চট্টগ্রামে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে ৭ জনের মৃত্যু

প্রকাশ: নভেম্বর ১৮, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা এলাকার একটি বাড়িতে গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো ১০ জন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পাথরঘাটা ব্রিক ফিল্ড রোডের বড়ুয়া বিল্ডিংয়ের নিচতলায় ওই বিস্ফোরণ ঘটে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির ভেতরেই গ্যাস পাইপলাইনের রাইজারে সমস্যা ছিল। রাইজার সংযোগের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে জমে গিয়েছিল। সকালে বাসায় কেউ আগুন ধরালে তাতে বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। কারণ গ্যাস লাইন পুরনো ছিল। বিস্ফোরণে দুটি আবাসিক ভবনের প্রাচীর ও সড়কের সীমানাপ্রাচীর ধসে পড়ে।

বিস্ফোরণে আহত ১৭ জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সাতজনকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতরা হলেন রং মিস্ত্রি নুরুল ইসলাম (৩০), এ্যানি বড়ুয়া (৪০), জুলেখা ফারজানা (৩০) ও তার সন্তান আতিকুর রহমান (৮), মো. সেলিম (৪০) ও মো. শুক্কুর (৪২)। নিহত অন্য একজনের পরিচয় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ।

বিস্ফোরণে আহত ১০ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে ৩০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া কৃষ্ণকুমারী স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অর্পিতা নাথকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী বিপুল সাহা বলেন, সকালে পরোটা কিনতে বের হয়েছিলাম। চেখের সামনে হঠাৎ বিকট শব্দে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় বড়ুয়া ভবনের সামনের দেয়ালের বড় অংশ উড়ে এসে সামনে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে দ্রুত তারা এসে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক পূর্ণচন্দ্র মুত্সুদ্দী বলেন, আমরা সকালে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যাই। নন্দনকানন, চন্দনপুরা ও আগ্রাবাদ তিন স্টেশনের ১০ গাড়ি উদ্ধারকাজ শুরু করে। আমরা সকালেই ১৬ জনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক সাতজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাইজারটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও মরিচায় নষ্ট হয়ে গেছে। মরিচা ধরা রাইজারটি অনেক আগেই ব্যবহার অনুপযোগী। রাইজারের নিচে সেপটিক ট্যাংক থাকায় এত বড় বিস্ফোরণ ঘটে।

গ্যাসলাইনটি পুরনো হলেও কোনো লিকেজ নেই বলে দাবি করেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক খয়েজ আহমেদ মজুমদার। তিনি বলেন, সেখানে সেপটিক ট্যাংকের ঢাকনা পাওয়া যায়নি। ওই বাসার ভেতরে কোনো ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি। গ্যাস থেকে বিস্ফোরণ ঘটলে ওই বাসায় অবশ্যই আগুন লাগত। এ দুর্ঘটনার জন্য রাইজার বিস্ফোরণের কথা বলা হচ্ছে, সেটাও সঠিক নয়। সেপটিক ট্যাংকে গ্যাস জমার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটেছে।

তবে কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অস্বীকার করেন বিস্ফোরক অধিদপ্তরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, গ্যাসলাইনের কারণে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি। রাইজার থেকে চুলা পর্যন্ত যে লাইনটি গেছে, সেটিতে হয়তো লিকেজ ছিল। ওই লিকেজ দিয়ে সারা রাত গ্যাস বের হয়ে পুরো ঘরে জমা হয়েছিল। পরে সকালে আগুন ধরাতে গেলে বিস্ফোরণ ঘটে।

এদিকে বিস্ফোরণের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এজেএম শরিফুল হাসানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে আছেন।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, যার নেতৃত্বে আছেন উপকমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নগর বিশেষ শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার মঞ্জুর মোরশেদ ও কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫