যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্রে ঐতিহ্যবাহী লালদীঘির পাড়ে ১০তলা শপিং কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। আর এ নির্মাণকাজ করতে গিয়ে ভরাট করা হচ্ছে দীঘির একাংশ। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্মাণকাজের সুবিধার জন্য বালি দিয়ে কিছু অংশ ভরাট করলেও পরে সরিয়ে ফেলা হবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, লালদীঘির পাড়ে পৌর হেরিটেজ মার্কেটের একটি সাইনবোর্ড টানানো। সেখানে লেখা আছে, এ মার্কেটের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার। পাশেই রয়েছে এক্সক্যাভেটর ও পাইলিং যন্ত্র। বালি ফেলে এরই মধ্যে দীঘির ভেতরে প্রায় ২০ ফুট ভরাট করা হয়েছে। এছাড়া দুটি সেচযন্ত্র বসিয়ে বের করে দেয়া হচ্ছে দীঘির পানি।
দীঘির পাশের এক ব্যবসায়ী বলেন, এক মাস ধরে মার্কেট নির্মাণের জন্য পাইলিংয়ের কাজ চলছে। সপ্তাহখানেক ধরে ট্রাকে করে বালি এনে দীঘির পাড় ভরাটের কাজ চলছে। লালদীঘি বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বলেন, খোদ পৌর কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্যবাহী লালদীঘি ভরাট করছে। অথচ আমরা কিছুই করতে পারছি না। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যশোরের পরিবেশ ও মানুষের স্বস্তির কথা না ভেবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণে বেশি আগ্রহী। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে।
জানা গেছে, অন্তত ১৫০ বছর আগে যশোর শহরের গাড়িখানা সড়কের পাশে পৌরসভার উদ্যোগে ১ একর ১২ শতাংশ জমিতে এ দীঘি খনন করা হয়। এখনো এলাকার বহু মানুষ গোসলসহ নানা কাজে এ দীঘির পানি ব্যবহার করেন। কয়েক বছর আগেও দীঘিটি ভরাট করে পৌর কর্তৃপক্ষ মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে এ সিদ্ধান্ত বাতিল ও দীঘিটি পুনর্খননের দাবিতে পৌরবাসী গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেন। এছাড়া তারা একাধিকবার সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেন।
দীঘি ভরাটের অভিযোগের বিষয়ে যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, লালদীঘির পাড়ে ৩৫ শতক জমির ওপর ১০তলাবিশিষ্ট হেরিটেজ মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই মার্কেটের পাইলিংয়ের জন্য পাড়ের কিছু অংশে বালি ফেলা হয়েছে। নির্মাণ শেষে যন্ত্র নিয়ে ওই বালি আবার তুলে ফেলা হবে। লালদীঘি ভরাট করা হবে না। নির্মাণকাজের প্রয়োজনেই আপাতত এ বালি ফেলা হচ্ছে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক নাজমুল হুদা বলেন, জলাশয় সংরক্ষণ আইন-২০০০ অনুযায়ী স্বীকৃত কোনো জলাশয় কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না।