বিজ্ঞান চর্চার জন্য আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ গবেষণাগারের বিকল্প নেই। একজন গবেষককে তার গবেষণার জন্য নানা রকম যন্ত্রপাতির সাহায্য নিতে হয়। এসব ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি একক কোনো ব্যক্তির পক্ষে সংগ্রহ করা দুঃসাধ্য। এজন্য গবেষণার যাবতীয় সহায়ক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ একটি গবেষণাগার হতে পারে গবেষকদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত ‘ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র’ এমন একটি গবেষণাগার, যেখানে বিজ্ঞানের সব শাখার গবেষকদের জন্য রয়েছে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। বলা হয়, এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান গবেষণাগার। গবেষণা কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয়েছে প্রয়াত পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার নামানুসারে।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ গবেষণা কেন্দ্রের ভবনটি ছয়তলাবিশিষ্ট। এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অত্যাধুনিক ২৫টি যন্ত্র। এর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গেল ক্রিস্টাল এক্স-রে ডিফ্রাকশন, পাউডার এক্স-রে ডিফ্রাকশন, অ্যাটমিক অ্যাবজর্পশন স্পিক্টরোফটোমিটার, হাই পারফরম্যান্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি সিস্টেম (এইচপিএলসি), এফটিআইআর
ইত্যাদি।
গবেষণা কেন্দ্রটিতে বর্তমানে পরিচালক হিসেবে আছেন প্রখ্যাত পদার্থবিদ ড. এএ মামুন। গবেষণা কেন্দ্রের সার্বিক বিষয়ে আলাপকালে ড. মামুন বলেন, আমাদের গবেষণা কেন্দ্রটিতে জাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও বাংলাদেশের যেকোনো বিজ্ঞান গবেষকের গবেষণার সুযোগ রয়েছে। আমরা চাই, কেন্দ্রটির মাধ্যমে সারা দেশের গবেষকরা উপকৃত হোক। এর আগে বাংলাদেশে এত বড় গবেষণাগার ছিল না। এটিকে আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, যেন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বিজ্ঞান গবেষণার জোয়ার সৃষ্টি হয়।
গবেষণা কেন্দ্রে নতুন কী সংযোজন হচ্ছে জানতে চাইলে ড. মামুন বলেন, আমরা নতুন তিনটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করতে যাচ্ছি। সেগুলো হলো কম্পিউটেশনাল সায়েন্স, সাইবার সিকিউরিটি ও রোবোটিকস। কম্পিউটেশনাল সায়েন্স হচ্ছে অ্যাডভান্স কম্পিউটিং দক্ষতা, যা মডেল ও সিমুলেশনের উন্নয়নের মাধ্যমে জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারে। সাইবার সিকিউরিটির আন্ডারে আমরা কাজ করব কীভাবে, সাইবার জগতে অপরাধপ্রবণতা প্রতিরোধ করা যায় এবং তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে। আর রোবোটিকস নিয়ে আমাদের গবেষণা হবে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকেন্দ্রিক। ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট আমাদের গবেষণার আওতায় থাকবে না।
নতুন তিন প্রজেক্টের অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম্পিউটেশনাল সায়েন্সের কাজের জন্য এরই মধ্যে কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আনা হয়ে গেছে। আর সাইবার সিকিউরিটি ও রোবোটিকস নিয়ে আমরা সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে তাই দ্রুত কাজগুলো করতে পারছি না। এখানে মাত্র তিনজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রয়েছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। ইউজিসির কাছে আমরা আবেদন করেছি, যেন আমাদের জনবল বাড়ানো হয়।
এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। বাংলাদেশও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে এমনটাই আশা ড. এএ মামুনের।