গ্র্যাজুয়েটদের নতুন চ্যালেঞ্জ: চাকরির সাক্ষাৎকার নিচ্ছে এআই

প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯, ২০২০

বণিক বার্তা অনলাইন

বিভিন্ন কোম্পানির চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার জন্য এখন সারা বিশ্বেই বহু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই থার্ড পার্টি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন অনলাইনেও প্রার্থীর লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকার নিয়ে থাকে। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। নিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো এখন সীমিত আকারে হলেও প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিচ্ছে এআইয়ের মাধ্যমে। এতে বিশেষ করে যারা সদ্য গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে চাকরির সন্ধানে নেমেছেন তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। প্রশ্নের উত্তর দেয়ার ধরন ও অঙ্গভঙ্গি পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন করে প্রার্থীকে স্কোর দেয় এআই। এআইয়ের এ মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানাটা জরুরি হয়ে পড়েছে, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি।

ইউনিলিভারের মতো বহুজাতিক কোম্পানিও এখন এআইয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে অধিকাংশ কোম্পানি এ পদ্ধতিকেই  অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার উদ্যোগও নিচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটি, পুর্ডো ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা অন্যতম। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার কাউন্সেলররা খুঁজে বের করেন কোন কোন কোম্পানি চাকরির সাক্ষাৎকারের জন্য এআই ব্যবহার করছে। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এসব নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন। এসব এআইয়ের অ্যালগরিদমের কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে কেমন প্রস্তুতি নিতে হবে সে বিষয়েও পরামর্শ দেন। 

চাকরির প্রস্তুতি পদ্ধতিতে এ বৈপ্লবিক পরিবর্তনটি আসতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে ইন্টার্নশিপ এবং  এন্ট্রি লেভেলের পদগুলোতে কর্মী নিয়োগের জন্য তৃতীয় কোনো কোম্পানিকে নিয়োগ দিচ্ছে। এতে তাদের সময় ও ব্যয় দুটোই কমছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি নিয়োগ কোম্পানি হলো হায়ারভিউ। এর খুব দ্রুত বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর ভিডিও ইন্টারভিউ নেয়ার সক্ষমতা রয়েছে।

হায়ারভিউয়ের সঙ্গে কাজ করার পদ্ধতি হলো, কোম্পানির হায়ারিং ম্যানেজার তাদের কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন আগেই রেকর্ড করে তাদের কাছে পাঠান। প্রার্থীকে তার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপ ক্যামেরার সামনে বসে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। ক্যামেরায় এটি খেয়াল করে এআই। এর অ্যালগরিদম সাক্ষাৎকারে খুঁটিনাটি বিষয় পর্যবেক্ষণ করে যেমন: শব্দ ও ব্যাকরণের ব্যবহার, মুখভঙ্গি এবং প্রার্থীর কণ্ঠস্বরের ওঠানামা। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে এআই ওই প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব ও বৈশিষ্ট্য বুঝার চেষ্টা করে। এই বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করেই এআই বলে দেয় এ প্রার্থী কাজটির জন্য আগ্রহী, ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত অথবা দলবদ্ধভাবে কাজ করার যোগ্য কি না।

ভবিষ্যতে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে এআইকে মানুষের বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর নানা চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে প্রচুর লেখালেখিও হয়েছে। তবে হায়ারভিউ যে ধরনের সেবা দিচ্ছে এ ধরনের বিষয় নতুন উদ্বেগেরও জন্ম দিচ্ছে। চাকরিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হয়ে উঠছে এআই। সম্ভবত কোনো কোম্পানিই নির্বাহী বা এ ধরনের উচ্চতর পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এআইয়ের সহায়তা নেয়ার জন্য প্রস্তুত নয়। এ কারণে এখন মূলত নিচের স্তরে বা এন্ট্রি লেভেল এবং ইন্টার্নশিপের ক্ষেত্রে নিয়োগে এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে। এর মানে হলো সদ্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা শিক্ষার্থীরাই গিনিপিগে পরিণত হচ্ছেন। যেখানে চাকরিপ্রার্থীর এ বাছাই প্রক্রিয়া এখনো প্রমাণিত নয়। 

কিছু নিয়মনীতি ও কোম্পানি বিধির কারণে বিষয়টি আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ প্রার্থী জানতে পারছেন না এআই কখন কীভাবে তার সাক্ষাৎকারটি মূল্যায়ন করছে। এ ধরনের অস্পষ্টতা নতুন গ্র্যাজুয়েট ও অন্য চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। 

আটটি সাক্ষাৎকার দিয়ে মাত্র একটিতে টিকেছেন ডিউক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সারাহ আলী

ডিউক ইউনির্ভার্সিটির আন্ডার গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী সারাহ আলীরও এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে। তিনি হায়ারভিউয়ের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও মার্কেটিং বিভাগে ইন্টার্নশিপের জন্য আটটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এর মধ্যে মাত্র প্রথম সাক্ষাৎকারটিতে মার্কেটিংয়ে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পান তিনি। বাকিগুলোতে তাকে আর ডাকা হয়নি। তিনি এখনো বুঝে উঠতে পারছেন না এ ধরনের সাক্ষাৎকারে এআই কী ধরনের ভূমিকা রাখে।

তবে এ অভিজ্ঞতা থেকে সারাহ বুঝেছেন, এআই সাক্ষাৎকারের সময় অনেকগুলো বিষয়ে ভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী সাক্ষাৎকারে কথা বলতে হবে। যেমন: এআই অ্যালগরিদমের পছন্দমতো শব্দ ও বাক্যাংশ (ফ্রেইজ) ব্যবহার করতে হবে, ক্যামেরার দিকে সরাসরি তাকাতে হবে। তিনি বলেন, যখনই আমি বুঝবো যে এ সাক্ষাৎকার নিচ্ছে কোনো এআই, নিশ্চিতভাবে একটা কম্পিউটার গেম ভাবতে শুরু করবো। এভাবে তার কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য ও বাচনভঙ্গি দেখাতে সক্ষম হবো। 

সীমাবদ্ধতা জানা সত্ত্বেও বড় বড় কোম্পানি এখন এআই সাক্ষাৎকারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। থার্ড পার্টি নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে পরিচিত প্রতিষ্ঠান হায়ারভিউ। প্রায় ৮০০টি কোম্পানি তাদের ক্লায়েন্ট। প্রতি ৯০ দিনে প্রায় ১০ লাখ লোকের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় বলে জানান কোম্পানির সিইও কেভিন পারকার।

তিনি জানান, এ বছর তারা সম্ভবত ১০ লাখ কলেজ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। পারকার জানান, ভিডিও ইন্টারভিউতে এআই ব্যবহার তারা শুরু করেন ২০১৪ সালে। এই মুহূর্তে ঠিক কতো সংখ্যক কোম্পানি এ পদ্ধতি ব্যবহার করছে পারকার সে পরিসংখ্যান দিতে রাজি না হলেও কোম্পানির সূত্রে জানা যায়, বেশ কয়েকটি কোম্পানি এ সেবা নিচ্ছে। এর মধ্যে ইউনিলিভারসহ ফরচুন ৫০০ তালিকার একাধিক কোম্পানিও রয়েছে। 

ইয়োবস এবং টালভিউসহ আরো কয়েকটি কোম্পানি এখন এআই ভিত্তিক ভিডিও ইন্টারভিউ সেবা দেয়। তাদের মতো হায়ারভিউও মনে করে, বিপুল সংখ্যক মানুষের মধ্য থেকে যোগ্য প্রার্থীকে বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এর চেয়ে কার্যকর ও দ্রুত পদ্ধতি আর হতে পারে না!

মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে পারকার বলেন, এআইয়ের অ্যালগরিদম প্রার্থীর শব্দচয়ন, উচ্চারণ এবং মুখভঙ্গির মতো কিছু বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রার্থীর নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেয়। এ বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করেই নির্দিষ্ট চাকরির প্রতি প্রার্থীর একাত্মতা ও শেখার আগ্রহ যাচাই করা হয়। এ ধরনের মূল্যায়ন পদ্ধতি মূলত এন্ট্রি লেভেলের পদের জন্য প্রয়োগ করা হয়। কারণ এ ধরনের প্রার্থীর চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকার কারণে কাজের অতীত ইতিহাস জানা যায় না। প্রার্থীর সক্ষমতা ও মেধা যাচাইয়ের জন্য এআই খুব কাজের জিনিস বলেই মনে করেন পারকার।

২০ থেকে ২৫ মিনিটের সাক্ষাৎকার শেষে প্রার্থীকে একটি স্কোর দেয় এআই। সেটি ক্লায়েন্টকে পাঠানো হয়। প্রার্থীকে দেয়ার জন্যও একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তবে প্রতিবেদনটি তাকে দেয়া হবে কিনা সেটি নির্ভর করে ক্লায়েন্টের ইচ্ছের ওপর।

সিএনএন অবলম্বনে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫