আফ্রিকার খনিসমৃদ্ধ দেশ জিম্বাবুয়ে। দেশটির রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস খনিজ পণ্য। খনিজ সম্পদের ওপর ভর করেই দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা হয়। কিন্তু এ খাত থেকে রাজস্ব আয় কমে আসায় দেশটির অর্থনীতিতে এখন ভঙ্গুর অবস্থা বিরাজ করছে। বেকারত্ব, মূল্যস্ফীতির সঙ্গে মোকাবেলা করে দিন পার করছে দেশটি। রাষ্ট্রীয় ডায়মন্ড খনি কোম্পানি জেডসিডিসি কয়েক মাস ধরে খারাপ সময় পার করছে। গত জুলাইয়ে দেশটির ডায়মন্ড উত্তোলনে বড় আকারের ধস নামে। এ সময় দেশটির উত্তোলন ছিল মাত্র ৩৭ হাজার ৫২ ক্যারেট। যেখানে এর আগের মাসে উত্তোলনের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার ৭৬৮ ক্যারেট। এ খাত থেকে এ সময় জিম্বাবুয়ে কনসলিডেটেড ডায়মন্ড কোম্পানি বা জেডসিডিসির আয় হয় ১৭ লাখ ডলার। যেখানে এর আগের মাসে আয় ছিল ৭৯ লাখ ডলার। ডায়মন্ড খাতের বড় ধসের পর দেশটি এখন এ খাত থেকে আয় বাড়াতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে। লক্ষ্য অর্জনে ২০২০ সালের মধ্যে ডায়মন্ড উত্তোলন দ্বিগুণ এবং ২০২৩ সালের মধ্যে তিন গুণ করতে কাজ করছে জিম্বাবুয়ের সরকার।
চলতি বছর সব মিলিয়ে জিম্বাবুয়ে ৩১ লাখ
ক্যারেট ডায়মন্ড উত্তোলন হওয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে। যেখানে ২০১৮ সালে দেশটির
উত্তোলন ছিল ২৮ লাখ ক্যারেট। কিন্তু রাজস্ব আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশটির সরকার আগামী
বছর উত্তোলন ৬১ লাখ ২০ হাজার ক্যারেটে নিয়ে যেতে চায়। ২০২৩ সাল নাগাদ উত্তোলন
বাড়িয়ে ১ কোটি ১০ লাখ ক্যারেট নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে
দেশটির ডায়মন্ড খাত থেকে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলারের
কাছাকাছি।
তবে ২০২৩ সালের মধ্যে সরকারের রাজস্ব
আয়ের এ লক্ষ্যমাত্রাকে মোটেই উচ্চাভিলাষী বলা চলে না। কারণ ২০১২ সালে দেশটিতে ১
কোটি ২০ লাখ ক্যারেট ডায়মন্ড উত্তোলন হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির
রাষ্ট্রীয় খনি কোম্পানির অব্যবস্থাপনায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ধাতুটির দাম কমে
আসায় ক্ষতির মুখে পড়ে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটি। বিশেষ করে দেশটির ডায়মন্ড
খাতসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ অবস্থায় এখন
জেডসিডিসিকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্য নিয়েও কাজ করছে সরকার। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটির
শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করা হয়েছে।
জেডসিডিসির ভারপ্রাপ্ত প্রধান
নির্বাহী রবার্টো ডি প্রিট্রো জানান,
২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর জেডসিডিসির
নিয়ন্ত্রণাধীন সাতটি ডায়মন্ড খনি দীর্ঘদিন ধরে দেনায় ডুবে আছে।
বিশ্বের শীর্ষ ডায়মন্ড মজুদ খনি
হিসেবে ধরা হয় পূর্ব জিম্বাবুয়ের ম্যারেনঞ্জ এলাকাকে। এ এলাকায় পরিচালিত সাতটি খনির
ব্যক্তিমালিকানাধীন লাইসেন্স প্রত্যাহার করে নিয়ে জেডসিডিসির অধীনে নিয়ে আসা
হয়েছে। রবার্টো জানান, এসব খনির শেয়ার কিনে নেয়ায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে জেডসিডিসি। এখন তাদের
ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি ডলারের উপরে চলে গেছে। তবে এ ঋণ শোধ করতে প্রতিষ্ঠানটি সক্ষম
হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রবার্টো জানান, জেডসিডিসি
এখন পুরো দেশের সম্ভাবনায় অঞ্চলগুলোয় নতুন খনির মাধ্যমে ডায়মন্ড উত্তোলনে জোর
দিচ্ছে। একই সঙ্গে ডায়মন্ডের চুরি ঠেকাতেও কঠোর হচ্ছে সরকার। যারা ডায়মন্ড খনি
পরিচালনা করেন, তাদের চুরি ও দুর্নীতি ঠেকাতেও এখন সরকার কাজ করছে। কারণ তিনি মনে করেন, কয়েক
বছর ধরে ডায়মন্ডের উত্তোলন কমে যাওয়ার পেছনে চুরি বড় কারণ হতে পারে। যদিও ঠিক কী
পরিমাণ ডায়মন্ড চুরি হয়, সেটার সঠিক তথ্য দিতে পারেননি তিনি।
এদিকে সরকারের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে
বেসরকারি খাতের বিনিয়োগেও আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে সরকার। বিশেষ করে বিনিয়োগের
আগের নীতিমালায় পরিবর্তন এনে এ খাতে বিনিয়োগকারীদের নিশ্চয়তা দিতে চাচ্ছে দেশটির
প্রেসিডেন্ট এমারসন এমনাংগাগোয়া। তিনি এখন দেশটিকে সবার জন্য উন্মুক্ত বাণিজ্যনীতি
প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন।
জিম্বাবুয়ের জ্বালানিমন্ত্রী উইনস্টন
চিতানডো জানিয়েছেন, ডায়মন্ড খাত থেকে উত্তোলন বাড়াতে মূলত দেশটির চারটি খনি বিশেষভাবে
অবদান রাখবে। এছাড়া ২০২৩ সালের মধ্যে স্বর্ণ খাত থেকে ৪০০ কোটি ডলার এবং প্লাটিনাম
থেকে ৩০০ কোটি রাজস্ব আয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। সূত্র: রয়টার্স, মাইনিংএমএক্স, দ্য
স্টান্ডার্ড