গাজীপুরের মহাসড়ক যেন ময়লার ভাগাড়

প্রকাশ: জানুয়ারি ১৭, ২০২০

হাজিনুর রহমান শাহীন গাজীপুর

দূষিত পরিবেশে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

গাজীপুরে শোধনাগার না থাকায় কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের পাশে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিশেষ করে ওই দুই মহাসড়কে প্রতিনিয়ত চলাচলকারী আশপাশের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন অধিক ঝুঁকিতে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় কয়েক বছর ধরেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ৩০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে বর্জ্যের ভাগাড়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা, হাসপাতাল বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলা হচ্ছে মহাসড়কের পাশে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার তেলিপাড়া, সালনা, গাজীপুর সদর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর, ভবানীপুর, হোতাপাড়া, শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী, এমসি বাজার, জৈনা বাজার এলাকায় বর্জ্যের বিশাল স্তূপ রাখা হয়েছে। এছাড়া শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী এলাকায় মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বর্জ্য। অন্যদিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কড্ডা বাইমাইল এলাকায়ও ময়লার ভাগাড় চোখে পড়েছে। জয়দেবপুর বাইপাস-মীরের বাজার সড়কের ঝাঝর, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মরকুন এলাকায়ও মহাসড়কের পাশে নিয়মিত ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। এসব বর্জ্যের কারণে আশপাশের এলাকার বাতাস দূষিত হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের উত্কট গন্ধে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সালনা এলাকার বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম বলেন, একসময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াতাম। এখন আর সেই পরিবেশ নেই। মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের দুর্গন্ধে হাঁটা তো দূরের কথা বমি চলে আসে।

বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ বলেন, আমার বাড়ি বগুড়ায়। প্রতি সপ্তাহে আমি বাড়িতে যাই। গাজীপুর শহর থেকে বেরোলেই কড্ডা এলাকায় মহাসড়কের পাশে রাখা বর্জ্যের কারণে গাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক যাত্রী দুর্গন্ধের কারণে গাড়িতেই বমি করেন।

গাজীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু নাছের জানান, জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে এমসি বাজারে বর্জ্যের স্তূপ তৈরি করা হয়েছে। গভীর রাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে বর্জ্য এনে এখানে রাখা হয়। এসব বর্জ্যের কারণে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

আলম এশিয়া পরিবহনের চালক মফিজুল ইসলাম জানান, কিছুদিন আগেও মহাসড়কে গাড়ি চালানোর সময় সড়ক বিভাজনে ফুটে থাকা ফুলের ঘ্রাণ পেতাম। তখন সড়কের উন্নয়ন নিয়ে যাত্রীরা সরকারের প্রশংসা করতেন। এখন বর্জ্যের দুর্গন্ধে গাড়ি চালাতেই ইচ্ছা করে না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) গাজীপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক হাসান ইউসুফ খাঁন বলেন, পৃথিবীর কোনো সভ্যদেশে এভাবে সড়কঘেঁষে বর্জ্য ফেলার নজির নেই। হাজার কোটি টাকা খরচ করে জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকার সড়কের উন্নয়ন করলেও বর্জ্যের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। খোলা স্থানে এভাবে বর্জ্য ফেলায় পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে, তেমনি সংক্রামক ব্যাধি ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

বিষয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখা স্বস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এতে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগজীবাণু ছড়াচ্ছে। এসব বর্জ্যে অনেকডাস্ট পার্টিকলরয়েছে, যা বাতাসে ওড়ে। আমরা আবার তা শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করি। ফলে আমাদের ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে, নানা ধরনের রোগবালাই বাড়ছে। আমাদের ফুসফুস একটি নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্তডাস্ট পার্টিকলগ্রহণ করতে পারে। এর চেয়ে বেশি হলেই আমরা রোগে আক্রান্ত হই। এছাড়া এসব বর্জ্য থেকে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগ ছড়াতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি রয়েছে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস ফুসফুস ক্যান্সারের। কাজেই এভাবে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা-আবর্জনা বা বর্জ্য ফেলে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ময়লা সবসময় ঢেকে পরিবহন করা উচিত। একটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ম অনুযায়ী ডাম্পিং করতে হবে। বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো সচেতন হতে হবে।

গাজীপুর সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইফুদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে রাখা সত্যিই দুঃখজনক। আমরা কোনোভাবেই এটা বন্ধ করতে পারছি না। কাজে আমরা অনেকটা ব্যর্থ। সরকারের প্রতিটি দপ্তরের সভায় সড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ফল পাওয়া যায়নি।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সালাম সরকার বলেন, মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধে আমরা এরই মধ্যে সিটি করপোরেশন বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি পাঠিয়েছি।

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম সোহরাব হোসেন জানান, গাজীপুরে আগে থেকেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ছিল না। এজন্য কল-কারখানাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য মহাসড়কের পাশে রাখা হয়েছে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অচিরেই মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫