কর্ণফুলী নদীর এপারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচটি ওয়ার্ড এবং ওপারে বোয়ালখালী উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-৮ সংসদীয় আসন।
এ দুটি অংশের মধ্যে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমে ৮৮ বছরের পুরনো কালুরঘাট রেলসেতু।
এ সেতুর বিকল্প হিসেবে কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।
এমনকি বিভিন্ন নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে প্রভাবক হয়ে উঠেছে এ দাবি।
তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনেও প্রধান ইস্যু হয়ে উঠেছে কালুরঘাট সেতু।
জনদাবির কথা ভেবে নতুন সেতু নির্মাণকে প্রধান এজেন্ডা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরাও।
নির্বাচন কমিশনের তথ্যমতে, বোয়ালখালী উপজেলার কদুরখীল, পশ্চিম গোমদণ্ডী, পূর্ব গোমদণ্ডী, শাকপুরা, সারোয়াতলী, পোপাদিয়া, চরণদ্বীপ, আমুচিয়া ও আহলা করলডেঙ্গা ইউনিয়ন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়েই চট্টগ্রাম-৮ আসন গঠিত।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯৬ জন।
এর মধ্যে বোয়ালখালীর এক পৌরসভা ও আট ইউনিয়নে ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ১৩১ জন এবং ভোটকেন্দ্র ৬৯টি।
অন্যদিকে চসিকের পাঁচ ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১১ হাজার ৮৬৫ জন এবং ভোটকেন্দ্র ১০১টি।
গত ৭ নভেম্বর ভারতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য মঈনউদ্দিন খান বাদল মৃত্যুবরণ করলে আসনটি শূন্য হয়।
নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী আগামী ১৩ জানুয়ারি এ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে মোছলেম উদ্দিন, বিএনপির আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এসএম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, ন্যাপের বাপন দাশগুপ্ত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের প্রত্যেকেই নির্বাচনে জয়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের ওপর জোর দিচ্ছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩১ সালে নির্মিত ৮৮ বছরের পুরনো কালুরঘাট সেতু দিয়ে ট্রেনের পাশাপাশি ভারী যানবাহনও চলাচল করছে।
এতে সেতুটির ঝুঁকি আরো বাড়ছে।
গত এক যুগে কয়েক দফা মেরামত করা হলেও সেতুটি এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে রয়েছে।
ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় প্রতি বছরই এ সেতুতে দুর্ঘটনাও ঘটছে।
একসময় এ রুটে দৈনিক কয়েক জোড়া ট্রেন চলাচল করত।
তবে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠার পর ট্রেন সার্ভিস কমিয়ে দেয় রেলওয়ে।
বর্তমানে দৈনিক দুই জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
প্রতিটি ট্রেনে মাত্র পাঁচটি বগি ও একটি পুরনো হালকা ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়।
এ রেললাইনটিতে ট্রেনের গতিবেগ ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার হলেও সেতুতে ট্রেনের গতিবেগ ১০ কিলোমিটারেরও কম।
শুরুতে মেয়াদোত্তীর্ণ কালুরঘাট রেলসেতুর স্থলে নতুন একটি রেলওয়ে কাম রোড ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল রেলওয়ের।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে কালুরঘাট সেতুর স্থলে শুধু রেলের জন্য একটি বিশেষায়িত সেতু নির্মাণের নির্দেশনা আসে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব উদ্যোগের কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনের ভোটের মাঠে প্রধান এজেন্ডা ছিল কালুরঘাট সেতু।
ওই নির্বাচনে জয়ী হয়ে মঈনউদ্দিন খান বাদল সেতু নির্মাণে তোড়জোড় শুরু করেন।
এমনকি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে কালুরঘাট সেতু নির্মাণে সরকার কোনো উদ্যোগ না নিলে সংসদ সদস্য থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
তার মৃত্যুর পর শূন্য হওয়া আসনটিতে উপনির্বাচনে নতুন করে রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে উঠেছে সেতু নির্মাণ।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন জানান, আমি নির্বাচিত হলে আমার প্রথম ও প্রধান কাজ হবে কালুরঘাট নতুন সেতু দৃশ্যমান করা।
২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর শিকলবাহার জনসভায় প্রয়াত আখতারুজ্জামান বাবু ও আমি এ দাবি জানিয়েছিলাম।
এ সেতু নির্মাণে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান জানান, আমাদের প্রধান দাবি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি