বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বিভাগ খোলা ও সিলেবাস অনুমোদনের ক্ষমতা চান ট্রাস্টিরা

প্রকাশ: জানুয়ারি ০৪, ২০২০

সাইফ সুজন

বিভাগ বা প্রোগ্রাম চালু পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, অনুমোদন এবং পরিমার্জনের ক্ষমতা চাইছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ সদস্যরা। তাদের অভিযোগ, বর্তমানে নতুন বিভাগ খোলা এর পাঠ্যক্রম অনুমোদন কিংবা পরিমার্জন করতে হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) মাধ্যমে। প্রক্রিয়া খুবই ধীরগতির। এর ফলে সময় অর্থের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। যদিও ইউজিসি বলছে, আইন অনুযায়ী শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার এসব অনুমোদন ট্রাস্টি বোর্ডের হাতে দেয়ার সুযোগ নেই।

সম্প্রতি বিভাগ বা প্রোগ্রাম চালু পাঠ্যসূচি প্রণয়ন, অনুমোদন এবং পরিমার্জনের ক্ষমতা চেয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। জানা যায়, গত মাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা অনুমোদন বিষয়ে কথা বলতে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। সময় বিভিন্ন প্রত্যাশাসংবলিত একটি চিঠি ইউজিসির চেয়ারম্যানের হাতে দেয়া হয়।

চিঠিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল রেখে নতুন শিক্ষা কার্যক্রম, বিভাগ বা কোর্স প্রণয়নের দায়িত্ব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত থাকা কাম্য। এক্ষেত্রে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের হাতে ক্ষমতা দেয়া হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিল -সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তাব পর্যালোচনা পরীক্ষণ শেষে তা সিন্ডিকেট বরাবর উপস্থাপন করতে পারে। সেক্ষেত্রে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিষয়গুলো বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বরাবর পাঠাবে সিন্ডিকেট। বোর্ড অব ট্রাস্টিজ তাতে অনুমোদন দেয়ার পর বিষয়টি ইউজিসিকে অবহিত করবে। ধরনের প্রক্রিয়ায় নতুন শিক্ষা কার্যক্রম, বিভাগ বা কোর্স অনুমোদন দেয়ার বিধানসংবলিত প্রক্রিয়া গোটা খাতকে অনেক গতিশীল করবে।

চিঠিতে সিলেবাস পরিবর্তন পরিমার্জন বিষয়ে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী তাত্ত্বিক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট পাঠ্যক্রম হালনাগাদ করতে হয়। অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের আধুনিকতম জ্ঞান প্রদানের উদ্দেশ্যে পাঠ্যক্রম পরিবর্তন বা পরিমার্জনের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের সুপারিশসহ বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদনসাপেক্ষে কমিশনকে অবহিত করার নিয়ম চালু করা হলে কার্যক্রমটি সহজ যথাযথ হবে।

প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিন্ডিকেট একাডেমিক কাউন্সিলেই এগুলো অনুমোদন দেয়া হয়। তাহলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পারবে না কেন? আর ইউজিসির প্রক্রিয়া খুবই ধীর। সিলেবাস অনুমোদনে দেরি হওয়ায় আমরা শিক্ষক নিয়োগ দিলেও তাদের বসিয়ে রাখতে হয়। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল করতেই প্রোগ্রাম চালু, সিলেবাস অনুমোদন আপগ্রেড আমরা নিজেরাই করতে চাই।

তবে ইউজিসি বলছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত সব পরিকল্পনা শিক্ষাক্রম অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ ইউজিসি। ক্ষমতা বোর্ড অব ট্রাস্টিকে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

প্রসঙ্গে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক . ফখরুল ইসলাম বলেন, আইনে তো বিষয়ে সুযোগ নেই। ক্ষমতা নিতে হলে আইনের সংশোধন লাগবে। আর দফায় দফায় চিঠি দেয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই নিয়মিত সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল ফিন্যান্স কমিটির সভা করছে না। তাহলে একাডেমিক গুরুত্বপূর্ণ এসব কাজ কীভাবে অনুমোদন করবেন তারা?

প্রসঙ্গত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ৩৫ ধারায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত পরিকল্পনা বা শিক্ষাক্রম সম্পর্কিত বিষয়ে ইউজিসির লিখিত অনুমোদন নেবে। অনুমোদনের জন্য ইউজিসির নির্ধারিত পদ্ধতিতে আবেদন করতে হবে। কমিশন ধারার আবেদন ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করবে। ইউজিসি কোনো আবেদন অনুমোদনে অস্বীকৃতি জানালে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী এক মাসের মধ্যে চ্যান্সেলরের কাছে আপিল করবে। এক্ষেত্রে চ্যান্সেলরের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

এদিকে ইউজিসিকে দেয়া চিঠিতে ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বাছাইকৃত বিভাগে পিএইচডি প্রোগ্রাম অনুমোদন দেয়ার কথা বলছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি। বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণালব্ধ পিএইচডি এমফিল শিক্ষাক্রম চালুর সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। এতে একদিকে যেমন অধিকতর যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকপ্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টি হবে, তেমনি আর্থসামাজিক প্রতিবন্ধকতা নিরসনে দেশের অভ্যন্তরে গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহারের ক্ষেত্রও প্রসারিত হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পিএইচডি এমফিল প্রোগ্রাম চালুর বিষয়টি বিবেচনা করাও এখন জরুরি। এক্ষেত্রে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগকে একযোগে উচ্চতর ডিগ্রি দেয়ার অনুমতি না দিয়ে প্রতিটি বিভাগের সক্ষমতা বিচার করে অনুমতি দেয়াটাই সমীচীন হবে।

চিঠিতে আরো বলা হয়, যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির পদ শূন্য হলে আইন অনুযায়ী নতুন ভিসি নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগের জন্য আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকাকালে পদটিকেশূন্যবিবেচনা যৌক্তিক নয়। নতুন ভিসি নিয়োগ বা পুনর্নিয়োগ প্রক্রিয়া চলাকালে প্রস্তাবিত ভিসি বা প্রোভিসি কিংবা সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিকে পদের পূর্ণ দায়িত্ব মর্যাদায় গ্রহণের বিষয়টিকে বিবেচনার জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।

এছাড়া চিঠিতে কমিশন গঠনতন্ত্র প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মাণে সহযোগিতা প্রদান বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর যৌক্তিক সংস্কারের কথাও উল্লেখ করা হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক . কাজী শহীদুল্লাহ বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। আমি তাদের উদ্দেশে বলেছি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনিয়ম বন্ধে উপাচার্যদের চিঠি দিয়েছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অনিয়মও মেনে নেয়া হবে না। তারা একটি চিঠি দিয়েছেন। কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫