জলবায়ু পরিবর্তন

খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় সাড়ে ৪ কোটি আফ্রিকান

প্রকাশ: অক্টোবর ২২, ২০১৯

বদ্বীপ ডেস্ক

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রাকৃতিক ও  প্রযুক্তিগত অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলোয় কৃষি উৎপাদন করতে হয়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, এ অঞ্চলের অনেক দেশে এখনো খাদ্য উৎপাদন মাথাপিছু চাহিদার নিচে। এ অবস্থায় এখন থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত নতুন করে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হতে পারে আফ্রিকার চার কোটিরও বেশি মানুষ। ২০১৮-১৯ উৎপাদন মৌসুমে আফ্রিকার ১৩টি দেশে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। এতে ব্যাহত হয়েছে এ অঞ্চলের খাদ্যশস্য উৎপাদন, যা খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়িয়েছে।

আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় এ দেশগুলোয় নিম্ন বৃষ্টিপাতের প্রভাব নিয়েস্টেট অব ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন সিকিউরিটি অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি ইন সাউদার্ন আফ্রিকা শিরোনামের  প্রতিবেদনটি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে সাউদার্ন আফ্রিকা ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি (এসএডিসি)

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসএডিসিভুক্ত অ্যাঙ্গোলা, বতসোয়ানা, কঙ্গো, সোয়াজিল্যান্ড, লেসোথো, মাদাগাস্কার, মালাওয়ি, মোজাম্বিক, নামিবিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তানজানিয়া, জাম্বিয়া, জিম্বাবুয়ে ২০১৮-১৯ উৎপাদন মৌসুমে সম্মিলিতভাবে ৩ কোটি ৭৫ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে, যা এ অঞ্চলের বার্ষিক চাহিদার তুলনায় ৫৪ লাখ টন কম।   ফলে এসব  দেশের ৪ কোটি ১২ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তায় রয়েছে।

এর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় খাদ্য উৎপাদন ১৯ শতাংশ কমেছে।  গত মৌসুমে দেশটিতে ১ কোটি ৮৭ লাখ টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হলেও এ মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৫১ লাখ টন। এছাড়া জাম্বিয়ার উৎপাদন কমেছে ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ, বতসোয়ানার ৯২ শতাংশ, নামিবিয়ার ৫৩ শতাংশ, লেসোথোর ৫০ শতাংশ এবং অ্যাঙ্গোলা ও তানজানিয়ার উৎপাদন কমেছে যথাক্রমে ১ শতাংশ ও ৪ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১১টি দেশ থেকে প্রাপ্ত গত মৌসুমের এবং চলতি মৌসুমের উৎপাদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা ২৮ শতাংশ  বেড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে দক্ষিণ আফ্রিকার ১ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ। এরপর রয়েছে কঙ্গোর ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ। এছাড়া জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ের যথাক্রমে ২৩ লাখ ও ৫৫ লাখ মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হবে।

এছাড়া গত বছরের তুলনায়  দেশভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তায় শীর্ষে রয়েছে জাম্বিয়া। দেশটির নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ১৪৪ শতাংশ। এছাড়া জিম্বাবুয়ের ১২৮ শতাংশ, সোয়াজিল্যান্ডের ৯০ শতাংশ, মোজাম্বিকের ৮৫ শতাংশ এবং কঙ্গোর নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে ৮০ শতাংশ।

অন্যদিকে চলতি মাসের ৯ তারিখেট্যাকেলিং সাউদার্ন আফ্রিকা ক্লাইমেট ড্রাইভেন ফুড ক্রাইসিস শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসএডিসিভুক্ত ১৬টি দেশের সাড়ে চার কোটি মানুষ আগামী ছয় মাস মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে। বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এসব দেশের খাদ্য উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে।

এ অবস্থায় ডব্লিউএফপি এ অঞ্চলের আটটি দেশের ৭২ লাখ মানুষকে খাদ্যসহায়তা দিতে প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আফ্রিকার দেশগুলোয় খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যাওয়ায় ডব্লিউএফপি জরুরি ভিত্তিতে আটটি দেশের পাশে খাদ্যসহায়তা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।  দেশগুলো হলো জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, জাম্বিয়া, মাদাগাস্কার, মালাওয়ি, নামিবিয়া, সোয়াজিল্যান্ড ও লেসোথো। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন রোধে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন জরুরি বলেও জানায় সংস্থাটি।

সংস্থাটি বলছে, এ অঞ্চলের দেশগুলোয় গত পাঁচ মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের মার্চ ও এপ্রিলে ঘূর্ণিঝড় ইদায় ও কেনেথের কারণেও এ অঞ্চলের কয়েকটি দেশে খাদ্যশস্যের উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। আর উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় খাদ্যশস্যের দামও  বেড়েছে।  ফলে এসব দেশের একটা বিরাট সংখ্যক গোষ্ঠীর পুষ্টিহীনতা আরো বাড়ছে।

ডব্লিউএফপি বলছে, ৯২ লাখ মানুষকে এখনই জরুরি ভিত্তিতে (আইপিসি ধাপ-, ৪) খাদ্যসহায়তা প্রয়োজন। সময়মতো তাদের  খাদ্যসহায়তা না দেয়া গেলে আগামী বছরের শুরুতেই এ ধাপে খাদ্যনিরাপত্তাহীন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫