সুচিত্রার চিত্রণে: রিনা ব্রাউন ও অন্যান্য

প্রকাশ: অক্টোবর ২৫, ২০১৯

সাগুফতা শারমীন তানিয়া

উত্তর দিনাজপুরের কোনো গ্রামে ইন্দ্রাণী (সুচিত্রা সেন) অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেস পদে বদলি হয়ে এসেছে, ঘরদোর অপরিসর (নীড় ছোট, ক্ষতি নেই), কাজের লোক মদন তেমন কাজের নয় ঠিক। ইন্দ্রাণীর খোঁপায় একবার ওঠে রঙ্গনের গোছা, একবার দোপাটি, আরেকবার রাধাচূড়া, সে গায়হে মন বলাকা মোর অজানার আহ্বানে চঞ্চল পাখা মেলে ধরো’, অধীর পাখনা মেলে ধরে সেও। তার স্বামীটি বিদ্বান হলেও কলকাতার সেই অপরিসর গলির পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ছেড়ে আসতে পারেনি। ফলে খোলামেলা পাড়াগাঁয়ে স্বামীটি কাজ করার অবকাশ না পেয়ে পায় একাকিত্ব, সে ভাবে স্টোভ জ্বেলে চা করবে শুধু স্ত্রীই, বোতাম লাগানো আর রিফু করার কাজ স্ত্রীর এবং না হলে স্ত্রীলোকের, সে শিখে এসেছে স্ত্রী সভা-সমিতিতে যাবে কিনা তার অনুমতি দেবে স্বামী। মাথা উঁচু করে একদা ইন্দ্রাণী বাপকে বলে এসেছিলপরের গলগ্রহ না হয়ে নিজের অন্ন খুঁটে খেতে জানবে বলেই না সে অত কষ্ট করে লেখাপড়া শিখেছে। ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়া বেকার যুবককে বিয়ে করতে তাই তার বাধেনি, কারণ সে রূপে-গুণে ইন্দ্রাণীই, জয়ের নেশা তার রক্তে। কিন্তু তার পরাভব না মানা প্রত্যয় আর কর্মীষ্ঠ মনকে গুঁড়িয়ে দিতে রয়েছে পুরুষ; রয়েছে তাকে ঘিরে লোলুপ পুরুষতন্ত্র, যা নারীর প্রত্যয় বা কর্মযজ্ঞকে ঠিক উদযাপন করতে জানে না, লুব্ধপ্রাণ স্তাবকই হয়ে থাকে। ইন্দ্রাণীকে সান্ত্বনা দিতে আসা মেয়ে সহকর্মীরা চা খেতে খেতেনিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখুনবলে উঠে যায়, তাদেরউনিআবার এই বিকালের ট্রেনেই ফিরবেন কিনা। যে উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে চলচ্চিত্র নির্মিত, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত প্রণীত সেই উপন্যাসইন্দ্রাণীনিয়ে এখানটায় সুবলচন্দ্র মিত্র লিখছেন, ‘ইন্দ্রাণী এইবার সত্যই বুঝিতে পারে নারীর চাকরি বাহিরে নহেযদি তাহার কোন চাকরি থাকে, তবে তাহা সংসারেগৃহকোণে। এই চাকরির চেয়ে ঘরের চাকরি সম্মানজনক।কারণ দিনাজপুর এসেক্রমে ইন্দ্রাণীর মনের ভাব পরিবর্তিত হয়বাড়িতে থাকিতে রান্না করা ছাড়াও ইন্দ্রাণীকে অনেক ছোটখাটো কাজ করিতে হইত, কিন্তু এখানে চাকর সমস্ত কাজ করিয়া দেয়, কেবল রান্নার কাজ নিজে সম্পন্ন করে। তারপর তাহাও করিবার জন্য ঠাকুর রাখা হইল...কেবলমাত্র মাহিনা পাইলে ইন্দ্রাণী হাতখরচের জন্য কয়েকটি টাকা দিবার সময় একবার (স্বামীকে) দেখা দেয়।মূল উপন্যাসে ইন্দ্রাণীর স্বামীসুদর্শন সেনইন্দ্রাণীকে দিনাজপুরে পরিত্যাগ করে এসে পাটনায় এক সওদাগরি অফিসে চাকরি করে; চলচ্চিত্রেরসুদর্শন দত্তস্ত্রী ইন্দ্রাণীকে না জানিয়ে দিনাজপুর ছেড়ে আসে, ঘটনাচক্রে বীরভূমের শালবনীতে এসে পঁচিশখানা গ্রামের ছেলেপুলে জুটিয়ে পাথর কেটে জল আনার কাজ করে আর একসময় কর্মবীর মহাপুরুষ হিসেবে তার নামযশ হয়। তারপর? উপন্যাসে ইন্দ্রাণী তাকে খুঁজে পেতে বের করে নিয়েনারীর যাহা বড় কাজ, স্ত্রীর যাহা বড় চাকরি সেই স্বামীসেবার ভার

সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫