শাহ আমানত সেতু

সেতু চালুর ৯ বছর পর শেষ হচ্ছে সংযোগ সড়কের কাজ

প্রকাশ: অক্টোবর ২৮, ২০১৯

সুজিত সাহা, চট্টগ্রাম ব্যুরো

তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু (শাহ আমানত সেতু) উদ্বোধন হয় ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। সেতু চালু হলেও সংযোগ সড়ক না থাকায় সুফল পাচ্ছিল না সেতু ব্যবহারকারীরা। অবশেষে নয় বছর পর শেষ হচ্ছে সংযোগ সড়কের কাজ। আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সড়কটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।

জানা যায়, কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি উদ্বোধনের পর সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে সওজ ও দাতা সংস্থাগুলোর মধ্যে মতানৈক্য শুরু হয়। দীর্ঘদিন আটকে থাকে প্রকল্পের সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। প্রকল্পের অধীনে সেতু নির্মাণের পর ৪ দশমিক ৫০ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার উদ্বৃত্ত থেকে যায়। ওই অর্থ দিয়ে নতুন প্রকল্প হিসেবে সেতুর উভয় দিকে আট কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১৬ জুন দাতা সংস্থার সঙ্গে সংশোধিত ঋণচুক্তি সম্পন্ন হয়। কিন্তু কর্ণফুলী সেতু থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সংযোগ সড়কের জন্য নেয়া সরকারি ১৫৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প চলমান থাকায় সংযোগ সড়ক প্রকল্পটির কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। সরকারি প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে বিলম্বের কারণে সড়কটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সম্প্রসারণ বন্ধ থাকায় দাতা সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থেই সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করতে উভয় দেশ সম্মত হয়।

নতুন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় পড়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করা হলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ একাধিক জটিলতায় কাজ শুরু করতে কয়েক মাস বিলম্ব হয়।

প্রকল্পের পরিচালক আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বণিক বার্তাকে বলেন, বিলম্বে হলেও অবশেষে কর্ণফুলী সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। সামান্য কিছু কাজ বাকি থাকলেও এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সড়কটি উদ্বোধন হলে চট্টগ্রাম ও সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ আরো সহজ হবে।

প্রকল্পের তথ্যানুসারে, বহদ্দারহাট ইন্টারসেকশন থেকে কর্ণফুলী সেতু উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার ছয় লেনের (সার্ভিস লেনসহ) ও দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত তিন কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি দায়িত্ব পেয়েছে জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান ইউহান মিউনিসিপ্যাল কনস্ট্রাকশন গ্রুপ অব চায়না, মীর আকতার হোসাইন লিমিটেড (বাংলাদেশ), সাদেম আল কুয়েত ফর জেনারেল ট্রেডিং ও কনস্ট্রাকটিং কোম্পানি অব কুয়েত।

প্রকল্পের অধীনে ২ দশমিক ৪২৬ একর ভূমি ও অবকাঠামো বাবদ ব্যয় হয়েছে ৯৩ দশমিক ৩৫ কোটি টাকা। এছাড়া ১৬৪ দশমিক শূন্য ৬ মিটারের ছয় লেনের চারটি ব্রিজ, আটটি কালভার্ট, ৩৪ দশমিক ১২ মিটারের দুটি ওভারপাস, আট কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, আট কিলোমিটার মিডিয়ান ও রোড ডিভাইডার, ১১ কিলোমিটার ফুটপাত ও ড্রেন, আট কিলোমিটার রোড মার্কিং ছাড়াও আট কিলোমিটার সাইন সিগন্যাল বসানো হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কর্ণফুলী নদীর ওপর নির্মিত শাহ আমানত সেতুর জন্য প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬৫১ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দেয় ২৯১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। কিন্তু সেতু নির্মাণে সরকারি অর্থ ব্যয় হলেও কুয়েত ফান্ডের ২২০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থেকে যায়। শুরুতে উদ্বৃত্ত টাকা দিয়ে সেতুর দক্ষিণ পাড়ে চার লেনের ১২ কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেয়া হলেও তা গ্রহণ করেনি দাতা সংস্থা। পরবর্তী সময়ে নতুন ঋণচুক্তির মাধ্যমে সর্বমোট আট কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে কর্ণফুলী তৃতীয় সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যেকোনো সেতু নির্মাণকাজ শুরু হলেই সংযোগ সড়কের কাজ আগেই হয়ে যায়। কিন্তু বৃহৎ প্রকল্প হিসেবে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতু সংযোগ সড়কের কাজ রেকর্ড বিলম্ব হয়েছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় সেতুটির উভয় পাশে গত নয় বছরে কয়েকশ দুর্ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় পণ্য ও যাত্রীবাহী পরিবহনগুলো দীর্ঘ যানজট পেরিয়ে সেতু পার হতে হয়।

প্রকল্পের দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সায়েম শাহাদাত বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা হচ্ছে। সংযোগ সড়ক হলেও সার্ভিস লেনসহ দেশের প্রথম বাস্তবায়িত ওভারপাস সড়ক থাকায় যানবাহন চলাচল গতি পাবে। আনুষঙ্গিক কাজ শেষে নভেম্বরে সড়কটি উদ্বোধন করা হবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫