পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি আরামকো শনিবার প্রকাশিত কোম্পানির বিবরণীতে (প্রসপেক্টাস) বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির বিষয় উল্লেখের পাশাপাশি আইপিও বিক্রির তারিখ ঘোষণা করেছে। ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীদের জন্য রেখেছে মোট শেয়ারের দশমিক ৫ শতাংশ। পাশাপাশি প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বিক্রি শুরুর পর নতুন শেয়ার ইস্যু করতে সরকারের লকআপ পিরিয়ড থাকবে এক বছর। অর্থাৎ এ সময়ের আগে নতুন করে শেয়ার বিক্রি করতে পারবে না সৌদি সরকার। পাশাপাশি সন্ত্রাসী হামলা, সরকারের ক্ষমতা ও সম্ভাব্য আইনি জটিলতার মতো বিষয়গুলোও প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করা হয়েছে। খবর রয়টার্স।
গত শনিবার প্রকাশিত ছয় শতাধিক পৃষ্ঠার
প্রসপেক্টাসে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রির
বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ শেয়ার বাজারে আসতে কত সময় লাগবে এবং
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে কোনো প্রতিশ্রুতির প্রত্যাশা আছে কিনা, সে
ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়নি।
অবশ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সৌদি
শেয়ারবাজারে কোম্পানির ১ থেকে ২ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করা হতে পারে। এর পরও এটি হবে
বিশ্বের বৃহত্তম শেয়ার তালিকা।
প্রসপেক্টাসের তথ্য অনুযায়ী, আইপিওর
আবেদন গ্রহণ শুরু হবে ১৭ নভেম্বর।
বেশ কয়েকবার ঘোষণার পর অবশেষে ৩
নভেম্বর আইপিও ছাড়ার ঘোষণা দেয় আরামকো। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এর
মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করছেন। তিনি সৌদি রাজতন্ত্রের কার্যত
প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই সৌদি আরবের অর্থনীতিকে খনিজ তেল নির্ভরতা
থেকে বের করে জ্বালানিবহির্ভূত বিভিন্ন শিল্পে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাসের
দিকে নজর দিচ্ছেন।
তবে কোম্পানির প্রসপেক্টাসে কিছু
ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছে আরামকো। প্রথমেই এসেছে সন্ত্রাসী হামলার কথা। গত ১৪
সেপ্টেম্বরে আরামকোর কয়েকটি স্থাপনায় ড্রোন হামলা হয়। অভূতপূর্ব এ হামলায়
সাময়িকভাবে দৈনিক ৫৭ লাখ ব্যারেল উত্তোলন বন্ধ হয়ে যায়, যা
বৈশ্বিক সবরাহের ৫ শতাংশ।
পাশাপাশি প্রতিযোগিতার পরিবেশ ব্যাহত
করার অভিযোগে অ্যান্টিট্রাস্ট আইনের ঝামেলা আসতে পারে। এছাড়া যেকোনো সময় অপরিশোধিত
জ্বালানি তেল উৎপাদন সর্বোচ্চ সীমায় নিয়ে যাওয়ার অধিকার রয়েছে সৌদি সরকারের। সরকার
আরামকো কর্তৃপক্ষকে মূল ব্যবসার বাইরে বিনিয়োগের নির্দেশনাও দিতে পারে।
বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকি রয়েছে আরো।
প্রসপেক্টাসে বলা হয়েছে, ছোট বিনিয়োগকারীদের জন্য লভ্যাংশ নীতিতে বিনা নোটিসে যেকোনো সময়
পরিবর্তন আনার ক্ষমতা রাখে আরামকো।
প্রসপেক্টাসে আরো বলা হয়েছে, লেনদেন
শুরুর ছয় মাসের মধ্যে নতুন শেয়ার তালিকাভুক্ত না করার ক্ষেত্রে সৌদি সরকারের একটি
সংবিধিবদ্ধ লকআপ পিরিয়ড থাকবে। আর চুক্তিভিত্তিক লকআপ পিরিয়ড থাকবে ১২ মাস। অর্থাৎ
লেনদেন শুরুর ১২ মাসের মধ্যে নতুন শেয়ার ইস্যু করা যাবে না।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা আইপিওর
আবেদন করতে পারবে ১৭ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর ব্যক্তিগত বিনিয়োগকারীরা
আবেদন করতে পারবেন ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, আরামকোর
বিক্রি হতে যাওয়া আইপিওর বড় ক্রেতা হতে যাচ্ছেন সৌদি ও চীনা বিনিয়োগকারীরা।
আরামকোর শেয়ার ক্রয়ে আলোচনা চালানো সৌদি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রয়েছে ওলাইয়ান
পরিবার ও যুবরাজ আলওয়ালিদ বিন তালাল।