বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে সৃষ্টি হতে পারে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল

প্রকাশ: অক্টোবর ৩১, ২০১৯

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের চলমান বাণিজ্য বিরোধে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে উঠলেও দুপক্ষের এ বিরোধ চীনের সমর্থনপুষ্ট একটি আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তিতে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে। চুক্তিটি চূড়ান্ত না হলেও চলতি সপ্তাহে ব্যাংককে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নেতাদের অনুষ্ঠেয় এক বৈঠকে চুক্তি বিষয়ে বড় ধরনের অগ্রগতি হতে পারে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।

চূড়ান্ত হলে বিশ্বের বৃহত্তম মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে পরিণত হবে ১৬টি দেশের রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) বৈশ্বিক জিডিপিতে এ দেশগুলোর অবদান এক-তৃতীয়াংশ। অন্যদিকে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক বসবাস করে এ অঞ্চলটিতে।

২০১২ সালে আলোচনা শুরু হলেও নানা বিষয়ে সদস্যদের মতবিরোধের কারণে চুক্তির প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে পড়েছে। যেমন চীন থেকে বিপুল আমদানির সম্ভাবনা নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ রয়েছে ভারতের। অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন্স (আসিয়ান) ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ কোরিয়া আরসিইপির অন্তর্ভুক্ত।

বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, চলতি বছর চুক্তির বাকি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার গতি ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তোলায় চুক্তির আলোচনায় প্রভাব পড়েছে।

সিঙ্গাপুরের ইউসুফ ইসহাক ইনস্টিটিউটের আসিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের প্রধান তাং সিউ মুন বলেন, চুক্তি নিয়ে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। দ্রুতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, রাজনীতিবিদদের চুক্তিটি চূড়ান্ত করার মতো পরিস্থিতি এখন তৈরি হয়েছে।

বর্তমানে আসিয়ানের নেতৃত্বে থাকা থাইল্যান্ড জানিয়েছে, চলতি মাসে বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে আশি ভাগ আলোচনা শেষ হয়েছে। এছাড়া সদস্যরা চুক্তির মোট ২০টি অধ্যায়ের মধ্যে ১৪টি নিয়ে একমত হয়েছে।

ব্যাংককে ৩১ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলন অনুুষ্ঠিত হবে। এরপর আরসিইপি নিয়ে আবার আলোচনা হবে।

সিডনির লোয়ি ইনস্টিটিউটের সাউথইস্ট এশিয়া প্রকল্পের পরিচালক বেঞ্জামিন ব্লেন্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশকিছু দেশ নিজেরাই যে আঞ্চলিক একীভবনের প্রচেষ্টা ধরে রাখতে সক্ষম, তা দেখাতে চাইবে।

কেবল চীন নয়, বাণিজ্যযুদ্ধে এশিয়ার আরো অনেক দেশই চাপের মধ্যে রয়েছে। মার্কিন শুল্কের হাত থেকে বাঁচতে বেশকিছু কোম্পানি চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এশিয়ার শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে। অর্থনীতিগুলোর প্রবৃদ্ধি গত বছরের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে চলতি বছর ৪ দশমিক ৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে সংস্থাটি পূর্বাভাস করেছে। এছাড়া ভারতের অর্থনীতি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমে ৬ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে বলে আইএমএফ ধারণা করছে।

চীনের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক আধিপত্যের বিরোধিতা করে যেসব দেশ এতদিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে আসছিল, এ নির্ভরশীলতা ধরে রাখা নিয়ে তারা ক্রমে সন্দিহান হয়ে পড়ছে। ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও থাইল্যান্ডসহ আরসিইপি সদস্যদের সবারই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিশাল বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছেএটাই মূলত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-থাইল্যান্ডের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। থাইল্যান্ড শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থএ অভিযোগ তুলে গত শুক্রবার ১৩০ কোটি ডলার সমমূল্যের থাই পণ্যের বাণিজ্য অগ্রাধিকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে ওয়াশিংটন।

সিঙ্গাপুরভিত্তিক এশিয়ান ট্রেড সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক ডেবোরাহ এলমস বলেন, এশিয়ার একটি সম্মিলিত প্লাটফর্ম ও অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনার জন্য একটি জায়গা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনবাণিজ্য উত্তেজনাগুলো আসলে সে বিষয়েই চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিচ্ছে। চলতি সপ্তাহের বৈঠকে নেতারা যদি চুক্তি সম্পর্কিত কোনো সাফল্যের ঘোষণা দিতে না পারেন, তবে বিশাল সুযোগ হাতছাড়া হবে বলে মনে করছেন তিনি।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫