করোনা ভাইরাস সম্পর্কে যা জানা জরুরি

প্রকাশ: জানুয়ারি ২৫, ২০২০

ফিচার ডেস্ক

চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়া রহস্যময় করোনা ভাইরাস নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে নতুন এ ভাইরাস সারা বিশ্বের মানুষের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। গত ডিসেম্বরে প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্তত ৮৩০ জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির সরকার। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সচেতনতার বিকল্প নেই।

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে গত ডিসেম্বরে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয়, এরপর তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞরা ধরণা করছেন, বিষধর চাইনিজ ক্রেইট বা চাইনিজ কোবরা করোনা ভাইরাসের মূল উৎস হতে পারে। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে উহানের বাস, পাতাল রেল ও ফেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া উহান থেকে বিদেশগামী বিমান ও ট্রেন চলাচল বাতিল করা হয়েছে। এতকিছুর পরও করোনা ভাইরাস চীনের পাশাপাশি জাপান, থাইল্যান্ড, হংকং, ভিয়েতনাম, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ছড়িয়েছে। যুক্তরাজ্যেও ১৪ জনকে আক্রান্ত সন্দেহে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। যদিও বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এখনই বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা জারির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছে। ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারণে বৈশ্বিক বাজারে ভ্রমণ ও বাণিজ্যিকভাবে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে এশিয়ার শেয়ারবাজারেও পতন দেখা দিয়েছে।

 

করোনা ভাইরাস

করোনা ভাইরাস ভাইরাসেরই একটি পরিবারের সদস্য, যা শ্বাসযন্ত্রের প্রক্রিয়ায় সংক্রমণ ঘটায়। নতুনটিসহ সাতটি করোনা ভাইরাস রয়েছে। ডব্লিউএইচও অস্থায়ীভাবে নতুন এ ভাইরাসের নাম দিয়েছে২০১৯-এনসিওভি। ২০০২ ও ২০০৩ সালে মারাত্মক প্রাদুর্ভাবের পেছনে সার্স (সেভার অ্যাকিউট রিসপাইরেটরি সিনড্রোম) করোনা ভাইরাস ছিল। সার্সে প্রায় নয় হাজার মানুষ আক্রান্ত হয় এবং এর মধ্যে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়। সার্স প্রাদুর্ভাবের এক দশক পর ২০১২ সালে মার্স (মিডল ইস্ট রিসপাইরেটরি সিনড্রোম) প্রাদুর্ভাব শুরু হয়, যা এখনো চলমান। মার্স ভাইরাসে ২ হাজার ৪৯৪ জন আক্রান্ত হয়, এর মধ্যে মারা যায় ৮৫৮ জন, যার বেশির ভাগ ঘটনা ঘটে আরব উপদ্বীপে। উহানের নতুন করোনা ভাইরাস এ ভাইরাসগুলো থেকে আলাদা, তবে আগে কখনো এর প্রাদুর্ভাব মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি।


 

করোনা ভাইরাস কতটা মারাত্মক?

করোনা ভাইরাস কতটা প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, তা আসলে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আপনি যদি আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা (৮৩০), ছড়িয়ে পড়ার দ্রুততা এবং এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা (২৬) তুলনা করেন, তাহলে সহজেই অনুমেয় যে, এটা কতটা মারাত্মক! সবচেয়ে বেশি ভয়াবহতা এ ভাইরাসের ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা। বলা হচ্ছে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে তো বটেই, হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমেও এ ভাইরাস ছড়াতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, করোনা ভাইরাসের উত্পত্তিস্থল উহানের সিফুড বাজারের সঙ্গে যুক্ত। ভাইরাসটি কোনো প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে স্থানান্তর হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১ জানুয়ারি থেকে উহান বাজার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও এ ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ মানুষ থেকে মানুষে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে।


 

করনো ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে...

বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন কীভাবে ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে এবং কীভাবে ছড়িয়ে পড়া রোধ করা যায়, তা বের করার। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার কথা বলা হলেও ভাইরাসটি কীভাবে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে স্থানান্তর হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। উহানের অসুস্থ রোগীদের যত্ন নেয়ার কাজে যুক্ত ১৫ জন স্বাস্থ্যকর্মীও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ভাইরাসটি যদি হাঁচি-কাশির মাধ্যমেই ছড়িয়ে থাকে, তবে মুখের মাস্ক অবশ্যই কিছুটা সুরক্ষা দেবে। যদিও মাস্কের ধরনের বিষয়টিও এখানে যুক্ত। শ্বাসকষ্টের ভাইলযুক্ত ফেসমাস্কগুলো কাগজের সার্জিক্যাল মাস্কগুলোর চেয়ে বেশি কার্যকর। যেহেতু হাঁচি-কাশির ফোঁটাগুলো বাতাসে ভেসে অন্য মানুষকে স্পর্শ করে, তাই ঘনঘন হাত ধোয়াও কার্যকর হতে পারে।

এছাড়া সম্প্রতি চীন ভ্রমণ করে থাকলে অবশ্যই কোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করে নিতে হবে। পাশাপাশি অসুস্থ মানুষদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। করোনা ভাইরাসের লক্ষণ সর্দিজ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, কাশি ও শরীরে অস্বস্তি বোধ হওয়ার মতো কিছু মনে হলে দ্রুত হটলাইনে যোগাযোগ করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এ ভাইরাসের উপসর্গগুলো অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। যেহেতু এখন পর্যন্ত ২০১৯-এনসিওভি ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা বা ভ্যাকসিন নেই, তাই সতর্ক থাকা ও সাবধানতা অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই।

বৃহস্পতিবার এমআরএনএ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক মোদার্না ঘোষণা দিয়েছে, নতুন এ ভাইরাসের জন্য একটি ভ্যাকসিন তৈরির কাজ শুরু করতে তারা কোয়ালিশন ফর ইপিডেমিক প্রিপার্ডনেস ইনোভেশন থেকে অনুদান পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এ স্ট্রেনের বিরুদ্ধে একটি ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন। যেভাবে করোনা ভাইরাস রুখতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, তাতে কয়েক মাসের মধ্যে পরীক্ষামূলক কিছু ভ্যাকসিন প্রস্তুত হতে পারে। যদিও ব্যাপক ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আরো সময় লাগবে।

ভ্যাকসিন বা চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটির বিস্তার সীমাবদ্ধ করতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলো এরই মধ্যে ভ্রমণকারীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছে। এছাড়া বাংলাদেশসহ অনেক দেশ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিহ্নিত ও আলাদা করতে কিছু স্বাস্থ্য সংস্থা ও হাসপাতালে রোগীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।

 

সূত্র: সিএনএন ও ফোর্বস


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫