একসময়ের ‘ক্যানেল অব ডেথ’ এখন উন্নয়নের দ্বার

প্রকাশ: নভেম্বর ০২, ২০১৯

বণিক বার্তা ডেস্ক

দানিয়ুব নদ থেকে পোর্ট অব কনস্টান্ট পর্যন্ত যে খালটি রয়েছে, তার ইতিবৃত্ত রোমানিয়ার ইতিহাসের একটি করুণ অধ্যায় হিসেবে স্বীকৃত। সত্তরের দশকে কমিউনিস্ট শাসক নিকোলাই চসেস্কুর সময়ক্যানেল অব ডেথ নামে বিখ্যাত এ খালটি খনন করা হয়। খালটি খনন করতে খাটানো হয়েছিল কয়েক হাজার রাজবন্দি, যাদের বড় একটা অংশ অতিরিক্ত পরিশ্রম ও অপর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয়ের অভাবে মারা গিয়েছিল। এটি কাটতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল রোমানিয়া।

উর্বর বিস্তৃত আবাদি জমির বুক চিরে ৬৪ কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি গিয়ে পড়েছে কৃঞ্চসাগরে। এটি এখন পরিণত হয়েছে রোমানিয়ার বৈশ্বিক বাজারের প্রবেশদ্বার। ইউরোপের গরিব দেশটিতে কমিউনিস্ট শাসন অবসানের ৩০ বছর পর বিভীষিকাময় খালটিই শাপে বর হয়ে দেখা দিয়েছে পূর্ব ইউরোপের জন্য। ফ্রান্সের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গম রফতানি করে রোমানিয়া। দেশটির গম রফতানি করতে ব্যবহার করা হয় এ খাল। নিপীড়ন ও একনায়কতন্ত্রের একসময়কার স্মারক খালটি সময়ের আবর্তে রূপান্তরিত হয়েছে দেশটির কপাল খোলার চাবিকাঠি হিসেবে।

দানিয়ুব, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়াকে যে অঞ্চলটির মাধ্যমে আলাদা করেছে, সে অঞ্চলটি শত শত বছর ধরে শস্য উৎপাদনের পীঠস্থান হিসেবে গণনা হয়ে আসছে। ধারাবাহিক শস্যস্বল্পতা, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার দীর্ঘ পর্ব পেরিয়ে মুক্তবাজারের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে শুরু করে অঞ্চলটির চেহারা। ২০০৭ সালে রোমানিয়া ইইউর সদস্যপদ লাভের পর আনুষ্ঠানিকভাবে ভাগ্যের চাকা সামনের দিকে ঘুরতে থাকে দেশটির।

৩ হাজার কোটি ইউরো অনুদান লাভের পর নিজেদের কৃষি শিল্প উন্নত করার সুযোগ পায় বলকান অঞ্চলের অনুন্নত দেশ দুটি। জুলাই থেকে শুরু হওয়া মৌসুমে রোমানিয়া ২৩ লাখ টন গম রফতানি করেছে, যা ইইউর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। তবে ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ফ্রান্স গম রফতানি করে সবচেয়ে বেশি। একই মৌসুমে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টন গম রফতানি করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বুলগেরিয়া।

চার দশক ধরে এ খাল ব্যবহারের মাধ্যমে চাষাবাদ করে আসছেন ঘোরঘে লামুরানু। চসেস্কুর আমলে শুরু হওয়া এ খাল খননের কথা স্মরণ করে ৬৪ বছর বয়সী লামুরানু বলেন, আগে এখানে এমন এক পরিস্থিতি ছিল, যখন গম রফতানি মানে স্থানীয়রা না খেয়ে মরা, এমনটা ধারণা প্রচলিত ছিল। প্রবীণ এ কৃষক বলেন, কমিউনিস্ট শাসন থেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে আসার পথটা ছিল বেশ জটিল। আগে আমরা শুধু উৎপাদনই করে যেতাম। কীভাবে রফতানি করতে হয়, তা আমাদের জানা ছিল না। রফতানির বিষয়টি ধীরে ধীরে রপ্ত করেছি আমরা।

এদিকে ২০০৭ সালে ইইউতে যোগ দেয়ার পর কৃষকদের জন্য বীজ মজুদের সুবিধা উন্নত করার সুযোগ পায় রোমানিয়া। ইইউর ভর্তুকি নিয়ে দেশটিতে আসতে শুরু করে নতুন কৃষি প্রযুক্তি, যা স্থানীয় কৃষি উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়েছে। গম উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করতে শুরু করে দেশটি। ওই অঞ্চলের যেসব দেশ ইইউর সদস্য নয়, সেগুলো ইইউর মুক্তবাজারে অংশ নিতে রোমানিয়ারক্যানেল অব ডেথ ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করে। সূত্র: ব্লুমবার্গ


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫