শিখন দারিদ্র্যে দেশের ৫৮ শতাংশ শিশু

শিক্ষকদের দক্ষতা ঘাটতি দূরীকরণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হোক

প্রকাশ: অক্টোবর ২১, ২০১৯

পুরো পৃথিবীতেই, বিশেষ করে দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, সাব সাহারান এবং আরব দেশগুলোয় শিখন সমস্যা প্রকট। স্কুলে অবস্থানরত অনেক শিশুই মৌলিক শিক্ষা থেকে দূরে থাকছে অর্থাৎ তারা শিখছে না। জাতিসংঘের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বে প্রতি ১০ জন স্কুলশিশুর মধ্যে ছয়জন বাস্তবিক অর্থে কিছুই শিখছে না। উদ্বেগজনক পরিস্থিতিকে জাতিসংঘশিখন সংকটহিসেবে চিহ্নিত করছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাব-সাহারান, গরিব যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোয় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মনোযোগ থাকে বেশিসংখ্যক শিশুকে স্কুলে পাঠানোর দিকে। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, ওই শিশুদের একটি বড় অংশ শিক্ষার ন্যূনতম মানে উঠে আসতে পারছে না। চিত্র প্রকাশ পেয়েছে ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে একে শিখন দারিদ্র্য হিসেবে অভিহিত করেছে। সমস্যাটি আমাদের দেশেও প্রকট। আমরা অর্থাৎ বিংশ শতাব্দীর শিক্ষক সমাজ এই একবিংশ শতাব্দীর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। বিশ্বব্যাংকের জরিপ বলছে, দেশের ৫৮ শতাংশ শিশু শিখন দারিদ্র্যের শিকার।

আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা পরিস্থিতি যে কতখানি ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে, তা বিশ্বব্যাংকেরদ্য ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট: লার্নিং টু রিয়ালাইজ এডুকেশনস প্রমিজশীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার দুর্বল মানের কারণে বাংলাদেশের একজন শিশুর ১১ বছরের স্কুলজীবনের সাড়ে চার বছর নষ্ট হয়ে যায়। তারা ১১ বছরে শেখে মাত্র সাড়ে ছয় বছরের পাঠ্যক্রমের সমান। আবার দেশের পঞ্চম শ্রেণীর প্রতি চারজন শিক্ষার্থীর তিনজনই নিজেদের শ্রেণীর উপযোগী সাধারণ মানের অংক কষতে পারে না। তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সঠিকভাবে বাংলা পড়ার দক্ষতা নির্ণয়ের এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর স্কোর খুবই কম। এর মানে, তারা ভালোভাবে বাংলা পড়তে পারে না। তাদের ৪৩ শতাংশ বাংলায় কোনো প্রশ্নের পুরো উত্তরও দিতে পারে না। গণিত বিজ্ঞান শিক্ষার ভিত আরো দুর্বল। যদি হয় আমাদের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা, তাহলে বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষাকে আমরা কী বলে অভিহিত করব? শিক্ষার্থীরা যখন মাধ্যমিক স্তরে যাবে, তারা কি সেখানে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে? স্কুলজীবনেই একটা অনিবার্য খারাপ ফল ধরা দেবে, পড়াশোনার মাঝখান থেকে আনন্দ নামের বিষয়টা হারিয়ে যাবে। এভাবে শিক্ষাজীবন পাড়ি দিয়ে যখন কর্মজীবনে প্রবেশ করবে, তখন তাদের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করাটাও দুরাশা মাত্র।

শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতার পেছনে চারটি বড় কারণ চিহ্নিত করেছে বিশ্বব্যাংক। সেগুলো হলোশৈশব জীবনের মানোন্নয়নে কর্মসূচিগুলোর দুর্বলতা, নিম্নমানের পাঠদান, দুর্বল স্কুল ব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষা খাতে সরকারি বিনিয়োগ কম। দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তুলতে শিক্ষার মানের দিকে নজর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন বা পরামর্শ আমলে না নিয়েও বলা যায়, আমাদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘাটতি আছে, আছে দুর্বলতা। আমরা সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার কথা বললেও সর্ববিচারে প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীন নয়। বহুধাবিভক্ত এবং বৈষম্যে ভরা। ইংরেজি মাধ্যম, বাংলা মাধ্যম আরো কত কী! প্রাথমিক শিক্ষায় এত বিভক্তি প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিকে মজবুত করছে, কথা বলা যাবে না।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষা। বিভিন্ন পরীক্ষার ফলাফলে পাসের আধিক্য বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাই শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসম্মত শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষতাসম্পন্ন শিক্ষক দিয়ে সব শিক্ষার্থীর শিক্ষাদান নিশ্চিত করতে হবে। এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল মানসম্মত শিক্ষার মূল উপাদান হিসেবে মানসম্মত শিক্ষক, মানসম্মত শিক্ষা উপকরণ মানসম্মত পরিবেশ নির্ধারণ করেছে।


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫