দেশে বৃহৎ শিল্পের সংখ্যা তিন হাজারের কিছু বেশি। উৎপাদনমুখী শিল্পে মোট কর্মসংস্থানের ৬৮ শতাংশই এসব শিল্পে। কাঁচামালের ৬৩ শতাংশ ও বিদ্যুৎ-জ্বালানির ৫৬ শতাংশই ব্যবহার করে তারাই। নিট স্থায়ী সম্পদেরও ৬৮ শতাংশের বেশি বৃহৎ শিল্পের। যদিও বৃহৎ শিল্পে মন্দা চলছে। উৎপাদন সক্ষমতার বড় অংশই অব্যবহূত থাকছে। নতুন কর্মসংস্থান সেভাবে সৃষ্টি করতে পারছে না বৃহৎ শিল্পগুলো। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় পণ্যের মজুদ বাড়ছে। নগদ অর্থ সংকটেও ভুগছে তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ মন্দা থেকে বৃহৎ শিল্পের উত্তরণ না হলে চাপে পড়তে পারে দেশের অর্থনীতি।
শিল্পের শ্রেণী বিভাজন করা হয় জনবলের সংখ্যার ভিত্তিতে। শিল্পনীতি ২০১০ অনুযায়ী, কোনো শিল্পে ১০ থেকে ২০ জন সম্পৃক্ত থাকলে তা অতিক্ষুদ্র। সম্পৃক্ত মানুষের সংখ্যা ২৫ থেকে ৯৯ হলে তা ক্ষুদ্র এবং ১০০ থেকে ২৫০ জন হলে মাঝারি শিল্প। আর ২৫০ জনের বেশি ব্যক্তির সম্পৃক্ততা থাকলে তাকে বৃহৎ শিল্প হিসেবে ধরা হয়।
এ বৃহৎ শিল্পের মন্দা কাটানো না গেলে এর প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে পড়বে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, কর্মসংস্থান, রাজস্ব সব ক্ষেত্রেই বড় অবদান রাখছে বৃহৎ শিল্প। অর্থায়নেরও বড় অংশ যায় বৃহৎ শিল্পে। বৃহৎ শিল্পকে কেন্দ্র করেই আবার গড়ে ওঠে ছোট শিল্প। এ দৃষ্টিকোণ থেকেও বৃহৎ শিল্পকে অবশ্যই ভালো রাখতে হবে। তা না হলে সামগ্রিক অর্থনীতিই ধাক্কা খাবে।
দেশের উৎপাদনমুখী শিল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় বস্ত্র ও পোশাক খাত। এ শিল্পের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতারও প্রায় ৫০ শতাংশ অব্যবহূত থাকছে। এ শিল্পের বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে হা-মীম, স্ট্যান্ডার্ড, মুসলিম, ফকিরসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠানই ক্রয়াদেশ সংকটে ভুগছে। ক্রয়াদেশ সংকটে দু-একটি ইউনিট বন্ধও রাখতে হচ্ছে বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটিকে।
এফবিসিসিআই সহসভাপতি ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সব দেশেই অর্থনীতি নির্ভর করে মূলত বড়দের ওপর। ছোটরা যে সচল থাকে, তা-ও বড়দের সহযোগিতায়। বড় শিল্পের মতো বড় অবদান রাখার সক্ষমতা ছোটদের থাকে না। কাজেই বৃহৎ শিল্পের মন্দা দেশের অর্থনীতির জন্য শুভ নয়।
একই অবস্থা ইস্পাত