সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জড়ো হতে থাকে নানা বয়সী মানুষ। শুরু হয় সারা দিনের জন্য নিজেদের শ্রম বিক্রির অপেক্ষা। কাজ পেলে পরিবারের মুখে খাবার জোটে, না হলে অনাহার-অর্ধাহার। কিশোরগঞ্জে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পেশাহীন এ জনগোষ্ঠীর দেখা মিলবে বিভিন্ন বাজার কিংবা রাস্তার মোড়ে। এ দিনমজুররা যেখানে জড়ো হন, স্থানীয়ভাবে সে স্থানকে বলা হয় ‘কামলার হাট’। আর এ হাটে শ্রম বিক্রির জন্য আসেন ১৫ থেকে অশীতিপর বয়সী নিরুপায় মানুষ।
কিশোরগঞ্জে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বড় একটি
অংশ এখনো অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে। বিশেষ করে ভাটি অঞ্চলখ্যাত ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলী, বাজিতপুর, কটিয়াদী
ও হোসেনপুরে
বহু মানুষকে প্রতিদিনের অন্ন
সংস্থানের জন্য
লড়াই করতে হয়। আর তারাই জেলা সদরসহ
বিভিন্ন উপজেলায় শ্রম বিক্রির জন্য হাজির হন কামলার হাটে।
বর্তমানে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায়
১৮-২০টি স্থানে এ হাট বসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় হাটটি বসে পাকুন্দিয়ার পুলের ঘাট
এলাকায়। এছাড়া জাঙ্গালিয়া বাজার,
হোসেন্দী বাজার, কটিয়াদী সদরের বাসস্ট্যান্ড, মানিকখালী, মধ্যপাড়া
ও স্বনির্ভর এলাকা, করিমগঞ্জের পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছে ও কিশোরগঞ্জ সদরের আখড়াবাজার
মোড়ে বসে এ হাট।
প্রতিদিনের চুক্তিতে হাটের দিনমজুররা
মাটি কাটা থেকে শুরু করে নির্মাণসামগ্রী বহনকারী হিসেবে কাজ করেন। কেউ কেউ কাজ
করেন রাজমিস্ত্রী, রঙমিস্ত্রী, কাঠমিস্ত্রী, স্যানিটারি ও টাইলস মিস্ত্রী হিসেবে। তবে এদের বেশির ভাগেরই নির্দিষ্ট
কোনো পেশা নেই। যখন যে কাজ পান,
তখন তারা সেই কাজই করেন। কামলা শব্দটির মধ্যে
হয়তো সূক্ষ্ম তাচ্ছিল্য আছে। কিন্তু প্রতিদিনই যাদের জীবিকার অনিশ্চয়তা, তাদের
তো আর তাচ্ছিল্য গায়ে মাখার উপায় নেই।
হাটের দিনমজুররা জানান, কাজ
করানোর জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি প্রয়োজন অনুসারে তাদের সঙ্গে চুক্তি করেন। সারা দিন
কাজ শেষে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিক নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয় সন্ধ্যায়। তবে অনেকেই আছেন, যারা
সারা দিনেও কোনো কাজ পান না। বিশেষ করে যাদের বয়স একটু বেশি, তাদের
কেউ কাজে নিতে চায় না। তখন তাদের খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। পরিবারের সদস্যদের মুখে
খাবার তুলে দেয়ার কোনো উপায় থাকে না।
কিশোরগঞ্জ সদরের আখড়াবাজার এলাকায় নাম
প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দিনমজুর বলেন,
তিনি প্রতিদিন জঙ্গলবাড়ি থেকে এখানে আসেন। কাজ
পেলে সারা দিন শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। কাজের ধরন অনুযায়ী মজুরির তারতম্য হয়।
একজন দিনমজুর দিনে আয় করতে পারেন সর্বোচ্চ ৬০০ টাকা।
সদর উপজেলার হারুয়ার আবদুল হামিদের
ছেলে অশীতিপর বশির উদ্দিন দুঃখ করে বলেন,
বয়স হয়েছে। এখন আর তেমন ভারী কাজ করতে পারি না।
বয়স বেশি দেখে কাজ পেতেও কষ্ট হয়। কিন্তু জীবিকার তাগিদে এখনো আমাকে এখানে আসতে
হচ্ছে।