আফগান অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা

জাফরান

প্রকাশ: জানুয়ারি ১২, ২০২০

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ আফগানিস্তান।  কয়েক দশক ধরে পপি চাষের (আফিম হেরোইন তৈরির কাঁচামাল) জন্য দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে। সম্প্রতি দেশটির কৃষকরা সোনালি পথের সন্ধান পেয়েছেন। কয়েক বছর ধরে তারা পপির পরিবর্তে ঝুঁকেছেন রেড গোল্ড বা জাফরান চাষে। শুধু তা- নয়, অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে চাষ হওয়া জাফরান বেলজিয়ামের একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরপর আট বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ মানসম্মত জাফরানের তকমাও পেয়েছে। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে আফগানিস্তানের কৃষিতে পপির লাভজনক বিকল্প হয়ে উঠবে লোহিত স্বর্ণ জাফরান।

বিদায়ী বছরে আফগানিস্তানে ২০১৮ সালের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি জাফরান উৎপাদিত হয়েছে। আফগানিস্তান স্যাফরন প্ল্যন্টার্স ন্যাশনাল ইউনিয়নের প্রধান বাশির আহমেদ রাশদির দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে মোট ১৯ হাজার ৪৬৯ কেজি জাফরান উৎপাদন করেছেন আফগান কৃষকরা। সময় দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের মোট ৩৭ হাজার হেক্টর জমিজুড়ে মূল্যবান মসলাপণ্যটির চাষ হয়েছে।

দেশে উৎপাদিত মোট জাফরানের ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি করে আফগানিস্তান। বিদায়ী বছরে খাতে দেশটির আয় কোটি ৭০ হাজার মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। চীন, ভারত সংযুক্ত আরব আমিরাত আফগানিস্তানে উৎপাদিত জাফরানের প্রধান ক্রেতা। আহমেদ রাশিদি বলেন, মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি কেজি জাফরানের মূল্য হাজার থেকে দেড় হাজার ডলারের মধ্যে। মসলাটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে যখন হাজার ডলারে পৌঁছায়, স্থানীয় মুদ্রায় এর দাম দাঁড়ায় ৭০ হাজার আফগানি বা ৯০৯ ডলারে। উৎপাদনকারীরা সরকার খাতসংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে পর্যাপ্ত সমর্থন সহযোগিতা পেলে খাতটি আরো এগিয়ে যেতে পারবে, যা দেশটির অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখবে।

তবে খাতে পুরোপুরি সমস্যামুক্ত হয়ে উঠতে পারেনি আফগানিস্তান। রাশিদি জানান, তিনি লক্ষ করেছেন দেশটির বেশকিছু কোম্পানি বিভিন্ন দেশে নিম্ন বা একেবারে মানহীন জাফরান রফতানি করছে, যা বিশ্ববাজারে আফগান জাফরানের সুনামের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।

দেশটির স্থানীয় জাফরান প্রক্রিয়াজাত সংস্থা ন্যাব গ্রুপের প্রধান হাজি আবদুল শাকুর রাহিমি জানান, আফগানিস্তান খাতে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। মানসম্মত জাফরান প্যাকিং প্রক্রিয়াজাতে তাদের গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এছাড়া ফুল সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাত এবং তা থেকে জাফরান তৈরিতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে।

ইরান ভারত বিশ্বের জাফরান উৎপাদনকারী শীর্ষ দুই দেশ। এদিকে বৈশ্বিক মোট উৎপাদনের দশমিক শতাংশ হিস্যা নিয়ে আফগানিস্তানের অবস্থান দাঁড়িয়েছে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে। আগামীতে মসলাটির বাণিজ্যে আরো পোক্ত অবস্থান অর্জনের প্রত্যাশা রয়েছে দেশটির। শাকুর রাহিমি বলেন, বিভিন্ন সংকট সত্ত্বেও প্রতি বছরই আফগানিস্তানে কৃষিপণ্যটির চাষপদ্ধতি উৎপাদন উন্নতির দিকে এগোচ্ছে। এতে আফগান জাফরানের মান উত্তরোত্তর বাড়ছে। আর ভালো মানের জাফরান রফতানি করতে পারলে খাত থেকে আফগানিস্তানের আয়ও আরো বাড়বে।

এর আগে আফগানিস্তানের ৩৪ প্রদেশের ২৩টিতেই পপি চাষ করা হতো। এসব প্রদেশের কৃষকরা এখন জাফরান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মসলাপণ্যটি ব্যয়বহুল হওয়ায় অল্প সময়েই তারা লাভবান হতে শুরু করেছেন। যার প্রভাব পড়ছে দেশটির সামগ্রিক অর্থনীতিতেও।

আফগানিস্তানের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হেরাতে সবচেয়ে বেশি জাফরান উৎপাদিত হয়। ২০১৯ সালে দেশটিতে মোট উৎপাদিত জাফরানের ৯২ শতাংশই উৎপাদন হয়েছে এখানে। এছাড়া দেশটির উত্তরাঞ্চলের বালাখ সার- পুল, দক্ষিণের কান্দাহার উরুজগান এবং মধ্য অঞ্চলের ডাইকুন্ডিতে জাফরান উৎপাদিত হয়।

            সিনহুয়া আরব নিউজ অবলম্বনে


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫