনা খুব একটা বাড়েনি। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে পুরো স্বর্ণ শিল্প। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে শিল্পটি রক্ষায় বিদ্যমান শুল্কহার কমিয়ে আনার কথা ভাবছে ভারত সরকার।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫