কৃষির প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ স্থাপত্যের বিবর্তন

প্রকাশ: অক্টোবর ১৫, ২০১৯

ড. কাজী আজিজুল মাওলা

বাংলাদেশের জলবায়ুগত ভৌগোলিক অনন্য বৈশিষ্ট্য দেশের মানুষের ব্যক্তিত্ব, শিল্প, সংস্কৃতি, স্থাপত্য, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঐতিহ্য জীবনযাপন গঠনে প্রভাব রেখেছে। বদ্বীপ বাংলা ভূমির মানুষের জীবনের ধরন দেখে মনে হচ্ছে যেন হাজার বছর ধরে আক্ষরিক অর্থে তা অটুট রয়েছে। নিবন্ধে একটি স্থাপত্যশৈলীর ধরন উন্মোচনের চেষ্টা করা হয়েছে, দেশীয় আঞ্চলিক উভয় পটভূমিতে যার শেকড় বিদ্যমান। বিশ্বের অন্য যেকোনো অংশের মতো বাংলায়ও পারিপার্শ্বিক সমাজ পরিবেশের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ ভারসাম্য বজায় রেখে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য তার স্থিতি স্বতন্ত্রতা দেখিয়েছে। আকার রূপের সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং স্থানিক সম্পর্কসহ এসব নির্মিত স্থাপনা দেশের দীর্ঘ ইতিহাস-সংস্কৃতির ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। আলোচ্য নিবন্ধে বাংলার স্থাপত্যের মৌলিক ধরনের ওপর কিছু আলোকপাত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মৌলিক স্থাপত্যে পানির স্তরের উপরে একটি ভিত বা স্তম্ভ, উন্মুক্ততা, অবাধ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা (ভেন্টিলেশন), বৃষ্টি প্রতিরোধী চালা দেয়াল আছে এবং স্থাপত্য স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত উপকরণে সজ্জিত চালার মতো উপাদান দ্বারা গঠিত। প্লাবনভূমির একটি সাদামাটা আশ্রয় থেকে ভিটা, বেড়া, চালা উঠান-সংবলিত একটি স্থাপত্যধারা বাংলা বদ্বীপে আবর্তিত হয়েছে। স্থাপত্যের মৌলিক শ্রেণীকরণ কারিগরি, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন হস্তক্ষেপ এবং সময়ের প্রয়োজনে আবর্তিত হয়েছে। কাজেই ধরন এতদঞ্চলে আবর্তিত সব টেকসই স্থাপত্যিক ধরনের সূত্র প্রদর্শন করে।

বাংলাদেশী স্থাপত্যিক ধরনের প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশী স্থাপত্যের ওপর করা ঐতিহাসিক গবেষণাগুলো থেকে সবচেয়ে তাত্পর্যপূর্ণ সাধারণ যে বিষয় উদ্ভাবন করা হয় তা হলো স্থাপত্যগুলোয় ব্যবহূত সরল, আয়তাকার এককভাবে মুক্ত দণ্ডায়মান কাঠামো। কুঁড়েঘরগুলোর স্বতন্ত্রীকরণ মনে হয় এক্ষেত্রে সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয়। ঘরগুলো সাধারণত বিস্তৃত ফাসাদের (সম্মুখভাগ) মাধ্যমে বাইরে উন্মোচিত এবং এখানে এসে সেগুলো একটি আড়াআড়ি ভঙ্গিমায় সংগঠিত হয়। ফলে একটি বহিঃস্থ পরিসরের বোধ সৃষ্টি হয়। ছোট হলেও এসব ফাসাদ গঠনবিন্যাসে সমৃদ্ধ এবং সেগুলো কাদামাটি কিংবা বাঁশের তৈরি। উপরের দিকে প্রতিটি ফাসাদই প্রজেক্টিং ইভ দ্বারা বেষ্টিত, যেগুলোর বেশির ভাগই বক্রাকৃতির এবং নিচের দিকে ফাসাদগুলো একটি সম্প্রসারিত ভিত্তি বা স্তম্ভ দ্বারা বেষ্টিত। যদিও মাঝে মাঝে একটি বারান্দা ঘরের উল্লম্ব তল এবং উঠানের আনুভূমিক তলের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে। ঐতিহ্যিক স্থাপত্যে প্রথম যে বিষয়টি দেখা যায় সেটি হলো জলাভূমির ওপর পাটাতন বা ভিটার সৃষ্টি, বিভিন্ন আনুষ্ঠানিক উপকরণিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রচেষ্টাসহ যার ওপর সহজ কাঠামো নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি আয়তাকার কাঠামো সামনে একটি পরোক্ষ উন্মুক্ত পরিসরের সঙ্গে সংযুক্ত। দুটির মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হয় দীর্ঘ ফাসাদের কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে যাওয়া পরিসরের আড়াআড়ি প্রবেশপথ দ্বারা। আনুষ্ঠানিক অর্থে কাঠামোর কাজই যখন এমনটা, তখন ফাসাদের কেন্দ্র সাধারণত শক্তি পায় ইলেভেশনে একটি কেন্দ্রায়িত আয়োজন দ্বারা, যা অক্ষের অধিকতর জোর তৈরি করে। প্রতিটি কুঁড়েঘরের সামনে একটি উঠান নির্মাণ করা হয়। সহায়ক ঘরগুলোর ক্ষেত্রে প্রথম দালান বা কাঠামোর উঠান শেয়ার করা হয়। এটি বাংলাদেশের আরো জটিলতর স্থাপত্যেও দেখা যেতে পারে। গ্রামের বাড়িগুলোর লেআউট প্যাটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে এটি মনে করা যুক্তিসংগত যে প্রতিটি কাঠামো মৌলিকভাবে নিজস্বতা নিয়ে বিরাজ করে এবং এখানে সুনির্দিষ্ট বহিঃস্থ পরিসরও রয়েছে। কাছাকাছি পানির প্রবাহ থাকা এবং চারপাশে ঘন গাছপালার আচ্ছাদনসহ পুরো বিন্যাস স্থাপত্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সমতল থাকা, কোনো গাছপালা না থাকা এবং প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদনে খুবই সুরক্ষিত থাকাসহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দ্বারা উঠানগুলোকে অধিকভাবে চিহ্নিত করা যায়।

আমাদের


সম্পাদক ও প্রকাশক: দেওয়ান হানিফ মাহমুদ

বিডিবিএল ভবন (লেভেল ১৭), ১২ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫

বার্তা ও সম্পাদকীয় বিভাগ: পিএবিএক্স: ৫৫০১৪৩০১-০৬, ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন বিভাগ: ফোন: ৫৫০১৪৩০৮-১৪, ফ্যাক্স: ৫৫০১৪৩১৫