মনোজ দানি। অনুবাদ : হাসান তানভীর
একজন স্বামী তার স্ত্রীকে কোন জিনিসটি উপহার দিতে পারেন, যা সবচেয়ে বেশি রোমান্টিক? নির্দিষ্ট করে বলি, কোন জিনিসটা এত মূল্যবান, যা একজন রাজকুমারের পক্ষে তার প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার উপযুক্ত? মোগল আমলের কথা ভাবুন, তাহলেই বুঝতে পারবেন এর সুস্পষ্ট উত্তর হলো— মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের একটি অ্যালবাম।
মনে রাখা দরকার, এটি কোনো সাধারণ যুবরাজের গল্প নয়। দারা শুকো ছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহানের জ্যেষ্ঠ পুত্র এবং ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম ট্র্যাজিক চরিত্র। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মহান পণ্ডিত, শিল্পবোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, প্রিয় পুত্র, স্নেহশীল পিতা এবং একজন প্রেমময় স্বামী। দারা শুকোর জীবনের করুণ পরিসমাপ্তি হয় ১৬৫৯ সালে তার ভাই আওরঙ্গজেবের কাছে সিংহাসন দখলের যুদ্ধে হেরে গিয়ে। এ ভাগ্যাহত রাজপুত্রের যেসব আকর্ষণীয় জিনিস আজ অবধি টিকে আছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে থাকা মিনিয়েচার পেইন্টিংয়ের ‘দারা শুকো অ্যালবাম’।
মা মুমতাজ মহলের (তাজমহল নির্মাণ সমাপ্তির পর সেখানে যাকে সমাধিস্থ করা হয়েছিল) জীবদ্দশায় দারা শুকো তার চাচা সুলতান পারভেজ মির্জার কন্যা নাদিরা বানু বেগমের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। এর মাধ্যমেই চিত্রশিল্পের একটি আকর্ষণীয় প্রকল্প শুরু হয়েছিল, যেখানে শাহজাহানের মোগল দরবারের বিখ্যাত শিল্পীরা দারা শুকোর জন্য তৈরি করেছিলেন অসাধারণ সব চিত্রকর্মের একটি অ্যালবাম।
অ্যালবামের চিত্রকর্মের উপজীব্যগুলো ১৬৩৩-৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছিল। মোগল ঐতিহ্যের রীতি অনুসারে চিত্রকর্মগুলো মুখোমুখি জোড়ায় সাজানো হয়েছিল। চিত্রকর্মগুলোতে স্থান পেয়েছে বেশির ভাগ কিশোর রাজকুমার-রাজকন্যাদের প্রতিকৃতি, সাধু পুরুষ এবং ফুল ও পাখির অবয়ব, যা দারা শুকোর উন্নত বুদ্ধিবৃত্তিক মননকেই প্রকাশ করে।
‘দারা শুকো অ্যালবাম’-এ দারার নিজস্ব হস্তাক্ষরে লিখিত একটি উৎসর্গ লিপি রয়েছে, যাতে তিনি স্ত্রী নাদিরা বানুকে কতটা ভালোবাসতেন তা প্রকাশ পেয়েছে। লিপিটি নিম্নরূপ—
ইন মুরাক্কা-ই-নাফিস বা-আনিস-ই খাস উ হামদাম উ হামরাজ বা ইখতিসাস নাদিরা বানু বেগম দাদাহ মুহাম্মাদ দারা শুকো ইবন শাহজাহান পাদশাহ-ই-গাজি সন্নাহ ১০৫৬
এ মূল্যবান সংগ্রহটি দিগ্বিজয়ী সম্রাট শাহ জাহানের পুত্র শাহজাদা মুহাম্মাদ দারা শুকো কর্তৃক তার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু নাদিরা বানুকে