কৃষি যন্ত্র কেনায় আসছে নীতিমালা

অর্থ দেবে ব্যাংক, সুদ দেবে সরকার

প্রকাশ: জানুয়ারি ০৬, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে বড় কৃষকের সংখ্যা এখনো ১০ শতাংশের নিচে। মাঝারি ক্ষুদ্র কৃষক রয়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ। এসব কৃষকের আয়ও খুব বেশি বৃদ্ধি না পাওয়ায় কৃষক পরিবারে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আসেনি। ফলে ভারী কৃষি যন্ত্র কিনতে পারছেন না বেশির ভাগ কৃষকই। যান্ত্রিকীকরণের দৈন্যদশা কাটাতে তাই সমন্বিত নীতিমালা করছে সরকার। নীতিমালা অনুযায়ী, যান্ত্রিকীকরণে অর্থায়ন করবে ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আর ভর্তুকি হিসেবে সুদ পরিশোধ করবে সরকার। প্রতিষ্ঠা হবে যান্ত্রিকীকরণ জোন।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ শস্যের উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর জন্য জাতীয় কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা-২০১৯ প্রণয়ন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। নীতিমালায় কৃষি যন্ত্র কেনায় কৃষকদের উৎসাহিত করতে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক, এনজিও অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সহজে কৃষিঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হবে। বছরে স্বল্প সময়ে ব্যবহার্য বপন, রোপণ, কর্তন, শুকানো, সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাতবিষয়ক কৃষি যন্ত্র কেনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম সুদ কিংবা বিশেষ ক্ষেত্রে সুদবিহীন ঋণ প্রদান করা হবে। এক্ষেত্রে সরকার ঋণের সুদ ভর্তুকি হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে পরিশোধ করবে। এছাড়া কৃষক বা কৃষক গ্রুপ যাতে ডাউন পেমেন্টসহ কিস্তিতে মূল্য পরিশোধ করে কৃষি যন্ত্র কিনতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হবে। দেশে উৎপাদন সম্ভাবনা আছে এমন সব যন্ত্রের রক্ষণাবেক্ষণ মেরামত সুবিধা সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে যুক্তিসংগত প্রণোদনা দেয়া হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যে কৃষিঋণ দিচ্ছে, সেখানে একটি নির্দিষ্ট অংশ যান্ত্রিকীকরণে দিতে হবে, এমন নির্দেশনাও দেয়া হবে।

বিষয়ে কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে জমি চাষ, সেচ, ফসল মাড়াই, কীটনাশক বালাইনাশক ছিটানোর ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার বেশ এগিয়েছে। তবে যান্ত্রিকীকরণে এখনো পিছিয়ে রয়েছে রোপণ, বপন, সার প্রয়োগ, ফসল কর্তন, ঝাড়াই, বাছাই, উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংরক্ষণ পরিবহনের ক্ষেত্রে। এজন্য নীতিমালার মাধ্যমে অর্থায়ন অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা দেয়া হবে। কৃষি যন্ত্র সেবা প্রদানকারী উদ্যোক্তা, কৃষক, মেকানিক, মেরামতকারী কারখানা শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। গ্রামের যুবশক্তিকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণে যুব সম্প্রদায়ের অধিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হবে। কৃষি যন্ত্রপাতি পরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধির লক্ষ্য রয়েছে নীতিমালায়।

জানা গেছে, কৃষি যন্ত্র প্রস্তুতকারীদের মূলধনি যন্ত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষায়িত ঋণ স্কিমের আওতায় ন্যূনতম হারে ঋণ প্রদানের কার্যক্রম চালু করা হবে। উৎসাহিত করা হবে কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী সংযোজন শিল্পকে। কৃষি যন্ত্র যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারী শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতির ওপর যুক্তিসংগত হারে প্রণোদনামূলক আমদানি শুল্ক নির্ধারণে উদ্যোগ নেবে সরকার। শিল্পকে কৃষিভিত্তিক শিল্প হিসেবে গণ্য করা হবে। কনজারভেশন কৃষিকে অগ্রাধিকার দেয়ার পাশাপাশি খাতের উন্নয়নে বিশেষায়িত উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোর সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চতর সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়া হবে। পাহাড়ি বরেন্দ্র অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল, চরাঞ্চল হাওড় অঞ্চলের জন্য আলাদা কৃষি যন্ত্র প্রবর্তনের উদ্যোগ থাকবে। যন্ত্রের নিরাপদ ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে নারীদের। নীতিমালার প্রস্তাবটি সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের পর তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। আগামী মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিমালাটি চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে পারে।

বিষয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে চাই আমরা। কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে হলে কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের প্রয়োজন রয়েছে। আগামী দিনে যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে অর্থায়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। এটি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের কাছে যে প্রস্তাব এসেছে, তাতে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি কোম্পানির যন্ত্রই পরীক্ষা করে বাজারজাত করতে হবে। একই সঙ্গে সেগুলোর মানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে কিনা সেটিও তদারক করতে হবে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের দ্রুততার সঙ্গে এলাকাভিত্তিক যন্ত্রের চাহিদা নির্ধারণ করতে হবে। দেশে জমির আকার মাটির প্রকৃতিতে ভিন্নতা রয়েছে। মাটি জমির উপযোগী কৃষি যন্ত্র কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষি যন্ত্রের ক্ষেত্রে দামের পাশাপাশি মানের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া বেসরকারি খাতকে যান্ত্রিকীকরণে এগিয়ে আসার সুযোগ দেয়া হলে দ্রুতই সুফল পাওয়া যাবে।

বিষয়ে এসিআই মোটরসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা . ফা আনসারী বণিক বার্তাকে বলেন, ফসলের মৌসুমে এখন ৩৫-৪০ শতাংশ শ্রমিকের সংকট থাকে। সামনের দিনে আরো সংকট ঘনীভূত হবে। কেননা দেশে আরো শিল্পায়ন হলে কৃষি খাতের শ্রমিকদের শিল্পে স্থানান্তর ঘটবে। আগামীতে খাতের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি যন্ত্রপাতি দিয়ে যদি ধান আবাদ করা যায়, তাহলে ৩০ শতাংশ খরচ কমানো সম্ভব। শহর গ্রামের আয়বৈষম্য কমাতে অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে কৃষি যন্ত্র। তাই দেশের কৃষিকে এগিয়ে নিতে অর্থায়নসংশ্লিষ্ট বাধা দূর করতে হবে। ব্যাংকগুলো সরাসরি কৃষককে ঋণ দিচ্ছে না বলে কোম্পানিগুলো ঋণ দিতে বাধ্য হচ্ছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ব্যাংকগুলো কৃষকদের ঋণ দেয়। সেখানে ঋণ আদায়ও করছে ব্যাংক। তাই খাতের জন্য কার্যকর সমন্বিত একটি নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫