অবশেষে স্বীকৃতি মিলন স্যারের

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৫, ২০২০

ক্রীড়া প্রতিবেদক

যাক অবশেষে স্যার নিজের কাজের স্বীকৃতি পাচ্ছেন; এটা আমার কাছে বড় খবর, অনেক আনন্দেরকুল-বিএসপিএ ক্রীড়া পুরস্কারের বার্তা পেয়ে ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে নাজমুন নাহার বিউটির উচ্ছ্বাস। 

সাবেক এ কৃতী অ্যাথলিটের এমন উচ্ছ্বসিত হওয়ার কারণ তার স্যার রফিক উল্যা আখতার মিলনের স্বীকৃতি। বছরের পর বছর ধরে কোনো প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির তোয়াক্কা না করে নিজের খেয়ে কাজ করে চলেছেন এ অ্যাথলিট গড়ার কারিগর। পরম যত্নে উপহার দিয়েছেন দেশসেরা সব অ্যাথলিট। এমন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করে উৎসাহ প্রদানের দায়িত্ব কখনই অনুভব করেনি আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের নীতিনির্ধারকরা। অবহেলিতই থেকে গেছেন দেশসেরা অ্যাথলিটদের প্রিয় মিলন স্যার। 

এ জায়গায় প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ছিল না বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) ১৯৬৪ সাল থেকে ক্রীড়াঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা ব্যক্তিদের পুরস্কৃত করা এ সংগঠনও এতদিন স্বীকৃতি দেয়নি নোয়াখালীকেঅ্যাথলেটিকসের উর্বর ভূমি হিসেবে গড়ার কারিগরকে। এ নিয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত আহমদ আনন্দ বলেছেন, ‘মিলন (রফিক উল্যা আখতার) ভাইয়ের মতো নিবেচিতপ্রাণ সংগঠক ও কোচের স্বীকৃতি আরো আগে পাওয়া উচিত ছিল। কয়েক বছর ধরে মনোনীতদের তালিকায় নিয়মিতই ছিল তার নাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নানা কারণে তিনি চূড়ান্ত তালিকার বাইরে চলে গেছেন। তাকে পুরস্কৃত করতে পারা অনেকটা দায়মুক্তির মতোই।

বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকসকে মিলন যা দিয়েছেন, বিকেএসপি তা আদৌ পেরেছে কিনা, এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে! নাজমুন নাহার বিউটি, শামসুন নাহার চুমকি, সুমিতা রানী, জেসমিন আক্তার, মাহফিজুর রহমান মিঠু, আবু আবদুল্লাহ, মোহাম্মদ শামসুদ্দিনের মতো দেশের অ্যাথলেটিকসের উজ্জ্বল নক্ষত্রগুলো তার হাতেই গড়া। কেবল দেশই নয়, আন্তর্জাতিক আসরও মাতিয়েছেন তার শিষ্যরা। ২০০৬ সালে এসএ গেমস অ্যাথলেটিকস থেকে বাংলাদেশ সর্বশেষ স্বর্ণপদক পায়। সেটা সম্ভব করেছেন মিলনের হাতে গড়া মাহফিজুর রহমান মিঠু।

মিলন নিজেও ছিলেন অ্যাথলিট। ১৯৭৮ সালে আন্তঃবিদ্যালয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতা দিয়ে শুরু করেন। আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের হয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ে সেরা অ্যাথলিটের স্বীকৃতি পান। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত নোয়াখালী সরকারি কলেজের হয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড আয়োজিত প্রতিযোগিতায় টানা তিনবার দ্রুততম মানব হওয়ার কৃতিত্ব দেখান। ১৯৮০ সালে আন্তঃবোর্ড জাতীয় অ্যাথলেটিকস প্রতিযোগিতার লং জাম্পে স্বর্ণজয়ের পথে গড়েন রেকর্ড। ১৯৮১ সালে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে পান একাধিক পদক। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সালের মধ্যে তিনবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দ্রুততম মানব হন। ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অ্যাথলিট হিসেবে খেলেন হাফিজ জুট মিলসের হয়ে। এ সময় বিজেএমসির হয়ে জাতীয় প্রতিযোগিতায় নিয়মিত খেলেছেন। পাশাপাশি খেলেছেন চট্টগ্রাম ফুটবল লিগেও।

২০০২ সালে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের লেভেল-ওয়ান কোর্স, কোচেস এডুকেশন সার্টিফিকেট সিস্টেম কোর্স, অলিম্পিক সলিডারিটি কোর্স সম্পন্ন করেন। খেলাধুলা চর্চা, এ নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায়ও পিছিয়ে নন মিলন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএসএস করেছেন, করেছেন বিপিএড। পেশায় তিনি সোনাপুর ডিগ্রি কলেজে শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে উঠেছে অ্যাথলিট গড়ার প্রতি তার আসক্তি।

নিজের কাজ সম্পর্কে বণিক বার্তাকে অ্যাথলেটিকসের এ স্বপ্ননির্মাতা বলেন, ‘আমি বরাবরই কাজ করতে ভালোবাসি। বাচ্চাদের ধরে নিয়ে এসে ট্রেনিং করাই। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, বিজেএমসি, আনসারের মতো সংস্থাগুলোয় চাকরি করছে আমার অনেক ছাত্রছাত্রী। এতেই আমি প্রাপ্তির আনন্দ পাই।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫