দুদক চেয়ারম্যানের অভিমত

৮০% অর্থ পাচার আমদানি রফতানির আড়ালে

প্রকাশ: নভেম্বর ১৮, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ থেকে যে পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়, তার ৮০ শতাংশই হয়ে থাকে আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের আড়ালে। অর্থ পাচার ও জঙ্গি অর্থায়ন প্রতিরোধ নিয়ে গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এ কথা বলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। আর পাচার হওয়া এ অর্থের একটি বড় অংশই জঙ্গিরা পায় বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজি ফর প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যান্ড কমব্যাটিং ফিন্যান্সিং অব টেরোরিজম ২০১৯-২০২১ শীর্ষক এ সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হয়ে থাকে বাণিজ্যের মাধ্যমে। আর এটি প্রতিরোধে আমরা বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আমরা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে যাচ্ছি। ফলে আমদানি ও রফতানিতে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের কোনো সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে আমদানি-রফতানিতে ৪০ শতাংশের মতো পণ্য পরীক্ষা করা হয়। আগামী ছয়-সাত মাসের মধ্যে আমরা শতভাগ পণ্য পরীক্ষা করতে পারব। এটা করতে পারলে বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ হবে।

পাচার হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা পায় জানিয়ে তিনি বলেন, এরা বিশ্ব শান্তি নষ্টের জন্য প্রধান দায়ী। তাই আমাদের অবশ্যই অর্থ পাচার প্রতিরোধ করতে হবে। সব রাষ্ট্রের পারস্পরিক সহায়তা ছাড়া অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

সেমিনারে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক বিশ্বাস করে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অর্থ পাচার হয় বাণিজ্য কার্য প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে। প্রায় ৮০ শতাংশ অর্থ পাচার এ প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে এনবিআরের দায়িত্ব রয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে এনবিআর তেমন কিছু করেনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার আমাদের দেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা। ফলে অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা প্রয়োজন। পশ্চিমা বিশ্বের একটি দেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ ব্যবহার করে প্রবাসীদের থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেই টাকা বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ ও মৌলবাদ উসকে দেয়ার জন্য পাঠানো হয়। আমরা শত চেষ্টার পরও দেশটিকে বিষয়টি বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। সম্প্রতি দেশটি নিজেই এ সমস্যায় পড়ে বিষয়টি উপলব্ধি করেছে। পশ্চিমা দেশটির এ উপলব্ধি আগে হলে আমরা অনেক ক্ষতি সামাল দিতে পারতাম। এজন্য অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সব রাষ্ট্রের সহায়তা প্রয়োজন। আমি আশা করি, বন্ধু রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো বুঝবে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এসব অভিজ্ঞতার পাশাপাশি কিছু সফলতার গল্পও আছে। একইভাবে সিঙ্গাপুরেও টাকা সংগ্রহ করে বাংলাদেশে জঙ্গি অর্থায়নের চেষ্টা করা হয়েছিল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় সে সমস্যার সমাধান করা গেছে। ফলে সিঙ্গাপুরে থাকা এক লাখ বাঙালি এসব থেকে সরে এসেছে।

অর্থ পাচার রোধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরো কার্যকর করার আহ্বান জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, যে দেশ থেকে অর্থ পাচার হয়েছে, সে দেশে অর্থ ফেরত আনতে আমাদের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আরো বাড়াতে হবে। পাচার হওয়া অর্থকে আরো দক্ষতার সঙ্গে অনুসরণ করতে হবে, যাতে অপরাধীরা বুঝতে পারে অর্থ পাচার কঠিন হয়ে পড়েছে।

অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। বিএফআইইউ প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান সেমিনারে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে জাতীয় কৌশলপত্র ২০১৯-২১ নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন। এতে আরো অংশ নেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) বাংলাদেশের মিশন প্রধান গিওর্গি গিগোরি, যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জোয়ান ওয়াগনার, বাংলাদেশে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫