১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ ও পাকিস্তানের বৈরী সম্পর্কের মধ্য দিয়ে ভাষাকে কেন্দ্র করে ঘটে গেল একটি বিশাল বিপ্লব। শহীদের রক্তের বিনিময়ে আন্দোলন অধিকতর তীব্র হয়ে ওঠে। কেবল ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে নানা বঞ্চনা, বিশেষত অর্থনৈতিক দিকটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে। পূর্ববঙ্গের কেন্দ্র হিসেবে রাজধানী ঢাকা সব ধরনের আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল। এ শহরকে কেন্দ্র করে জাতীয় সব ধরনের সংগ্রামে একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণী নেতৃত্ব দেয়। এদের নেতৃত্বে রাষ্ট্রের নিচু তলার জনসাধারণ একত্র হয়েছে এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এই মধ্যবিত্ত শ্রেণীটি ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। ষাটের দশকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। সর্বোপরি জনসাধারণকে একত্র করে মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। রাষ্ট্রের নির্দেশিকা হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন করেছে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধেও এ শ্রেণীর তত্পরতা রাষ্ট্রের গতিপথ পাল্টে দিয়েছিল। কিন্তু বিশেষত নব্বইয়ের দশকের পর থেকে এ শ্রেণীর মধ্যে আপসকামী, স্বার্থান্বেষী ও প্রতিবাদহীনতা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এর পেছনে বহু কারণ জড়িত। বিশেষত রাষ্ট্রের নিপীড়নমূলক আচরণ এ শ্রেণীর স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যকে একেবারেই বিনষ্ট করে দিয়েছে। ফলে গত কয়েক দশকে নিপীড়নমূলক আচরণের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে একটি প্রতিবাদহীন আপসকামী মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সৃষ্টি হয়েছে। এ শ্রেণীর মধ্যে রয়েছেন আইনজীবী, ডাক্তার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, কর্মী, বুদ্ধিজীবী, সরকারি কর্মকর্তা প্রমুখ। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী নেতৃত্ব দিতে শুরু করেছে, তাদের কর্মফলের বিশ্লেষণ করা বর্তমান প্রবন্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাছাড়া এ শ্রেণীভুক্ত প্রভাবশালী গোষ্ঠী হিসেবে সমসাময়িক বুদ্ধিজীবীদের চালচরিত্র নিয়ে আলোচনাও এ প্রবন্ধের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা। প্রবন্ধের দ্বিতীয় মাত্রাটির বিশেষ গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে উল্লিখিত শিরোনামটি নির্বাচন করা হয়েছে।
সাহিত্যে বাঙালি মনস্তত্ত্ব বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মনস্তত্ত্ব আমাদের ঐতিহাসিক নিরিখেই বুঝতে হবে। বিশেষত তাদের মনস্তত্ত্ব ধরার জন্য বাঙালি এরই মধ্যে কী কী ধরনের চিন্তা করেছে, তার নজির খোঁজা খুবই প্রয়োজন।
উনিশ শতকে হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা চিন্তাচর্চা করেছেন, তাদের রচনায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বই মূলত প্রধান বিষয় হয়ে ফুটে উঠেছে। রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পারস্পরিক বিদ্বেষই মূলত তাদের রচিত সাহিত্যে স্থান করে নেয়। সামাজিক ও রাজনৈতিক কারণে তুলনামূলক বিচারে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত লেখকদের মধ্যে যুক্তি ও মনীষা উল্লেখযোগ্যভাবে ফুটে উঠেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে