বিশ্বের শক্তিধর অর্থনীতিগুলোর মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধে শুল্ক একমাত্র হাতিয়ার নয়। নির্দিষ্ট বিদেশী কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক কার্যক্রম সীমিত করতে ‘কালো তালিকা’য় অন্তর্ভুক্তীকরণকেও রণকৌশল হিসেবে গ্রহণ করেছে দেশগুলো। যদিও অধিকাংশ সময়ই এ পদক্ষেপকে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য আবশ্যক বলে চিত্রায়িত করা হয়, কিন্তু বাণিজ্য আলোচনায় সুবিধা অর্জনের জন্য নীতি অস্ত্র হিসেবে এর প্রয়োগ ক্রমে বাড়ছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েক ডজন চীনা কোম্পানিকে মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এনটিটি লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করেছে। সাধারণত কোম্পানিগুলোর মার্কিন সফটওয়্যার ও উপাদান ক্রয়ের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করতে সেগুলোকে এ তালিকায় ফেলা হয়। চীন সরকারও নিজস্ব একটি কালো তালিকা তৈরির মাধ্যমে পাল্টা আঘাতের উপায় খুঁজছে। বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ব্যবহার করছে বিশ্বের রফতানি শক্তিধর জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন কোরীয় উপদ্বীপে জাপানের দখলদারিত্বকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ নতুন করে সামনে আসায় কৌশল হিসেবে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করছে দেশ দুটি।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ‘এনটিটি লিস্ট’-এ যেসব চীনা কোম্পানির নাম রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো টেলিকমিউনিকেশনস জায়ান্ট হুয়াওয়ে টেকনোলজিস। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র অতি সম্প্রতি ২৮টি চীনা কোম্পানিকে তালিকায় যুক্ত করেছে, যার আটটি প্রতিষ্ঠানই প্রযুক্তি জায়ান্ট। এর মধ্যে রয়েছে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম ভিডিও নজরদারি পণ্য উৎপাদক কোম্পানি হ্যাংঝৌ হাইকভিশন ডিজিটাল টেকনোলজি ও ঝেজিয়াং দাহুয়া টেকনোলজি এবং এক জোড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি সেন্সটাইম গ্রুপ লিমিটেড ও ম্যাগভি টেকনোলজি লিমিটেড।
এ তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মার্কিন সরকারের লাইসেন্স না নিয়ে আমেরিকান কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করা নিষেধ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যুরো অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সিকিউরিটির তথ্যানুসারে, লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে ব্যবসা, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি সংগঠন, ব্যক্তি এবং অন্য কোনো আইনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হতে পারে। ইউএস এক্সপোর্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশনের অংশ হিসেবে তালিকার তত্ত্বাবধান করে ব্যুরোটি।
১৯৯৭ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণে সহায়তা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোকে নিষিদ্ধ করার উপায় হিসেবে ‘কালো তালিকা’
প্রণয়ন করা হয়। এরপর এ তালিকা আরো সম্প্রসারিত হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সুরক্ষা বা পররাষ্ট্রনীতির স্বার্থবিরোধী কার্যক্রমকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা হিসেবে বিদেশী কোম্পানি, সংস্থা ও ব্যক্তিদের একটি তালিকা সংকলিত করছে চীন, যেগুলোকে ‘অবিশ্বস্ত সংস্থা বা আনরিলায়েবল এনটিটি’
বলছে দেশটি। যারা বাজারের নিয়ম অমান্য, চুক্তিভঙ্গ বা অবাণিজ্যিক কারণে সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা তৈরি বা স্থগিত করার মাধ্যমে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈধ স্বার্থের মারাত্মক ক্ষতি করবে, তাদের ‘অবিশ্বস্ত এনটিটি’
হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
হুয়াওয়ের পাঠানো কিছু পার্সেলের ভুল রাউটিংয়ের জন্য এরই মধ্যে ফেডএক্স করপোরেশনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে চীন। একই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব দেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
দুটি সরকারেরই বাণিজ্য বিশারদরা এ লড়াইকে একবিংশ শতাব্দীর প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক আধিপত্যের জন্য প্রজন্মগত যুদ্ধের অংশ হিসেবে দেখছে। চীন সরকার তার ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ ও ২০১৭ সালের উন্নয়ন কৌশলের মতো শিল্প নীতিমালাকে সমর্থনের জন্য নিজেদের বিপুল রাষ্ট্রীয় সম্পদকে কাজে লাগিয়েছে। এর লক্ষ্য ২০৩০ সাল নাগাদ চীনকে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্ভাবন কেন্দ্রে পরিণত করা। অন্যদিকে চীনের এ লক্ষ্যকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন। ফলে চীনের প্রযুক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষায় প্রতিবন্ধকতা