রাজস্বের ৩৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের অভিযাত্রায় বড় বাধা

প্রকাশ: নভেম্বর ২২, ২০১৯

সারা বিশ্বেই অর্থ পাচার জটিল এক সমস্যা। উন্নত দেশগুলো অবৈধ অর্থ সংরক্ষণের সুযোগ দিচ্ছে আবার তারাই অর্থ পাচার বন্ধে সোচ্চার। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারও বেড়েছে। অর্থ পাচার বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ কাজ করছে বলে আমরা মনে করি। প্রথমত, দেশে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। দ্বিতীয়ত, ব্যাপক দুর্নীতি। যে অর্থ পাচার হয়ে যায়, বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো থাকলে সেই অর্থ দেশেই বিনিয়োজিত হতো। ফলে নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত, বাড়ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। কাজেই অর্থ পাচার রোধে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত। দৃষ্টি দিতে হবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার বিষয়েও। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ দেশে পুঁজির নিরাপত্তার অভাব অনেকাংশে দূর করে। বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের বড় অংশ দুর্নীতির টাকা। কাজেই দুর্নীতির লাগামও টেনে ধরতে হবে শক্ত হাতে। সম্প্রতি আঙ্কটাডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্বের ৩৬ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয় প্রতি বছর। অর্থ পাচার রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও তাতে যে সুফল মেলেনি, পরিসংখ্যান তারই ইঙ্গিত দেয়। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করছে। বিদেশের ব্যাংকগুলোয় ভারতীয়দের হিসাব পরীক্ষা পর্যন্ত করছে। অবৈধ লেনদেন পেলে ব্যবস্থাও নিচ্ছে। আর আমরা সেখানে শুধু নীতিমালাই প্রণয়ন করে চলেছি, না তা প্রয়োগ করছি, না পরিবেশ উন্নয়নের পদক্ষেপ নিচ্ছি।

ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে বিদেশে যেন অর্থ পাচার করা না যায়, সেজন্য ব্যাংকিং সেক্টরে মনিটরিং বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু সব ব্যাংকের রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ, এক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা আরো বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার বন্ধের ব্যবস্থাও করতে হবে। যেহেতু আমদানি-রফতানির আড়ালে পাচার হচ্ছে বেশি, তাই কোনো পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে খোলা ঋণপত্রে ওই পণ্যের যে দাম দেখানো হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে তার প্রকৃত মূল্য যাচাই করে অর্থ পাচার কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে আবার প্রাক-জাহাজীকরণ তদন্ত (পিএসআই) ব্যবস্থা চালু করার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। প্রক্রিয়ারও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বিদেশে পাচারকৃত অর্থের অর্ধেকেরও বেশি পাচার হচ্ছে ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে। ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির সময় ওভার ইনভয়েসিং করে অর্থাৎ পণ্যের মূল্য বেশি দেখিয়ে অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পাচার করেন। আবার পণ্য রফতানির সময় আন্ডার ইনভয়েসিং করে অর্থাৎ পণ্যের মূল্য কম দেখিয়ে রফতানি পণ্যের মূল্যের একটি অংশ বিদেশেই রেখে দেন। অন্যদিকে ব্যাংকঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করার কারণে ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের একটি অংশ আদায় হচ্ছে না এবং এতে ব্যাংকিং খাত সমস্যায় পড়ছে। সুতরাং পাচার রোধে ব্যাংকিং খাতকে তত্পর হতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে অর্থ পাচার ঠেকাতে ব্যাংকিং খাতে মনিটরিং বাড়াতে হবে এবং সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। দেশীয়দের বিদেশে বিনিয়োগের কারণ হিসেবে প্রায়ই বলা হয়, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ না থাকা, বিদ্যুৎ-গ্যাসের অপ্রতুলতার কথা। এসব অনেকাংশে সত্য। আবার এটাও সত্য, দিন দিন


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫