মন্দার বাজারে কৌশলী বিনিয়োগ

প্রকাশ: জানুয়ারি ১৯, ২০২০

বিনিয়োগ মানেই ঝুঁকি। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে এ আপ্তবাক্য মেনেই লগ্নি করতে হয়। আজ নয়তো কাল বাজারে ধস নামতেই পারে। অতীতেও এমনটা বহুবার ঘটেছে। তাই বলে কি একজন বিনিয়োগকারী নিজেকে নিয়তির হাতে সমর্পণ করে বসে থাকবেন? সম্ভাব্য ধসের নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজের সম্পদকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য তার কি কিছুই করার নেই?

আসলে তা নয়। বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী নিজের কষ্টার্জিত সম্পদ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন। সুতরাং তার সম্পদের সুরক্ষার ব্যবস্থা তাকেই নিতে হবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো হয়তো বাজারের উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু ধসের কারণে তিনি যে পরিমাণ সম্পদ হারাবেন, তা তো আর ফেরত দেবে না। কাজেই সম্ভাব্য সব পরিস্থিতির জন্যই নিজেকে প্রস্তুত রাখা একজন বিনিয়োগকারীর জন্য বিচক্ষণতার পরিচায়ক।

শেয়ারবাজার অনেকটা বহমান নদীর মতো। কখনো কখনো এটি নিজেই নিজের গতিপথ নির্ধারণ করে নেয়। কখনো আবার বাহ্যিক কিছু প্রভাবকের কারণে বাজারের স্বাভাবিক প্রবাহ রুদ্ধ হয় এবং বিনিয়োগকারীদের মাথায় হাত দেয়ার উপক্রম হয়। বাঁধ বসিয়ে নদীর গতিপথ বন্ধ করে দিলে যেমন উজানে বন্যা হয়ে দুকূল ভাসিয়ে নিয়ে যায় আর তাতে কৃষকের কষ্টের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শেয়ারবাজারের ক্ষেত্রেও ঠিক তা-ই। বন্যা এড়ানোর মাধ্যমে কৃষকের ফসল বাঁচাতে যেমন নদীর গতিপথ ঠিক রাখা জরুরি, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শেয়ারবাজারের স্বাভাবিক আচরণ নিশ্চিত করা তেমনটাই আবশ্যক। তবে এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি বিনিয়োগকারীর নিজেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। কিছু পদক্ষেপ নিলে তারা বড় ধরনের বাজার ধসের হাত থেকে নিজেদের সম্পদ কিছুটা হলেও বাঁচাতে পারেন।

পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনুন

সম্ভাব্য বাজারধস যেন আপনার সব পুঁজি কেড়ে নিতে না পারে, সেজন্য নিজের পোর্টফোলিওতে বৈচিত্র্য আনুন। ভিন্ন ভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করুন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হয়ে দাঁড়াতে পারে আপনার বয়স ও ঝুঁকি গ্রহণের সক্ষমতা। আপনি সরাসরি কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন নাকি মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডে বিনিয়োগের মতো পরোক্ষ কৌশল অবলম্বন করবেন, তা সম্পূর্ণভাবেই আপনার ওপর নির্ভর করছে। তবে বাজারে মন্দার আশঙ্কা তৈরি হলে অবশ্যই আপনার উচিত হবে মোট পুঁজির কিছু অংশ এমন খাতে বিনিয়োগ করা, যা আপনার কাছে তুলনামূলক নিরাপদ বলে মনে হবে। এক্ষেত্রে চলতি বাজারে আপনি হয়তো প্রত্যাশামাফিক রিটার্ন   না-ও পেতে পারেন, কিন্তু ধস নামলে অন্তত সব পুঁজি হারাবেন না।

সময় থাকতে বেরিয়ে আসুন

যখন বাজারে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়, তখন বেশির ভাগ প্রফেশনাল ট্রেডারই তাদের বিনিয়োগ তুলে নেন। বাজারে ধসের লক্ষণ দেখামাত্র আপনিও তেমন করতে পারেন। বাজার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে—এমন আশায় বসে না থেকে দর কমতে থাকা শেয়ারগুলো ছেড়ে দিন এবং নগদ টাকা নিয়ে বসে থাকুন। দাম আরো পড়ে গেলে ওইসব শেয়ারই আবার কিনতে পারেন। পরে বাজার ঊর্ধ্বমুখী হলে এসব শেয়ার থেকে আপনি ভালো রিটার্ন পাবেন।

গ্যারান্টেড সিকিউরিটিজে কিছু বিনিয়োগ রাখুন

আপনি হয়তো সবসময় গ্যারান্টেড সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে চাইবেন না। কারণ এসব বিনিয়োগে বেশি মুনাফা পাওয়া যায় না। কিন্তু আপনার মোট বিনিয়োগের অন্তত ক্ষুদ্র একটি অংশ এমন সিকিউরিটিজে রাখুন, যেগুলোর দর বাজারের সঙ্গে পতনমুখী হবে না। আপনি যদি স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগের নীতিতে বিশ্বাসী হন, তাহলে ট্রেজারি সিকিউরিটিজ, সার্টিফিকেট অব ডিপোজিট ইত্যাদি আপনার জন্য ভালো বিনিয়োগ হতে পারে। আর যদি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগে বিশ্বাসী হন, তবে করপোরেট বন্ড অথবা ব্লু চিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ করুন। এগুলো আপনাকে তুলনামূলক কম ঝুঁকিতে রাখবে।

ঋণ পরিশোধে নজর দিন

শেয়ার বিনিয়োগের জন্য যদি আপনার ঋণ নেয়া থাকে, আর যদি বাজারধসের কোনো লক্ষণ দেখা যায়, তবে বিনিয়োগের সবটুকু বা অংশবিশেষ তুলে নিয়ে সে টাকায় ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করুন। বিশেষ করে উচ্চসুদের ঋণ পরিশোধের দিকে নজর দিন। সংকটের মুহূর্তে এটি হবে উত্তম সিদ্ধান্ত। মন্দার বাজারে এটি আপনার ব্যালান্স শিটকে কিছুটা হলেও স্থিতিশীল রাখবে।

মোদ্দাকথা হলো, আপনি হয়তো বাজারধসের প্রভাব পুরোটা এড়াতে পারবেন না। কিন্তু সঠিক কিছু সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আপনার লোকসান কিছুটা কমাতে পারবেন। বাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। ঊর্ধ্বমুখী বাজারের ফায়দা উঠিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মন্দার বাজারে নিজের লোকসান সীমিত রাখাটাই বিচক্ষণ বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত। তবে সবসময়ই যে বাঁধাধরা নিয়ম মেনে চলতে হবে, তা নয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারলে ধসের ধাক্কা কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ইনভেস্টোপিডিয়া অবলম্বনে শরিফুল আলম শিমুল


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫